চুইংগাম রুখে দিতে পারে করোনাভাইরাস!

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:০৫ | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:১৬

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

হাজার বছর আগে থেকেই প্রাকৃতিক চুইংগাম বেশ জনপ্রিয় ছিল । স্প্রুস গাছের রস বা গামের সঙ্গে পেপসিন পাউডার যুক্ত করে বিভিন্ন ফ্লেভারে চুইংগাম হাতের নাগালে চলে আসে। মুখের সুগন্ধি, দাঁতের ময়লা পরিষ্কার থেকে শুরু করে মানুষের বিভিন্ন বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করতে চুইংগামের জুড়ি নেই। শুধু তাই নয় চুইংগাম রুখে দিতে পারে করোনাভাইরাসকে। লালারসের মধ্যে আটকে রেখে একটি বিশেষ ধরনের চুইংগাম শরীরে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে দেয় না।

 

সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এমনই দাবি করা হয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘মলিকিউলার থেরাপি’-তে।

 

গবেষণায় জানা গেছে, আলফা, বিটা, ডেল্টাসহ করোনাভাইরাসের সবকয়টি রূপ (ভেরিয়্যান্ট)-কেই লালারসে রুখে দিতে পারছে চুইংগাম। তবে ওমিক্রন-কেও রোখা যায় কি না, তা গবেষকরা এখনও পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পাননি।

 

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে মানুষের লালারসে প্রচুর পরিমাণে থাকে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস। তাই চুইংগাম মুখেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখে দিতে পারে কি না, কতটা সক্ষম এ ব্যাপারে, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল আমেরিকার বিজ্ঞানীদের।

 

চুইংগাম যে মুখের অভ্যন্তরের স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী, তা আগেই জানা ছিল। চুইংগামে ক্যালসিয়াম ও বাইকার্বনেটের মতো যে নানা ধরনের পদার্থ থাকে, জানা ছিল সেগুলো মুখের অভ্যন্তরের স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। খুব প্রয়োজনীয়ও। কারণ, এই পদার্থগুলো মুখের অভ্যন্তরে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয়। কিন্তু চিউয়িং গাম দিয়ে ভাইরাসকে রোখার উপায় খুঁজে বার করা নিয়ে এর আগে তেমন ভাবে কোনও পরীক্ষা চালানো হয়নি। হয়নি তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য গবেষণাও।

 

গবেষকরা এই চুইংগামটি বানিয়েছেন অভিনব উপায়ে। তাতে মিশিয়ে দিয়েছেন প্রচুর পরিমাণে এসিই-২ রিসেপ্টর প্রোটিন। এ ক্ষেত্রে উদ্ভিদের তৈরি করা এসিই-২ রিসেপ্টর প্রোটিন নিয়েছেন গবেষকরা।

 

চুইংগামে এসিই-২ রিসেপ্টর প্রোটিন মিশিয়ে দেওয়ার কারণ রয়েছে। মানবশরীর ঢুকে সংক্রমণের প্রাক মুহূর্তে এই প্রোটিনের উপরেই এসে বসে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস। মানবশরীরে কিছু কিছু কোষের উপরে থাকে এই প্রোটিন। চুইংগামে এসিই-২ রিসেপ্টর প্রোটিন মিশিয়ে দিয়ে গবেষকরা চেয়েছিলেন ভাইরাসকে সেখানেই আটকে রাখতে। যাতে তা কোষে ঢুকে পড়তে না পারে। গোটা শরীরে ছড়িয়ে না পড়তে পারে।

 

পরীক্ষা চালানোর জন্য গবেষকরা কোভিডে সংক্রমিতদের লালারস নিয়ে তাতে মিশিয়ে দিয়েছিলেন এসিই-২ রিসেপ্টর প্রোটিন থাকা বিশেষ ধরনের চুইংগামের গুঁড়া । আবার ওই প্রোটিন নেই এমন চুইংগামও তারা আলাদাভাবে মিশিয়ে রেখেছিলেন কোভিড সংক্রমিতদের লালারসে। তাতে তারা দেখেন, যে চুইংগামে ওই প্রোটিন মেশানো আছে তা মুখের অভ্যন্তরে লালারসে করোনাভাইরাসকে আটকে রাখতে অনেক বেশি সক্ষম হচ্ছে।

 

গবেষকরা পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন লালারসে ওই প্রোটিন মেশানো ৫ মিলিগ্রাম ওজনের চুইংগাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মুখের অভ্যন্তরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে দিতে পারে। আর ওই প্রোটিন মেশানো ৫০ মিলিগ্রাম ওজনের চিউয়িং গাম সংক্রমণ কমাতে পারে অন্তত ৯৫ শতাংশ।

 

বিশেষজ্ঞদের একাংশ অবশ্য বলছেন, বিষয়টি নিয়ে আরও পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন গবেষণাগারে। দেখতে হবে স্পাইক প্রোটিন ছাড়া করোনাভাইরাসের অন্য প্রোটিনগুলোকেও এই বিশেষ ধরনের চুইংগাম রুখে দিতে পারছে কি না।

 

(ঢাকাটাইমস/৬ডিসেম্বর/আরজেড/এজেড)