রফিকুল ইসলাম স্যার ও গুবাকতরু

শরিফুজ্জামান পিন্টু
| আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:৪৮ | প্রকাশিত : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৫৩

জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম স্যারের মৃত্যুর খবর শোনার পর কানে বেজে ওঠে ওনার গলায় শোনা জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ‘বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি’ কবিতাটি। প্রায় ২৮ বছর আগে ওনার আবৃত্তি শুনেছিলাম, ফিচার লিখেছিলাম দৈনিক জনকণ্ঠে। খুব সহজেই লেখাটি খুঁজে পেলাম। যদিও তা ঝাঁপসা হয়ে গেছে। পড়ে দেখলাম ১৯৯৩ সালের ১৬ আগস্ট প্রকাশিত সেই লেখা।

নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলামসহ অতিথিরা ১৯৯৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবি নজরুল ইসলামের সমাধি ঘিরে লাগিয়েছিলেন সুপারি গাছের চারা। লক্ষ্য ছিল ১৯৯৯ সালে কবি নজরুলের জন্ম শতবর্ষ, ছয় বছরের মাথায় ১০০ গাছ বড় হবে।

৩০ নভেম্বর মৃত্যুর খবর শোনার পর স্বনামধন্য এই শিক্ষক, লেখক ও গবেষকের সঙ্গে সুপারি গাছের চারা লাগানোর স্মৃতি মনে উঁকি দিচ্ছে। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা স্যারের সঙ্গে সেদিন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার প্রো ভিসি অধ্যাপক ওয়াকিল আহমদ, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী আব্দুল ফাত্তাহ এবং জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. শাহাদত আলী। চারজনই ছিলেন গুণী অধ্যাপক। কেউ সরাসরি আমার শিক্ষক নন, কিন্তুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা করার সুবাদে তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম।

সেদিন জনকণ্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবেই গিয়েছিলাম সুপারির চারা লাগানো দেখতে এবং লিখতে। কিন্তু্ চারজন অতিথি, দু-তিনজন কর্মচারী এবং বাংলা বিভাগের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী ছিলেন সেখানে। দেখলাম, তাঁদের সবাই আবার গর্ত খুঁড়ে গাছ লাগানো, পানি ঢালা এবং গাছের সঙ্গে কঞ্চি পুঁততে আগ্রহী নন।

একশ গাছ লাগানো কিন্তুং কম কথা নয়! তাই নোটবুক পকেটে রেখে লেগে পড়ি গাছ লাগাতে। গাছ লাগানোর বিষয়টি আমার কাছে ছিল নেশার মতো। ছুটিতেও গ্রামের বাড়ি গিয়ে গাছ লাগাতাম, পুরানো গাছের যত্ম নিতাম। দেখলাম, শিক্ষকেরা কত যত্ম করে গাছ লাগাচ্ছেন। আমিও কোদাল-শাবল ধরি। আট-দশটি সুপারির চারা লাগিয়ে ফেলি।

স্যারেরা বুঝতে পারেন, আমি গ্রামের ছেলে, গাছ লাগানোর অভিজ্ঞতা আছে। তবে তখনও বুঝিনি কত বড় কাজ ছিল এটি। নজরুলের সমাধিতে নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলামসহ নামিদামী চার অধ্যাপকের সঙ্গে চারা লাগানোর সেই স্মৃতি আজও আমার নষ্টালজিয়া।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় নজরুলের সমাধি এবং সুপারি গাছগুলো তাকিয়ে দেখি। গুনগুনিয়ে উঠি, ‘নিশীথ রাতের বন্ধু আমার গুবাকতরুর সারি।’ এখন থেকে সুপারি গাছগুলোর দিকে তাকালে ভেসে উঠবে পণ্ডিত রফিকুল ইসলাম স্যারের মুখ।

‘বিদায়, হে মোর বাতায়ন-পাশে নিশীথ জাগার সাথী!

ওগো বন্ধুরা, পান্ডুর হ’য়ে এল বিদায়ের রাতি!

আজ হ’তে হ’ল বন্ধ আমার জানালার ঝিলিমিলি,

আজ হ’তে হ’ল বন্ধ মোদের আলাপন নিরিবিলি।’

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক বাংলা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :