ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ খুলনার পান চাষিরা

শেখ ফেরদৌস রহমান, খুলনা
 | প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ২১:১৮

অতিথি আপ্যায়নে চায়ের সাথে পান একটি সাধারণ কথা হলেও যে সব চাষি কষ্ট করে পানের আবাদ করছেন, তারা কেউ ভালো নেই। খুলনার প্রান্তিক পান চাষিরা পানের ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত। খরচের দামও উঠছে না অনেক পান চাষির। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পান চাষ করলেও সঠিক দাম পাচ্ছেন না তারা।

এবার মৌসুমে প্রচুর পান উৎপাদন থাকায় এমন সমস্যায় পড়েছেন পান চাষিরা। পাইকাররা সিন্ডিকেট করে পানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। ফলে এসব প্রান্তিক পান চাষিরা চরমভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। গ্রাম থেকে যাওয়া এ পান নগরীতে এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

তবে পাইকাররা বলছেন, করোনায় পানের চাহিদা আগের তুলনায় কম। তাই গ্রাম থেকে সরাসরি কম পান কিনছেন তারা।

সরোজমিনে দেখা যায়, খুলনা দিঘলিয়া উপজেলায় ব্যাপক পানের উৎপাদন হলেও দাম পাচ্ছেন না চাষিরা।

পান চাষি জসিম গাজী বলেন, এবছর পানের বরজে যে পরিমাণ উৎপাদন খরচ হয়েছে। অথচ সে তুলনায় কোন দাম পাচ্ছি না। প্রকার ভেদে কোন কোন পান বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র দশ টাকা করে পন। অথচ পানের উৎপাদন করতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ টাকা খরচ হচ্ছে। বাজারে ঠিকমতো পাইকাররা আসেন না। যারা আসেন তারা যে দাম দেন, ওই দামেই পান বিক্রি করতে হয়। এ বছর পান রপ্তানির কথা ছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় এখন ক্ষতি হলেও কিছু করার নেই। প্রতি এক বিঘায় পান চাষ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা। অথচ এবছর সব পান বিক্রি করলেও এক লাখ টাকার বেশি বিক্রি করা যাবে না। যে কারণে এবছর পান চাষ করে পরবর্তীতে বছর জমিতে অন্য কোন ফলন আবাদ করব ।এবছর বাঁশের খরচ শ্রমিকের খরচ সারের দাম যে পরিমাণ সে খরচ ও উঠছে না।

স্থানীয় পান চাষি মুজাহিদুল বলেন, গতবার দেড় বিঘার মত পানের বরজ রয়েছে। পানচাষ করে সংসার চলে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াও চলে এই বরজের আয় থেকে। বরজের পরিচর্যা আর সকালে পান ভেঙে বাজারে বিক্রি করা হয়।

তবে হঠাৎ করে দাম পড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে এই পানচাষির কপালে।এসব চাষিরা সরকারিভাবে সহযোগিতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে খুলনা দৌলতপুর বাজারের পাইকার ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে প্রতিদিন চাহিদার তুলনা বেশি পান আমদানি হচ্ছে। যে কারণে এ বছর পানের দাম আগের তুলনায় অনেক কম। প্রকার ভেদে কোন পানের দাম দশ টাকা, আবার প্রকার ভেদে কোন পানের দাম আশি টাকাও আছে। তবে বাজার যেভাবে চলে সেই ভাবে তো আমাদের চলতে হবে।

এ বিষয়ে খুলনা জোড়াগেট এলাকার খুচরা বিক্রেতা রুমন হালদার বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে পানের দাম চড়া থাকে। এ বছর পানের দাম এখন ও বৃদ্ধি হয়নি, তবে আমার কাছে একশ বিশ টাকা করে সর্বেচ্চ দামের পান রয়েছে। তাছাড়া সর্বনিম্ন ত্রিশ টাকা করে পানের পন বিক্রি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে খুলনা জেলা উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, এ বছর খুলনা জেলায় প্রায় ১১শ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। যার মধ্যে দিঘলিয়া ও রুপসা উপজেলায় বেশি। তবে ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা কৃষকেরা। এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না। যেহেতু এ বিষয়গুলো মার্কেটিং বিভাগ ভাল বলতে পারবে। তাছাড়া আগে একটি বিদেশি প্রকল্প ছিল, এ বছর যারা এসব পান চাষিদের বিভিন্ন ভাবে প্রণোদনা দিত। বর্তমানে এই প্রকল্প নেই। তবে কোন কৃষক এমন অভিযোগ করলে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।

(ঢাকাটাইমস/১ডিসেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :