এসপি বিপ্লবের মানবিকতা, সেই নারী ফুটবলারের বাজিমাত
হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে মাঠে নামাই অনিশ্চিত ছিল ক্ষুদে নারী ফুটবলার নাসরিন আক্তারের। বাবা-মা হারা নাসরিনের ছিল না চিকিৎসা করানোর মতো সক্ষমতা। রংপুরের নারী ফুটবলারের গ্রাম হিসেবে পরিচিত পালিচড়ার উদীয়মান এই নারী ফুটবলার ছেড়ে দিয়েছিলেন খেলাধুলা। শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের এক প্রত্যন্ত এলাকা সদ্যপুষ্করিনী ইউনিয়নের গ্রামটির বেশির ভাগ অধিবাসী পেশায় প্রান্তিক কৃষক কিংবা দিনমজুর। কিন্তু সবাইকে অবাক করে পালিচড়ার সেই কৃষক আর দিনমজুর ঘরের মেয়েরাই স্কুল ফুটবলে হয় দেশসেরা। ঘরে ঘরে গড়ে ওঠে কিছু সম্ভাবনাময় নারী ফুটবলার।
তাদের খেলা দেখতে একদিন গ্রামটিতে যান রংপুরের পুলিশ সুপার (বর্তমানে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার। জানতে পারেন, পায়ে ইনজুরির কারণে খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে সম্ভাবনাময় নারী ফুটবলার নাসরিনের। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সুপার তার অধীন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নাসরিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। রাজধানীতে এনে করানো হয় অপারেশন।
সেই নাসরিনের একমাত্র গোলে আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের (অনূর্ধ্ব-১৭) ফাইনালে ময়মনসিংহ বিভাগকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রংপুর বিভাগ। আর ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন নাসরিন। এ ছাড়া টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ চারটি গোলও করেছেন এই নারী ফুটবলার।
আজ টুর্নামেন্টের ফাইনাল শেষে বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ১ ডিসেম্বর কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ প্রতিযোগিতা উদ্বোধন ঘোষণা করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
এদিকে নাসরিনের এমন কৃতিত্বে প্রশংসায় ভাসছে রংপুরের পুলিশ প্রশাসন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নাসরিন ও রংপুরের এমন জয়ে আমরা অনেক খুশি। সম্ভবনাময়ী এমন ফুটবলের পাশে সবসময় দাঁড়াবে জেলা পুলিশ।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নারী ফুটবলারের গ্রাম নামে পরিচিত সদ্যপুষ্করিনী ইউনিয়নের পালিচড়া নয়াপুকুর গ্রাম। এই বিভাগের দুই নারী ফুটবলার নাসরিন আক্তার ও রুমি আক্তার প্যাকটিস করতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েন। যেখানে কারও ঘরে একবেলা আহার জোটে তো আরেক বেলা কাটে অর্ধাহারে-অনাহারে, সেখানে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা তো অলীক কল্পনা। তাদের চিকিৎসা যেমন অনিশ্চিত ছিল পাশাপাশি খেলাধুলাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
একদিন পুলিশ সুপার (বিপ্লব) গ্রামটি দেখতে যান। এ সময় তিনি জানতে পারেন দুজন নারী ফুটবলার ইনজুরির কারণে খেলতে পারছেন না। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুজনের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। যোগাযোগ শুরু করেন রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে দুই ফুটবলারের লিগামেন্ট অপারেশন করান। কিছুদিনের মধ্যে নাসরিন সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরে। এরপর রংপুর বিভাগের হয়ে অংশ নেয় বঙ্গমাতা জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে। আজ তার গোলেই রংপুর বিভাগ বিজয়ী হয়। বঙ্গমাতা জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় রংপুরে আনন্দ উদযাপন করছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা।
রংপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) বিপ্লব কুমার সরকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তার গোলে রংপুর চ্যাম্পিয়ন এবং টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোল করে নাসরিন যে গৌরব অর্জন করেছে, তাতে আমি ভীষণ খুশি। তার এমন অর্জনে অনেক শান্তি পাচ্ছি। আমি নিজেও ওর খেলা দেখেছি। তিন দিন আগে রংপুরের টিম আমার সঙ্গে দেখা করেছিল। আজও বলেছি চ্যাম্পিয়ন দল যেন আমার সঙ্গে দেখা করে।’
জানা গেছে, নাসরিনের সঙ্গে আহত অপর খেলোয়াড় রুমি আক্তারের প্রথম অপারেশন হয়েছে, তবে এখনো সুস্থ হয়ে ওঠেনি। তার আরেকটি অপারেশন প্রয়োজন জানিয়ে ডিসি বিপ্লব বলেন, ‘আমি বলেছি ওকে ঢাকায় নিয়ে আসতে। অপারেশনের ব্যবস্থা করব।’
(ঢাকাটাইমস/০৯ডিসেম্বর/এসএস/মোআ)