দ্রুত ছড়ালেও ওমিক্রন ভয়ংকর নয়: বিজন শীল

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:৩৮ | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ধারণার চেয়েও দ্রুত ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে ৪৫টি দেশে ধরনটি শনাক্ত হয়েছে। তবে এটি ডেল্টা ধরনের মতো এতটা ভয়ংকর নয় বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী বিজন শীল। এই ভ্যারিয়েন্টটি করোনার টিকার কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে, এটা অবশ্য উদ্বেগের কারণ বলে মনে করেন তিনি। 

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। করোনার নতুন  ভ্যারিয়েন্টের ওপর আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্যে কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক (ডা.) মো. সায়েদুর রহমান। সেমিনার পরিচালনা করেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার।

বিজন কুমার শীল বলেন, ‘ওমিক্রনকে ভয়ংকর ভাবার কারণ এর মিউটেশন। এখন পর্যন্ত ডেল্টা ধরনের সর্বোচ্চ ১৫টি মিউটেশন হয়েছে। সেখানে ওমিক্রনের হয়েছে ৫০টি। যার ৩২টি স্পাইক প্রোটিন। যা দিয়ে সে মানুষকে খুব সময়ে সংক্রমিত করে এবং এর মাধ্যমে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। এই যে ব্যাপক পরিবর্তন, এতে ধরনটি শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। আর এজন্যই মনে করা হচ্ছে, হয়তো ওমিক্রন ডেল্টার চেয়েও ভয়ানক হবে।’

এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘ফিউরিন নামক একটি প্রোটিন পুরো ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। এটি সার্সকপ-১ এ ছিল না, তবে সার্সকপ-২তে আছে। এখন এটি যদি আরও বিস্তার লাভ করে তাহলে ডেল্টার চেয়েও মারাত্মক হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে ডেল্টার মতো আতঙ্কিত করার অবস্থায় যায়নি ওমিক্রন। তবে এটাই শেষ নয়, খারাপ হতে পারে। আফ্রিকা থেকে অন্যান্য দেশে শনাক্তের পর এটি আরও শক্তিশালী হয়েছে, সংক্রমণ যত বাড়বে ততটাই এটি মারাত্মক হতে থাকবে।’

এই গবেষক বলেন, ‘ইতিমধ্যে যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তারা অনেকটা সুরক্ষিত। তবে এর বিপরীতে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতটুকু সেটি সম্পর্কে এখনো পর্যালোচনা চলছে।’

একই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, ‘একদিনের লকডাউনে তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। অথচ যদি বিনা টাকায় নমুনা পরীক্ষা যেত, প্রয়োজনে বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা করাতে পারতাম, তাহলে অর্থনীতি সচল থাকত। এই দেশে এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের অর্ধেক বেলা খাবারে জন্য কাজ ফেলে আসা সম্ভব নয়। প্রয়োজনে পরীক্ষার জন্য মানুষকে টাকা দিতে হবে, তবেই আমরা লকডাউন নামক এই জঞ্জাল থেকে মুক্তি পাবো।’

এই চিকিৎসক বলেন, ‘দেশের ১৫ কোটি মানুষকে ৩০ কোটি মাস্ক বিনামূল্যে দিতে কী সমস্যা। সাদা-লাল রংয়ের দুই ধরনের মাস্ক দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রতিটি শহরে সাত দিনের মধ্যে মানুষকে সচেতন করা যায়। ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু করেন, এতে সরকারে পদক্ষেপ সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে, গুরুত্ব দেবে। একই সঙ্গে প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিকুয়েন্স করার সক্ষমতা আছে, পিসিআর পরীক্ষা একেবারেই সহজ অবস্থায়। তাহলে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে কি এত সময় লাগে?

সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, ‘এখন রেস্টুরেন্টে গেলে ভ্যাকসিন সনদ চায়। আমরা জানি, নিবন্ধিত ৮০-৯০ লাখ এবং নিবন্ধন ছাড়া প্রায় কোটির মতো বয়স্ক মানুষ এখনো টিকার বাইরে। আমাদের বুঝতে হবে ঝুঁকি কার বেশি। ঝুঁকিতে থাকা মানুষের টিকা নিশ্চিত না করে নিচে নেমে আসা, বুস্টার ডোজ দেওয়া অনৈতিক, এটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। যেখানে মৃতদের বেশির ভাগেই বয়স্ক, সেখানে তারা টিকার বাইরে থাকার তো কোনো কারণ নেই।’

জুমে সেমিনারে অংশ নিয়ে গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজনও সাইন্স (বিজ্ঞান) পড়েনি। মন্ত্রী সাহেবও বিজ্ঞান বোঝেন না, সেক্রেটারি সাহেবও

কোনোদিন বিজ্ঞান পড়েছেন কি না জানি না। অথবা এখানে লেনদেনের সুবিধা নেই বলে তাদের সময় নেই। ওনাদের উৎসাহ অনেক বেশি দ্বিগুণ দামে ভ্যাকসিন কিনতে। প্রায় ১৪ ডলার দিয়ে তারা ভ্যাকসিন ক্রয় করেছেন প্লেনের ভাড়া ছাড়াই।’

জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র) একটাই অপরাধ, আমরা কিট নিয়ে ব্যবসা করতে চাইনি। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ব্যবসা একটি অত্যন্ত ঘৃণ্য অপরাধ বলে আমি মনে করি। খালেদা জিয়াকে জেলে রাখার থেকেও স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা খারাপ অপরাধ। বর্তমানে সময়ে মেডিকেল সাইন্স এবং মেডিকেল পলিটিক্সটাকে আরও ভালোভাবে বোঝা দরকার।’

(ঢাকাটাইমস/০৭ডিসেম্বর/জেবি)