ঢাবিতে বিনা নোটিশে রুম সিলগালা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

রাফিউজ্জামান লাবীব, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:১২ | প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:১৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত যোগাযোগ বৈকল্য (কমিউনিকেশন ডিজ-অর্ডারস) বিভাগের কলাভবনে অবস্থিত স্পিচ থেরাপি ক্লিনিক ও অডিওলজি ল্যাবের তিনটি রুম কোনো নোটিশ ছাড়াই তালা মেরে সিলগালা করে দিয়েছে প্রশাসন। এতে শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ও ব্যবহারিক কাজে বিঘ্নের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর কোনো নোটিশ না দিয়ে এটি সিলগালা করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

গত ২৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেস বরাদ্দ কমিটির একটি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে কলাভবনের দ্বিতীয় তলায় ২০৮৮, ২০৮৯ ও ২০৯১ নম্বর রুম তিনটি সিলগালা করা হয়। রুম তিনটিতে যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের ব্যবহারিক অংশের স্পিচ থেরাপি ক্লিনিক ও অডিওলজির ল্যাব রয়েছে। সাউন্ডপ্রুফ এই ল্যাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সেবা দেওয়া হয়, পাশাপাশি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ও ব্যবহারিক কাজে ব্যবহৃত হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, কলাভবনের দ্বিতীয় তলার ২০৮৮, ২০৮৯ ও ২০৯১ নম্বর রুম তিনটি সিলগালা করা। দরজার ওপরে সাঁটানো কাগজে লেখা- 'বিশ্ববিদ্যালয় স্পেস বরাদ্দ কমিটির (২৯/১১/২১ তারিখ) আহ্বায়ক, মাননীয় প্রো-উপাচার্য প্রশাসন-এর নির্দেশে তালাবদ্ধ করে সিলগালা করা হয়েছে।'

এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শিক্ষার্থীরা রুমগুলোর বাইরে 'এই কক্ষটি কমিউনিকেশন ডিজ-অর্ডারস বিভাগের ছিল, আছে, থাকবে', 'এই কক্ষটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ক্লিনিক্যাল সার্ভিস সেন্টার-এর জন্য ছিল, আছে, থাকবে', 'This is the Clinical Speech & Language Therapy Center for children & adults with special needs' ইত্যাদি পোস্টার লাগিয়েছেন।

এর আগে একবার এই কক্ষগুলোয় তালা দিলে গত ২ নভেম্বর বিভাগটির শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে ল্যাবে ঢোকেন। পরে রুমটি আবার তালাবদ্ধ করে সিলগালা করে প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগটির কলাভবনে অবস্থিত রুমগুলো নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত করছে ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন। তদন্ত শেষ হলে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

পূর্ব নোটিশ না দিয়ে ল্যাব ও ক্লিনিক রুম সিলগালা করায় বিভাগের শিক্ষকরা মর্মাহত। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন শিক্ষকরা। প্রো-উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস বিঘ্নিত হচ্ছে বলে ল্যাবটি খুলে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে বিভাগের পক্ষ থেকে।

যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের চেয়ারপারসন তাওহিদা জাহান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কলাভবনের ২০৮৮, ২০৮৯ ও ২০৯১ নম্বর রুমগুলোতে আমাদের স্পিচ থেরাপি ক্লিনিক ও অডিওলজির ল্যাব রয়েছে, যেগুলো সাউন্ডপ্রুফ। করোনার পরে সরাসরি আমাদের শিক্ষার্থীদের সেখানে ব্যবহারিক ক্লাসগুলো নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের না জানিয়ে প্রশাসন রুমে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত আমাদের কাছে।’

এই বিভাগটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের স্পিচ থেরাপি দিয়ে থাকে জানিয়ে তাওহিদা জাহান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের অডিওলজি ও স্পিচ থেরাপির জন্য ইন্টার্নশিপ করতে হয়। না হলে পড়াশোনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কেননা, এ বিষয়ের পড়াশোনা তাত্ত্বিকের পাশাপাশি অনেকটা ব্যবহারিক।’

কলাভবনের দ্বিতীয় তলায় ল্যাবের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাওহিদা জাহান বলেন, ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সেন্সরি সমস্যা থাকাতে তারা লিফটে উঠতে ভয় পায়, তাই কলাভবনের দ্বিতীয় তলায় ল্যাব ও ক্লিনিক রাখার বিষয়ে শুরু থেকেই অনুরোধ জানিয়ে আসছি। আমরা বিভাগ থেকে কলাভবনের ক্লাসরুম ও সেমিনার রুম বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি বহু আগে। কিন্তু আমাদের সে সুযোগ দেওয়া হলো না।’

কমিউনিকেশন ডিজ-অর্ডারস বিভাগের জন্য সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের অষ্টম তলায় ক্রিমিনোলজি বিভাগের সঙ্গে একটি ফ্লোরের অর্ধেক অংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও ক্লাসরুমের বাইরে কোনো ধরনের ল্যাবের সুযোগ নেই। বিভাগটি অষ্টম তলায় হওয়ায় বিশেষ শিশুদের সেন্সরি সমস্যার বিষয়টি ভাবাচ্ছে বিভাগের শিক্ষকদের।

তাওহিদা জাহান বলেন, ‘বিভাগকে কিছু না জানিয়ে, কোনোরকম নোটিশ না দিয়ে কর্তৃপক্ষের নামে একটি বিভাগের ল্যাব সিলগালা করে দেওয়ার বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। কলাভবনে এখনো মনোবিজ্ঞান বিভাগের একটি ল্যাব ও কাউন্সেলিং সেন্টার রয়েছে, যেখানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা আসে।’

ল্যাবে তালা দেওয়ার ঘটনায় হতাশ শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যবহারিক ক্লাস নিয়ে চিন্তিত। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাজিম উদ্দীন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের দুটো অংশের মধ্যে একটা তাত্ত্বিক, আরেকটা ব্যবহারিক। এত দিন জায়গা সংকটের কারণে আমরা ব্যবহারিক দিক থেকে পিছিয়ে ছিলাম। সেই ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে বিভাগের পক্ষ থেকে কলাভবনের রুমগুলো ল্যাব আর ক্লিনিকে রূপান্তর করেছে। কিন্তু, বিভাগকে না জানিয়ে হঠাৎ করে তালা মেরে দেওয়ায় আমরা হতাশ। আমরা এর নিন্দা জানাই ও আমাদের ল্যাব ফেরত চাই।’

এ বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম ঢাকা টাইমসকে জানান, রুম সিলগালা করার বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ এই রুমগুলো তাদের কাজে ব্যবহার করবে বা ল্যাব বানাবে বলে জানিয়েছিল।

সাদেকা হালিম বলেন, ‘সিলগালা করার কাজটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেস বরাদ্দ কমিটি করে থাকে। এখানে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে আমি, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবু দেলোয়ার হোসেন ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ আছেন। আশা করি সামগ্রিক বিষয়ে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব।’

এ ব্যাপারে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রুম সিলগালা করার বিষয়ে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে স্পেস বরাদ্দ কমিটির মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন করে আলোচনা করব। আমরা একটা মিটিংও করেছি। এখন এটার ফলাফলের অপেক্ষার আছি যে ওই বিভাগের আসলেই কতটুকু ক্ষতি হয়েছে। পরিপূর্ণ তথ্য পেলে আমরা স্পেস বরাদ্দ কমিটির মাধ্যমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবু দেলোয়ার হোসেন রুম সিলগালার বিষয়ে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগটি সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের আট তলায় চলে গেছে। তাদের সেখানে আগে অফিস রুম ছিল। সেখানে তারা ল্যাব করেছে। বর্তমানে এখানে তাদের যে রুমগুলো আছে সেটা স্পেস বরাদ্দ কমিটির অধীনে রয়েছে। এখন তারা যদি আবেদন করে তবে স্পেস বরাদ্দ কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে তাদের রুম দেবে কি না।’

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ অস্বীকার করে ড. মো. আবু দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। আমি কখনো এ ধরনের মন্তব্য করিনি।’

(ঢাকাটাইমস/০৫ডিসেম্বর/আরএল/জেবি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :