গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীর ও মনে যেসব পরিবর্তন ঘটে

প্রকাশ | ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৩২

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

গর্ভাবস্থায় নারীদের জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়, তেমনই অন্যতম কঠিন সময়। এই সময় শরীর কখনও ভাল থাকে, কখনও খারাপ। তেমনই চলতে থাকে মুডেরও খামখেয়ালিপণা। সুস্থ মা মানে সুস্থ সন্তান। সেটার জন্য শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকাও গুরুত্বপূর্ণ।

নতুন একটি প্রাণের জন্মদানের জন্য নয় মাস বা তার কিছু বেশি সময় ধরে একজন গর্ভবতী নারী যখন তাকে জঠরে বহন করেন, ধীরে ধীরে একটুখানি রক্তপিণ্ড থেকে হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক, হাত, পা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হয়ে একটি ভ্রূণের রূপান্তর হতে থাকে। সেই সাথে নারীর শরীর ও মনে নানা ধরনের পরিবর্তন আসতে থাকে।

গর্ভাবস্থায় নারীরে শরীরে যত রকম চমক তৈরি হয়, যত ধরনের পরিবর্তন আসে, তার পেছনে রয়েছে এস্ট্রোজেন এবং প্রজেজস্টেরন নামে দুটি হরমোন। চিকিৎসকের মতে, একদম শুরু থেকেই নারীর শরীরে পরিবর্তন আসতে থাকে। প্রথম তিনমাস বাহ্যিক পরিবর্তন বোঝা যায় না। বমিবমি ভাব অনেক গর্ভবতী নারী শুরুতে অনুভব করেন, বিশেষ করে সকালের দিকে। এজন্য খেতে পারেন না।

সবার ক্ষেত্রে ঘটে সেটি হল শরীর ভারি হয়ে যাওয়া। প্রতি মাসে দুই কেজি পর্যন্ত ওজন বৃদ্ধি অথবা পুরো গর্ভকালীন সময়ে ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়।

গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরের হাড়ের সংযোগস্থল ঢিলা হয়ে যায়। হাড়ের সংযোগস্থল ব্যথা হয়।

পেট ভারি বা শরীরের সামনের অংশ বেড়ে যাওয়ার কারণে পিঠের হাড়ে চাপ তৈরি হয়। পিঠে ব্যথা হতে পারে।

গর্ভবতী নারীদের অনেক সময় রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায় যাকে বলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। বেশিরভাগ সময় সন্তান প্রসবের পর এটি চলে যায়।

দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, ব্রাশ করার সময় রক্ত বের হওয়া, মাড়িতে ব্যথা হতে পারে।

জরায়ুর আকার বড় হয়ে যাওয়ার কারণে মূত্র থলিতে চাপ পড়ে। তাই বারবার প্রস্রাব হয়।

জরায়ুর আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুসফুস পর্যাপ্ত প্রসারিত হতে পারে না। তাই অনেকের শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে কারণ শরীরে আয়রনের চাহিদা বাড়ে।

এসময় নারীর শরীরে তরল উৎপাদন বেড়ে যায়। এতে পায়ে পানি জমে ফোলাভাব হতে পারে।

অনেকের উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে।

হরমোনের কারণে স্তন আকারে বড় হতে থাকে, স্তনবৃন্তের আশপাশ আরও কালো হয়ে ওঠে। শিশুকে খাওয়ানোর জন্য স্তন প্রস্তুত হয়। অনেকে স্তনে ব্যথা অনুভব করেন।

ল্যাকটোজেন হরমোন বুকের দুধ তৈরি করে।

যৌনতায় আগ্রহ বেড়ে যেতে পারে অথবা একদম কমে যেতে পারে।

যোনিপথ দিয়ে সাদা স্রাব যেতে পারে, রক্তক্ষরণ হতে পারে যা অতিরিক্ত না হলে উদ্বেগের কিছু নেই।

এগুলোই সাধারণ গর্ভাবস্থার প্রধান শারীরিক পরিবর্তন। যা সকল নারীর ক্ষেত্রে একই রকম নয়।

প্রসবের পর অক্সিটোসিন হরমোন জরায়ুকে সংকুচিত করে। তবে অনেককিছুই তার আগের জায়গায় ফিরে যায় না। অনেকের ওজন, স্ট্রেচ মার্কের, ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়ে যায়।

মনে যে ধরনের প্রভাব পড়ে

এই যত ধরনের শারীরিক পরিবর্তন তা নারীর মনের ওপর প্রবল চাপ তৈরি করে। এসময় উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা, মন খারাপ, রাগ, ঘনঘন মেজাজ বদল এরকম অনেক কিছু ঘটে নারীর মনে।

অনেকে আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তারা খুব অল্পতেই কেঁদে ফেলেন, বিরক্ত হন, রেগে যান, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।

চিকিৎসকের মতে, "গর্ভবতী নারীর আবেগে বড় ধরনের পরিবর্তন হয় কারণ কিছুই আর তার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। কোনদিন শরীর ভাল থাকে আবার পরদিন দেখা গেল শরীর খারাপ লাগছে। শরীরের অবস্থার এই যে ওঠানামা এটা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। মন চাইলেই সে অনেক কিছু করতে পারছে না। একটা বন্দিত্বের অনুভূতি তৈরি করে।"

সন্তান একজন মায়ের একার না। সন্তান দুই জনের। মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হলে, সে যদি নিজের সঠিক যত্ন না নেয় তাহলে তার অনাগত সন্তানের ক্ষতি হবে। স্ত্রীর সুস্থতাই বাচ্চার সুস্থতা এটি স্বামীদের বুঝতে হবে। এমন কিছু তাদের করা উচিত নয় যা গর্ভবতী নারীর জন্য মানসিক চাপ।

চিকিৎসকের মতে, এর একটি হল যৌন মিলন। গর্ভাবস্থায় একটি সময়ের পর বাংলাদেশে চিকিৎসকেরা যৌন মিলনে নিরুৎসাহিত করে থাকেন।

চিকিৎসকের কিছু পরামর্শ

সঠিক ও সুসম খাবার গ্রহণ। কিছু কাঁচা খাবার এড়িয়ে চলা। নিয়মিত হাঁটা ও গর্ভাবস্থার জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম। গর্ভবতী নারীদের রাতে চিৎ হয়ে শোয়ার বদলে এক পাশে কাত হয়ে শোয়া। গর্ভকালীন সময়ে অন্তত চারবার চিকিৎসকের কাছে যাওয়া যদি কোন জটিলতা না থাকে।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক অ্যাসিড ও ক্যালসিয়াম 'সাপ্লিমেন্ট' গ্রহণ করা। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা। মন ভালো রাখতে নিজের পছন্দের কিছু, শখের কিছু, শান্তি অনুভব করেন এমন বিষয়গুলো জীবনের সাথে যুক্ত করা।

(ঢাকাটাইমস/০৩ডিসেম্বর/আরজেড/এজেড)