উন্নত দেশ গড়তে সশস্ত্র বাহিনীকে অগ্রসৈনিকের ভূমিকায় চান প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:০৬ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অগ্রসৈনিক হিসেবে দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘২০৪১-এর যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, তারই অগ্রসেনা হিসেবে আপনারা কাজ করে যাবেন এটা আমি আশা করি।’

বৃহস্পতিবার ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২১’ এবং ‘আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২১’-এর গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগে সদা প্রস্তুত থাকে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা নানান কার্যক্রম করেছে। দুর্যোগ মোকাবেলার পাশাপাশি দেশের অবকাঠামো ও আর্থিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাসহ শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিশ্চিতকল্পে দক্ষতা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশকে ইতিমধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাদের সাধারণ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে এটা পাস হয়েছে। জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন। আর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেলাম। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবো। এখানে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের বন্ধনে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছি।

অনুষ্ঠানে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার যে প্রতিষ্ঠান যেখানে বারবার আঘাত এসেছে, ক্যু হয়েছে। সেখানে একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং উন্নত করা। স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বিশ্বসভায় মর্যাদা নিয়ে চলবে, সেই আকাঙক্ষা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করি। 

টানা তিনবার নির্বাচিত হওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এতে সময় ও সুযোগ পেয়েছি দেশের সেবা করার। ফলে প্রশিক্ষিত ও যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি।

সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী চলতে পারে। কারণ হচ্ছে জাতিসংঘের শান্তিবাহিনীতে আমাদের সেনাবাহিনী অংশগ্রহণ করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাদের চলতে হয়। তাই আধুনিক প্রযুক্তি, অস্ত্রশস্ত্র থেকে শুরু করে সকল ধরনের সরঞ্জমাদি সম্পর্কে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সবসময় প্রশিক্ষিত হবে ও জ্ঞানলাভ করবে। সেটাই আমার চেষ্টা। যেন কারো কাছ থেকে আমরা পিছিয়ে না থাকি।

স্বাধীনতা পরবর্তী দেশ গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছরে এই বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উপযোগী ও প্রয়োজনীয় সশস্ত্র বাহিনীও গড়ে তোলেন তিনি। তিনি চেয়েছিলেন স্বাধীন দেশে বাঙালিদের জন্য একটি পেশাদার ও প্রশিক্ষত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) সবসময় গণমানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করতেন। বিশেষ করে দেশের দরিদ্র, ক্ষুধার্ত, যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, রোগের চিকিৎসা পেতো না, শিক্ষা পেতো না, সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনের কথাই তিনি চিন্তা করেছেন। শুধু বাংলাদেশে না, সারাবিশ্বের দরিদ্র, নিপীড়িত  মানুষের কথা আন্তর্জাতিক যেকোনো জায়গায় তিনি বলেছেন। সেটা তিনি বিশ্বাস করতেন। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। এই পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি বিশ্বাস করতেন।

পঁচাত্তর পরবর্তী ২১ বছর সামরিক বাহিনীতে ১৯ বার ক্যু হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কত সামরিক কর্মকর্তা, জওয়ান, সৈনিক, সাধারণ মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। অনেক পরিবার এখনো তাদের লাশের সন্ধান কিংবা আপনজনের সন্ধানও পায়নি। এমন একটি অস্থিরতার মধ্যে ২১টি বছর কেটেছে।

পঁচাত্তর পরবর্তী নির্বাসিত জীবনের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা আমাদের দেশে আসতে দেয় নাই। রিফিউজি হিসেবে আমাদের বিদেশে থাকতে হয়েছে। এমনকি নিজেদের নামটা পর্যন্ত আমরা পরিচয় দিতে পারিনি। কারণ যারা আশ্রয় দিয়েছিল, এটা তাদের ইচ্ছা ছিল।

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার ঘটনা বর্ণনা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যে জাতি বঙ্গবন্ধুর ডাকে অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে, সেই জাতি অন্ধকারে পড়ে থাকবে কোন উন্নতি হবে না, তাদের জীবনধারণের উন্নতি হবে না, এটাতো হতে পারে না। আমাদেরকে ফিরিয়ে আনতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। গড়ে তুলতে হবে বাংলাদেশকে জাতির পিতার আদর্শে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি ফিরে এসেছিলাম।

‘চারণের বেশে সমগ্র বাংলাদেশ আমি ঘুরে বেড়াই। কোথায়? কি অবস্থায় মানুষ বসবাস করছে। এমন একটা সময় আমি দেখেছি, দেশের মানুষের পরনের কাপড়াটাও পুরানো, যা বিদেশ থেকে আমদানি করে পরানো হতো। ঘর নেই, বাড়ি নেই, পেটে খাবার নেই, চিকিৎসা নেই, শিক্ষা নেই। তেমনি একটি অবস্থায় দেশের মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মারা যেতো। হয়তো মুষ্টিমেয় লোক আর্থিক সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ জনগণ তিমিরেই ছিল।–বলেন সরকারপ্রধান।

ঢাকাটাইমস/২ডিসেম্বর/টিএ/এমআর