চট্টগ্রাম বন্দরে বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্য, ধ্বংসেও বাধা

এম হাশেম তালুকদার, চট্টগ্রাম ব্যুরো
 | প্রকাশিত : ২৯ নভেম্বর ২০২১, ২১:১৬

চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে বিভিন্ন শেড ও ইয়ার্ডে পড়ে থাকা সকল পণ্যের মতো রাসায়নিক পণ্যও তোলা হয় নিলামে। বারবার নিলামে তুলেও অবিক্রিত। এসব পণ্য বিপজ্জনক হওয়ায় যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। তবে এসব পণ্য যে শুধু অবিক্রিতই থেকে যায় তাই নয়। এসব পণ্য থেকে বিপদ এড়াতে ধ্বংসের কাজেও বাধাপ্রাপ্ত হতে হয় কর্তৃপক্ষকে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, নিলামে তোলা রাসায়নিক পণ্য কিনতে বিডারদের (ক্রেতা) আগ্রহ থাকলেও শর্ত পূরণ করতে পারেন না অধিকাংশ বিডার। এতে করে বিডাররা পে-অর্ডার ফেরত চান। বাধ্য হয়ে কাস্টমসকেও পুনরায় নিলামের ব্যবস্থা করতে হয়। এছাড়া বারবার নিলামে তোলার পরও অবিক্রিত রাসায়নিক পণ্যগুলো ধ্বংস করতে একটা বাজেটের প্রয়োজন হয়। তবে বাজেটের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে চিঠি পাঠানো হলেও কোন সাড়া পায়নি কাস্টমস। তবে এখন পর্যন্ত ৮৪ টন রাসায়নিক পণ্য ইতোমধ্যে ধ্বংস করা হয়েছে। বাজেট সংকটের কারণে বাকি সাত টন এখনো ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, দাপ্তরিক জটিলতা ও বাজেট সংকটের কারণে রাসায়নিক পণ্যগুলো বারবার নিলামে তুলেও বিক্রি হচ্ছে না। কেননা, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, হাইড্রোক্লোরাইড, কস্টিক সোডা, সালফেট, টেক্সটাইল কেমিক্যাল, রঙ তৈরির কাঁচামাল, এস্ট্রোজেনসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পণ্যগুলো নিলামে তুলতে গেলে বিস্ফোরক পরিদপ্তর, এনওসিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। বিডাররা সে সব শর্ত পূরণ করতে না পেরে রাসায়নিক পণ্যগুলো কিনতে আগ্রহী হন না। সেই সঙ্গে বাজেট স্বল্পতার কারণে পণ্যগুলো ধ্বংসের কাজেও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে বলেও জানান তারা।চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, বন্দরের ‘পি’ শেডে বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্য রাখা হয়। প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি আয়তনের শেডটিতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, হাইড্রোক্লোরাইড, কস্টিক সোডা, সালফেট, টেক্সটাইল কেমিক্যাল, রঙ তৈরির কাঁচামাল, এস্ট্রোজেনসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থ রাখা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীদের আমদানি করা রাসায়নিক পদার্থের ৯৮ ভাগই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (নিলাম শাখা) আলী রেজা হায়দার বলেন, ‘বার বার নিলামে তুলেও রাসায়নিক পণ্যে আমরা সাড়া পাচ্ছি না। এসব পণ্যগুলো কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহ আছে। তবে এসব পণ্য কেনার আগে বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। পাশাপাশি তাদের কিছু শর্তও থাকে। বিডাররা (ক্রেতা) এসব ঝামেলা পোহাতে চান না। এসব কারণে আমরাও ঝামেলায় পড়ি। বার বার এসব পণ্য নিলামে তোলার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। পাশাপাশি সারাদেশের মধ্যে একমাত্র লাফার্জ প্ল্যান্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাসায়নিক পণ্যগুলো ধ্বংস করা হয়। তবে বাজেট স্বল্পতার কারণে আমাদের ৭ টন রাসায়নিক পণ্য ধ্বংস করা বাকি আছে। বাজেট পেলেই পণ্যগুলো ধ্বংসের কাজ শুরু হবে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে বিভিন্ন শেড ও ইয়ার্ডে পড়ে আছে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পণ্য। বিপজ্জনক হওয়ায় এসব পণ্যের মাধ্যমে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বন্দরে পড়ে থাকা এসব রাসায়নিক পণ্যগুলো পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বন্দরে ঝুঁকি কমাতে ও জায়গা খালি করতে ১৫২ কেজি সালফিউরিক এসিড, ১ ব্যাগ টেক্সটাইল কেমিক্যাল, ৭৬২ ব্যাগ এলুমিনিয়াম পাউডার ও ৮০ ড্রাম সাইক্লো হেক্সানন পণ্য নিলামে তুলছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। আগামী ২ ডিসেম্বর আবার এসব পণ্যের নিলাম দিন ধার্য্য করেন কাস্টম।

(ঢাকাটাইমস/২৯নভেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :