পুঁজিবাজারে সাফল্যের চাবিকাঠি

মো. শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার
| আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ২২:২৯ | প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫:১৯

পুঁজিবাজারে সফলতার জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ শিক্ষা, আর এর জন্য প্রয়োজন অধ্যবসায়। আমাদের পুঁজিবাজারে সফলতা পেতে বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ, পজিটিভ ইন্ডিকেটর ও পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলার নীতি সম্পর্কে জানতে হবে। আর এই জ্ঞান আহরণের জন্য স্বশিক্ষার কেনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া সাহায্য নিতে পারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও বই-পুস্তকের। পুঁজিবাজারের উত্থান ও পতনের চক্র একেক পর্যায়ে একেক রকম হয়ে থাকে। পূর্ববর্তী বছরগুলোর নির্দিষ্ট পরিস্থিতির বাজারের আচরণের সঙ্গে বর্তমানের আচরণের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। বর্তমান বাজারের চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে তার আচরণ নিজেই নির্ধারণ করে থাকে। আমাদের সেরাটা পেতে হলে মৌল ভিত্তি বিশ্লেষণের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

আমরা নিম্নোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ ও চর্চা করলে ভবিষ্যতে তা আমাদের সফলতার চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে।

১. Trading Plan: যেকোনো পেশাদার টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে খেলোয়াররা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও প্র্যাকটিস করে মূল খেলায় অংশ নেন। তেমনি আমাদের প্রতিদিন ট্রেডিং শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত অ্যানালাইসিস করে ট্রেডিং প্লান তৈরি করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ট্রেডে অংশ নিতে হবে। অর্থাৎ Plan your trades and trade your plan, ট্রেডিং প্লানে বিভিন্ন স্টকের Entry I Exit point ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকবে। ট্রেডিং আওয়ারে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো, কারণ এতে ভূুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

২. Keep Learning: শেয়ারবাজারে অধ্যয়ন, শৃঙ্খলা ও অভিজ্ঞতা- এই তিনের সমন্বয়ে ব্যর্থতা এড়াতে পারেন যেকোনো ব্যক্তি। এ জন্যই একজন সফল বিনিয়োগকারীকেও মার্কেটের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে সারা জীবন শিখতে হয়। কারণ মার্কেট সর্বদা গতিশীল ও জেতার কৌশল পরিবর্তনশীল।

৩. Don’t Trade without any Reasons: আপনার প্রতিটি বিনিয়োগের পেছনে কারণ থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য-উৎপাত্তের বিশ্লেষণমূলক রিপোর্ট থাকতে হবে, প্রতিটি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভালো সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে।

৪. Diversification: এতে ঝুঁকি কমে, আবার over diversification ভালো নয়, কারণ অল্পসংখ্যক স্টকের মুভমেন্ট ফলো করা সহজ হয়। আপনার পুঁজি ও সময় অনুযায়ী বিভিন্ন সেক্টর থেকে মোট তিন থেকে ছয়টি স্টক দিয়ে আপনার পোর্টফলিও সাজান।

৫. Cash is king: মূলধনের সমস্ত অংশ দিয়ে শেয়ার না কিনে কিছু নগদ টাকা হাতে রাখুন যেকোনো সময় সুযোগ আসতে পারে, নগদ টাকা না থাকলে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।

৬. Buy high , sell highs : বেশি দরে কিনে সর্বোচ্চ দরে বিক্রি করার মানসিকতা থাকতে হবে । Buy low, sell high মনোভাব ত্যাগ করুন এবং Buy high, sell highs এ সূত্র অনুসরণ করুন। শুধু দাম কম বলেই কিনবেন না, আবার দাম বেশি বলেই বিক্রি করে দেবেন না, শেয়ারের ভবিষ্যৎ চিন্তা করতে হবে।

৭. Always Follow the Trends: মার্কেট ট্রেন্ড কী তা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। স্রোতের বিপরীতে না চলাই ভালো, তাই বলা হয় ‘Trend is your friend”.

৮. Stop loss: স্টপ লস হলো আমাদের পুঁজি সংরক্ষণের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। আমরা সবাই জানি কিন্তু কমসংখ্যক বিনিয়োগকারী এটা ব্যবহার করে থাকেন।

৯. Average: যারা লং টার্মে বিনিয়োগ করেন তাদের জন্য ভিন্ন কথা হলেও কিন্তু যারা ডে ট্রেড করেন তারা ভুলেও এ কাজ করবেন না। আমাদের খড়ংং ঢ়ড়ংরঃরড়হ বৃদ্ধি করা উচিত নয়, কারণ দীর্ঘ মেয়াদে আপনার পুঁজি আটকে যেতে পারে, কিংবা লসের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।

১০. Missed Opportunity: যেসব সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে, তার পেছনে দৌড়ে অতিরিক্ত লস করা ঠিক নয়। সুযোগের অপেক্ষা করতে হবে এবং নতুন সুযোগ আসামাত্র তা গ্রহণ করতে হবে।

১১. Don’t buy all at once: সব শেয়ার একবারে না কিনে ২-৩ কিস্তিতে কিনুন। কিন্তু কেনার পর যদি শেয়ারটা আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী মুভ করে তাহলে বাকি পুঁজি বিনিয়োগ করুন।

১২. Price Target: অনেকে কেনার সময় টার্গেট সেট করেন এবং শেয়ারের মূল্য সে টার্গেটে না পৌঁছালে বিক্রি করেন না। ফলে অনেক সময় লাভ ঘরে তুলতে পারে না বরং লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিতে হয়।

১৩. Taking Profit: সময়মতো লাভ ঘরে তুলুন। লাভ ধাপে ধাপেও তুলতে পারেন। তবে লোকসানের ক্ষেত্রে সব অংশ একবারে বিক্রি করে দিন।

১৪. Be Patient: ধৈর্য্য সহকারে ভালো প্রাইসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অধৈর্য হয়ে বিক্রি করে দিলে পরবর্তীতে দাম বাড়তে থাকে, তবে শেয়ারটি প্রত্যাশিত মুভমেন্ট না করলে বিক্রি করে দেওয়াই ভালো।

১৫. Market is Always Right: নিজে ভুল করে মার্কেটকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভুল শুধরে এবং ভূুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

১৬. News: সব সময় নিউজের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ভুয়া নিউজের ফাঁদে পড়ে পুঁজি হারানোর সম্ভাবনা থাকে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে নিউজের চেয়ে মার্কেটে নিউজটির প্রতিক্রিয়া কী সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

১৭. Source of Information: দক্ষ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মূল বিষয় অর্থাৎ কে কত আগে নির্ভুল তথ্য পাবে এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করে মার্কেটে অবস্থান নেবে। তার ওপরই সফলতা তত বেশি নির্ভরশীল।

১৮. Risk Management: পুঁজিবাজারে অতি লোভের বশবর্তী হয়ে অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়া ঠিক না। যেকোনো ট্রেডে পোর্টফোলিওর ২ শতাংশের ওপর ঝুঁকি নেওয়া অনুচিত।

১৯. Afford to Loss: লসকে সব সময় সহনশীল মাত্রায় রাখুন। নিজের সহ্যক্ষমতার মধ্যে ঝুঁকি নিন। ঋণের অর্থে ঝুঁকি নেবেন না।

২০. Trading Break: কিছু সময়ের জন্য বিরতি নিন। মনকে প্রফুল্ল রাখুন, পরিবার নিয়ে সময় কাটান, বাজার থেকে দুরে থাকুন। এতে চাপ কমে, ভুল কমে ও সাফল্য আসে।

২১. Following Rules: আমরা নিয়ম ভাঙতে পছন্দ করি, তাই তো অপর বিনিয়োগকারীর মতামতের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ক্ষতির সম্মুখীন হই। সফল বিনিয়োগকারী হতে হলে অবশ্যই নিয়ম মেনে চলতে হবে।

আমাদের বর্তমান শেয়ারবাজারে নিজেকে ধরে রাখা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। তাই উপরোক্ত নীতিগুলো অনুসরণ করে চলতে পারলে ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব। শেয়ারবাজার একটি বিশাল বাজার। এখানে বিনিয়োগকারীরা যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন। তাই আমাদের বিনিয়োগ শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে তৈরি করতে হবে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে বিনিয়োগ শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: কলামিস্ট। হেড অব অপারেশন, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্টগ্রাম।

ই-মেইল: [email protected]

সংবাদটি শেয়ার করুন

পুঁজিবাজার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা