যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীর কব্জি কর্তন: স্বামীসহ চারজনের কারাদণ্ড

প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:৪৮

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

শেরপুরে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে কুপিয়ে ডান হাত কব্জিসহ বিচ্ছিন্ন করার মামলার রায়ে স্বামীসহ চার সহোদরকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত।

রবিবার বিকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ আখতারুজ্জামান জনাকীর্ণ আদালতে সব আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে নিহতের স্বামী লিটন মিয়াকে (২৮) ১২ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ভিকটিমকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। এছাড়া নির্যাতনে সহায়তা ও আঘাতের দায়ে লিটন মিয়ার সহোদর তিন ভাই রিপন মিয়া (৩৮), উজ্জল মিয়া (৪৫) ও নূর ইসলামকে (৫০) তিন বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য আদেশ দেয়া হয়।

আদেশ অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণের টাকা ভিকটিম ও তার শিশু সন্তান লুৎফা (৩) পাবে। অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় লিটন মিয়ার আত্মীয় শফিকুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেরপুর সদর উপজেলার বাদাতেঘড়িয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক মৃত চাঁন মিয়ার মেয়ে কুলসুম বেগমের বিয়ে হয়েছিল জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের কসাইপাড়া এলাকার কসাই কুদরত আলীর ছেলে লিটন মিয়ার সঙ্গে। পারিবারিকভাবে লিটন মিয়াসহ তার পাঁচ সহোদর ভাই স্থানীয় বাজারে কসাই ব্যবসার সঙ্গে  জড়িত ছিলেন।

বিয়ের নয় মাসের মাথায় যৌতুকের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে লিটন মিয়া তার ভাইদের নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা সেই স্ত্রীর প্রতি অমানবিক নির্যাতন চালানো শুরু করে। একপর্যায়ে ২০১৮ সালের ১৩ জুন বিকালে লিটন নিজের মাংস কাটার চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রীর ডান হাত কব্জিসহ বিচ্ছিন্ন করে। সেই সঙ্গে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে এলোপাথারি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের স্পেশাল পিপি গোলাম কিবরিয়া বুলু জানান, ওই ঘটনায় জেলা হাসপাতাল ও ঢাকায় চিকিৎসা শেষে ২০১৮ সালের ৩ জুলাই গৃহবধূ বাদী হয়ে স্বামী লিটন মিয়া এবং তার চারজন সহোদর ভাই ও আত্মীয় শফিকুল ইসলামকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।

পরে ৬ জুলাই ঝিনাইগাতী থানায় নিয়মিত মামলা রেকর্ড হলে দুদিন পরই গ্রেপ্তার হন প্রধান আসামি লিটন। পরে তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

তদন্ত শেষে একই বছরের ৩১ আগস্ট ঝিনাইগাতী থানা পুলিশের তৎকালীন ওসি বিপ্লব কুমার বিশ্বাস কেবল লিটন মিয়া ও তার আত্মীয় শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কিন্তু বিচারিক পর্যায়ে বাদীপক্ষের নারাজির প্রেক্ষিতে এজাহারনামীয় ছয় আসামির বিরুদ্ধেই অপরাধ আমলে গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।

পরের বছরের ৩১ অক্টোবর লিটন মিয়ার ভাই রবি মিয়া ছাড়া অন্য চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বিচারিক পর্যায়ে বাদী-ভিকটিম, ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষগ্রহণ শেষে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় চার সহোদরের বিরুদ্ধে ওই রায় ঘোষণা করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/৫ডিসেম্বর/কেএম)