এখন এত চেচামেচি, খালেদা কী করেছিলেন: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:৫১ | আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:০৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের সবচেয়ে উন্নত ও ব্যয়বহুল হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে নির্বাহী আদেশে। তার প্রতি অনেক উদারতা দেখানো হয়েছে। আর কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আজ এত চেচামেচি করছেন, কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে কী করেছিলেন, সেটাও স্মরণ রাখবেন।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আওয়ামী যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এতে যুক্ত হন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিএনপির নেতাদের জিজ্ঞাসা করি, তারা যে সহানুভূতি দেখাতে বলেন, তারা যে সহযোগিতা চান, খালেদা জিয়া কী আচরণ করেছেন? একুশে আগস্ট যে গ্রেনেড হামলা তার আগে খালেদা জিয়ার কী বক্তব্য ছিল? যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা কোনো দিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না। এই বক্তৃতাই তো খালেদা জিয়া দিয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগ একশ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আল্লাহর খেলা এটা বোঝা তো ভার। বরং খালেদা জিয়াই প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি, বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারেননি। এটা তার ওপরেই ফলে গেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে সব থেকে দামি যে হাসপাতাল, যে হাসপাতাল সব থেকে ব্যয়বহুল, সেখানেই কিন্তু তার চিকিৎসা হচ্ছে। তার ছেলের বউ তো ডাক্তার। তারেকের বউ ডাক্তার। শুনেছি সে না কি অনলাইনে শ্বাশুড়িকে দেখে। কই ছেলে, ছেলের বউ তো কোনোদিন দেখতে এলো না। অবশ্য কোকোর বউ এসেছে। তারা তো আসেনি। যাই হোক তবুও বিএনপি এত দিন পর একটা সুযোগ পেয়েছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার এই দাবিতে তারা আন্দোলন করছে। খুব ভালো, তারা আন্দোলন করুক। কিন্তু আমার যতটুকু করার ছিল সেটা কিন্তু করেছি।’ 

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘তারপরেও সে যখন অসুস্থ এবং দুর্নীতির দায়ে, সে দুর্নীতিটা কী? গ্যাটকোর কেস তার বিরুদ্ধে, নাইকোর কেস তার বিরুদ্ধে এবং এটা কিন্তু আমাদের না। আমেরিকার এফবিআই তারা খুঁজে বের করেছে। সিঙ্গাপুরে তার এবং তার ছেলের দুর্নীতি বেরিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাই বের করেছে। সেই কেইসগুলো তো আছেই। সবচেয়ে বড় কথা এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল। সেই এতিমদের টাকা এতিমদের হাতে কোনোদিন পৌঁছায়নি। সে টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে রেখে দিয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজেই খেয়েছে সে টাকা, খালেদা জিয়াই ভোগ করেছে এতিমের অর্থ। কাজেই সেই সাজা পেয়েছে এবং সেই সাজা সে ভোগ করছে। তারপর সে কারাগারে ছিল। খালেদা জিয়ার বড় বোন আর ভাই আমার কাছে এসেছে। বোন, বোনের স্বামী, ভাই এরা সব এসেছিল। আসলো যখন খুব স্বাভাবিকভাবে রেহানাও আমার সাথে উপস্থিত ছিল। একটা মানবিক দিক থেকে আমি তাকে তার বাড়িতে থাকার একটা আমার এক্সিকিউটিভ পাওয়ারে আমি যতটুকু করতে পারি অর্থাৎ নির্বাহী যে ক্ষমতাটা আমার আছে সেটার মাধ্যমে আমি তার সাজাটা স্থগিত করে তাকে তার বাসায় থাকার অনুমতি এবং চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে এ দেশের কী অবস্থা ছিল? আজকে তার চিকিৎসার জন্য এত চেচামেচি করে বেড়াচ্ছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে আমাদের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি যখন অসুস্থ তাকে সিএমএইচে পর্যন্ত চিকিৎসা করতে দেয়নি। এমনকি সে যখন আইসিইউতে ভর্তি তাকে স্ট্রেচারে করে কোর্টে নিয়ে হাজির করেছে। তাকে জেনারেল পদ দেওয়া হয়েছিল সেটা বাতিল করে দিয়েছিল। তার প্রমোশনও বাতিল করেছিল। এমনকি আমি সেনাবাহিনীতে যখন নারীদের ভর্তি নিশ্চিত করি, কারণ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে আগে নারী সদস্য ছিল না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেয়েরা ছিল না, আমি মেয়েদের দিই। মোস্তাফিজের ছোট মেয়ে, সে প্রথম ব্যাচে জয়েন করে। তার পাসিং আউট প্যারেড যখন হয় খালেদা জিয়া ক্ষমতায়। আমি একটা নিয়ম করেছিলাম, সেটা এখনো আছে চলমান যে, বাবা-মা উপস্থিত থাকবে। তারা নিজের হাতে তার সন্তানকে ব্যাচ পরাবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, খালেদা জিয়া জেনারেল মোস্তাফিজ এবং তার স্ত্রীকে আসতে দেয়নি। তার মেয়ের ব্যাচটা তারা পরাতে পারেনি। অথচ এরাই ছিল আমার সেনাবাহিনীতে প্রথম নারী অফিসার। কিন্তু মোস্তাফিজের সেই পারমিশনটা পর্যন্ত ছিল না। এই হলো খালেদা জিয়া।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরশাদকে তো কারাগারে বন্দী করে রেখেছিল। তাকে চিকিৎসার জন্য কোনোদিনও সুযোগ করে দেয়নি। রওশন এরশাদকে দেয়নি। আবার জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় আমাদের সাজেদা চৌধুরীর অপারেশন হয়েছিল। ঘা শুকায়নি। সেই ব্যান্ডেজ অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করে জিয়াউর রহমান জেলে ভরেছিল। ঠিক একই অবস্থা মতিয়া চৌধুরীর। তাকেও তখন জেলে দিয়েছিল। তারও তখন টিবি হয়েছিল, অসুস্থ ছিল। তাকেও জেলে দিয়েছিল। এরকম বহু অন্যায় অবিচারের কথা।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পার্টির অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করে যে অকথ্য অত্যাচার করেছে। বাহাউদ্দিন নাছিম থেকে শুরু করে মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবের হোসেন চৌধুরী, শেখ সেলিমসহ বহু নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছে। নাসিমকে তো এমন অত্যাচার করেছিল যে, তাকে মৃত মনে করে তাড়াতাড়ি কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। সে বেঁচে গেছে। দিনের পর দিন অত্যাচার করেছে, আবার সে অত্যাচারের ভিডিও নিয়ে খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া দেখে তারা উৎফুল্ল হয়েছে। এই ধরনের হিংস্র একটা চরিত্র আমরা দেখেছি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘শুধু তাই না খালেদা জিয়ার ছেলে যখন মারা গেল কোকো, আমি গেলাম সহানুভূতি দেখাতে। আমি হঠাৎ করে যাইনি। আমার এখান থেকে আমার মিলিটারি সেক্রেটারি যোগাযোগ করেছে। এডিসি যোগাযোগ করেছে। সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আমি সময় মতো গেছি। আমার এখান থেকে এসএসএফ গেছে, সেখানে তারা দেখেছে কোথায় যাব। আমি যখন রওনা গেছি, গুলশান রোডে ঢুকছি তখন শুনলাম ওই বাড়ির মেইন গেট খুলবে না, আমার গাড়ি ঢুকতে দেবে না। তা আমি বললাম, এতদূর যখন চলে আসছি ফিরে আসবো কেন? ঠিক আছে পাসে নিশ্চয়ই পকেট গেট আছে, সেখান থেকে যাব। যখনই আমার গাড়িটা বাড়ির সামনে থেমেছে, আমার যে এসএসএফ অফিসারটা ভেতরে ছিল সে জাস্ট বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে আমাকে ভেতরে নিতে, সাথে সাথে দরজাটা বন্ধ করে তালা দিয়ে দিয়েছে। আমি গাড়ির থেকে নেমে বেকুব, আমি আর ঢুকতে পারি না। আমি গেছি একটা মা সন্তানহারা তাকে সহানুভূতি দেখাতে। আর সেখানে এইভাবে অপমান করে ফেরত দিয়েছে আমাকে।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে একটা ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল। কারণ তার ইচ্ছা ছিল কোনোমতো জনগণের ভোটটা চুরি করে সে ক্ষমতায় টিকে থাকবে। কিন্তু চুরি করা সম্পদ যে ধরে রাখা যায় না আর তা হলো জনগণের ভোট চুরি করলে আর ক্ষমতায় থাকা যায় না, সেটা সে বুঝতে পারেনি। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে কর্নেল রশীদ এবং মেজর হুদা। একজনকে কুমিল্লা থেকে একজনকে চুয়াডাঙ্গা থেকে সেই ভোটারবিহীন অবস্থায় তাদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করে পার্লামেন্টে এনে বসায়। আর জিয়াউর রহমান যেমন ওই রাজাকার আলবদর বাহিনী এবং যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে মন্ত্রী, উপদেষ্টা করেছিল খালেদা জিয়াও সেই একই পদাঙ্ক অনুসরণ করে। সেও সেই যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানায় এবং ক্ষমতায় বসায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ ফেব্রয়ারি সেই ভোট চুরি খালেদা জিয়া টিকিয়ে রাখতে পারেনি। ভোটচুরির অপরাধে এই বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন গড়ে তোলে এবং খালেদা জিয়া বাধ্য হয় ৩০ মার্চ ৯৬ সালে পদত্যাগ করতে। গণআন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেছিল। এটা বোধহয় দেশবাসীর মনে রাখা উচিত। ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে নিজেকে। তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। আর ঠিক তার দেড় মাসের মধ্যে তাকে ক্ষমতা ছেড়ে যেতে হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/০৮ডিসেম্বর/টিএ/জেবি)