এক সপ্তাহের তদন্ত, একমাসেও হদিস নেই জালিয়াত চক্রের

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫:৩৭

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দুই রাজস্ব কর্মকর্তা জয়নব বেগম এবং আমির হোসেন সরকারের ইউজার আইডি ব্যবহার করে একটি চক্র ১১টি পণ্য চালানে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। এ ঘটনায় গত ১৫ নভেম্বর ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। কথা ছিল সাত দিনের মধ্যে এ অপরাধে কে বা কারা জড়িত তার প্রতিবেদন জমা দেবে কমিটি। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও রহস্যময় এই ঘটনার এখনো কুলকিনারা খুঁজে পায়নি এই তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটি অভিযোগ করে, আইডি জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত একমাত্র সিএন্ডএফ এজেন্ট প্রত্যয় ইন্টারন্যাশনাল এবং আমদানিকারকরা এর দায় স্বীকার করছে না।

চার সদস্যের তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভুঁইয়া, ডেপুটি কমিশনার মো. মিজানুর রহমান, ডেপুটি কমিশনার ওমর মবিন ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ফারুক আবদুল্লাহ। এই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি অধরায় রয়ে গেল অপরাধী।

কাস্টমস সূত্র জানায়, গত ১৫ নভেম্বর দুই রাজস্ব কর্মকর্তা জয়নব বেগম এবং আমির হোসেন সরকারের ইউজার আইডি ব্যবহার করে একটি চক্র ১১টি পণ্য চালানে জালিয়াতি করে নয়টি পণ্য চালান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাসও করে নিয়ে যায়।

পণ্য আমদানি, বিল অব এন্ট্রি দাখিল, শুল্কায়ন ও খালাস প্রক্রিয়া যথাযথ ছিল কি না তা যাচাই, ব্যবহৃত আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) এর সঠিকতা যাচাই, পণ্য চালান খালাসের অপচেষ্টার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত এবং আনুষাঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি পর্যালোচনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় তদন্ত কমিটিকে।

এদিকে যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভুঁইয়া জানান, আমদানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার শুনানি হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্ত সিএন্ডএফ এজেন্ট দায় স্বীকার করছে না। তবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য চালানটি কিভাবে বের হলো তা জানতে গত ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের টর্মিনাল ম্যানেজারকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। দুই কর্মদিবসের মধ্যে তথ্য জানাতে অনুরোধ করা হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। সেজন্য তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) আওতাভুক্ত বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের আমদানি ও রপ্তানি পণ্য চালানের শুল্কায়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নজরদারি হয়। এর আওতায় প্রত্যয় ইন্টারন্যাশনালের ১১টি বিল অব এন্ট্রি বিষয়ে সিপিইজেড ডিভিশন পর্যালোচনা করে।

উক্ত ১১টি বিল অব এন্ট্রির বিষয়ে রাজস্ব কর্মকর্তা আমির হোসেন সরকারের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ইপিজেড থেকে আটটি বিল অব এন্ট্রির পণ্য খালাস করা হয়। কর্মকর্তার বদলি পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে এই কাজ করা হয়।

অন্য তিনটি বিল অব এন্ট্রির মধ্যে দুটি রাজস্ব কর্মকর্তা জয়নব বেগমের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়েছে। একটি চালান ইতোমধ্যে খালাস হয়েছে এবং অন্যটি খালাস হয়নি। এছাড়া অবশিষ্ট একটি পণ্য চালানের শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি। উক্ত ১১টি বিল এন্ট্রিতে উল্লেখিত আইপি সিইপিজেড কর্তৃক বেপজার অটোমেশন সিস্টেমে যাচাই করে বিল অব এন্ট্রি এবং আইপিতে সংরক্ষিত তথ্যের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়।

আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে এমজিএল কোম্পানি বিডি লিমিটেড দুইটি, গোল্ড শাইন ইন্ডাস্ট্রিজের দুটি এবং গ্রামীণ নিটওয়্যার লিমিটেড, হেলিকন লিমিটেড, শান্তা ডেনিমস লিমিটেড, কুং কেং টেক্সটাইল বাংলাদেশ, অ্যাকটর স্পোর্টিং লিমিটেড, টাইগারকো লিমিটেড এবং ব্রাদার্স প্লাস্টিকের একটি করে চালান রয়েছে। এসব আমাদনিকারকের ১১টি আমাদানি চালান খালাসের দায়িত্বে ছিল চট্টগ্রামের সিএন্ডএফ এজেন্ট প্রত্যয় ইন্টারন্যাশনাল।

কাস্টম হাউসে দাখিল হওয়া বিল এব এন্ট্রি মতে এ বছরের জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। প্রত্যয় ইন্টারন্যাশনালের প্রোপ্রাইটর মো. হাফিজুর রহমান হ্যাপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও নিজেকে নরুল ইসলাম বলে দাবি করেন তিনি। তবে সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য মতে হাফিজুর রহমান হ্যাপির দুটি মোবাইল নম্বর, ছবিসহ যাবতীয় তথ্য একই পাওয়া যায়।

(ঢাকাটাইমস/১৬ডিসেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :