ভোলায় দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত ইউপি চেয়ারম্যান পেলেন নৌকা প্রতীক

ভোলা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:৩৩ | প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:২৫

ভোলার সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চাল আত্মসাতসহ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান খান পেলেন নৌকা প্রতীক। এর আগেও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। এবার দলীয় মনোনয়ন দেয়ার আগে তৃণমূল পর্যায়ে ডেলিগেটদের ভোটে হেরেও নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তিনি। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

রাজাপুর ইউপি নির্বাচনে তৃণমূল ডেলিকেটদের ভোটের মূল্যায়ন না করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড দুর্নীতিগ্রস্ত চেয়ারম্যানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও চায়ের দোকানসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ে গত দুদিন ধরে নানা রকম সমালোচনা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ মার্চ তৎকালীন ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে ১২ জন ইউপি সদস্য লিখিত অভিযোগপত্র দেন।

তারা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর মিজানুর রহমান খানকে তারা মৌখিকভাবে ইউনিয়নে আসা বরাদ্দ লোপাট করতে নিষেধ ও সতর্ক করেছিলেন। চেয়ারম্যান তাদের কথা না শুনে বিধিবহির্ভূতভাবে নিজে একাই সব সিদ্ধান্ত নেন। ইউপি সদস্যদের কোনো সিদ্ধান্ত বা জনসাধারণের অনুযোগ-অভিযোগ না শুনে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছেন। এমনকি ইউনিয়নের সরকারি গাছ বিনা টেন্ডারে কেটে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।

এছাড়া টাকার বিনিময়ে বয়স্ক ভাতা, বিধবা-স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা বিতরণ করেছেন। অর্ধেক টাকার বিনিময়ে মাতৃত্বকালীনভাতা ও ভিজিডি কার্ড বিক্রি করছেন। মোটা টাকা ঘুষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ও মুক্তিযোদ্ধার ঘর দিয়েছেন। সর্বশেষ জেলেদের জন্য বরাদ্দ হওয়া চালের ৪০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাৎ করেছেন। এসব অভিযোগে ওই ১২ জন ইউপি সদস্য অনাস্থাও দিয়েছিলেন মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে।

ইউপি সদস্যদের অভিযোগপত্র পেয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন তখনকার ভোলা জেলা প্রশাসক (ডিসি)। তদন্তে রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের অপরাধ প্রমাণিত হলে ডিসি স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে মন্ত্রণালয়ের কাছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেন।

ডিসির চিঠি পেয়ে ২০২০ সালের ২৩ এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয়রে উপ-সচিব মোহাম্মদ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেন। সেই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অপরাধ প্রমানিত হওয়ায়, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে জনস্বার্থে রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খানকে সাময়িক বরাখাস্ত করা হলো।

বরখাস্ত হওয়ার পরে রাজাপুরের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান উচ্চ-আদালতে রিট আবেদন করলে বিচারক চলতি বছরের ১৩সেপ্টেম্বর ৩ মাসের অস্থায়ী স্থগিতাদেশ দেন। যা আগামী ১৩ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল আছে।

রাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক মিঠু চৌধুরী বলেন, তিনি জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। বিএনপি-জোট সরকারের নির্যাতনে তার বড়ভাই শ্রমিকলীগ নেতা রকেট চৌধুরী নিহত হন। বর্তমানে তিনি রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০১১ ও ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তিনি দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

মিঠু বলেন, দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পরেই তার কর্মীদের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা হয়। অনেক খুন-জখম হয়। ২০২১ সালের নির্বাচনে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে, এ আশায় ও হামলা-মামলা থেকে কর্মীদের বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তিনি ২০১৮ সালে চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেন। তৃণমূলে ডেলিগেটদের ভোটে তিনি পেয়েছেন ৪২ ভোট, মিজানুর রহমান পেয়েছেন ৩৮ ভোট। তারপরেও কেন্দ্রীয় মনোনয়নবোর্ড তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তাই তিনি আবারও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এলাকার জনগণ তার পক্ষে আছে বলেও জানান মিঠু।

আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমান খান বলেন, বিগত সময়ে তার বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ উঠেছে, সব মিথ্যা। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। এজন্য তাকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে।

ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মমিন টুলু বলেন, বিগত সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত রাজাপুর ইউপির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খানের সাময়িক বরখাস্ত ও তৃণমূলের ডেলিকেটদের ভোট মূল্যায়ন করে রেজাউল হক মিঠু চৌধুরীর নাম এক নম্বরে রেখে কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় মনোনয়নবোর্ড মিজানকেই আবার মনোনয়ন দিয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন, তাদেরকে এ নির্বাচনে মনোনয়ন দেননি।

(ঢাকাটাইমস/৫ডিসেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :