চট্টগ্রাম কাস্টমসে জিম্মি করে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:৪৩ | প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:২৪

বজলুর রহমান নিজেকে পরিচয় দেন কাস্টমস্ কর্মকর্তা হিসেবে। নগরের সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের আগ্রাবাদ দপ্তরে চেয়ার টেবিল নিয়ে নিয়মিত অফিস করছেন তিনি। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের ডেকে নিয়ে ভ্যাট ফাঁকির ফাঁদ পেতে আদায় করছেন মোটা অংকের টাকা। আর তার এসব কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করছেন ওই দপ্তরের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেনসহ একাধিক কর্মকর্তা।

অভিযোগ রয়েছে, ২০০৩ সালে বাদাম বিক্রি ছেড়ে এই দপ্তরে পদচারণা শুরু করে বজলু। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সরকারের এই দপ্তরের ভেতর ও বাহিরের সকল নিয়ম-অনিয়ম আয়ত্ত করে টার্গেটকৃত ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলা শুরু করে। আর এতে অল্প সময়ের মধ্যে কোটিপতি বনে যান তিনি। বজলু সম্প্রতি সরকারের এই দপ্তরে বসে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ঘুষ আদায় করছে এমন ভিডিও দৃশ্য এই প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে। বজলুর রহমান-এর বাড়ি ভোলার সদর থানার ধুনিয়া ইউনিয়নের আলগী গ্রামে।

যদিও সংস্থাটির আগ্রাবাদ সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, বজলুর রহমান এই সংস্থার নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ নন। অফিসিয়ালভাবে তার কোনো পদ-পদবী এবং বেতন-ভাতা নাই। তবে কিভাবে এই দপ্তরে অফিসার পরিচয়ে নিয়মিত অফিস করার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ঘুষ আদায় করছেন এই বিষয়ে বারবার প্রশ্ন করেও এই কর্মকর্তার নিকট কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের এই সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা জানান, টেকনাফ স্থল শুল্ক স্টেশনের এক সময়কার মাফিয়া ডন হিসেবে পরিচিত নুরুল ইসলামের (যিনি দুদকের মামলায় কারাগারে) হাত ধরে ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগে ফালতু (কোনো কর্মচারী নয়) হিসেবে যোগ দেন বজলু।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বজলুর রহমানের নগরীর ইপিজেড কলসিরদীঘির মুখ, হালিশহর বড়পোল ও জেলার পটিয়ার শান্তিরহাট এলাকায় বিভিন্ন নামে ওয়ালটনের অন্তত সাতটি শোরুম রয়েছে। চট্টগ্রামে রয়েছে ভাড়ায় চালিত দুইটি নোহাগাড়ি। একইভাবে ভোলা ও চট্টগ্রামে ১০ সিএনজি অটোরিকশা, শতাধিক রিকশা এবং অন্তত ২০টি ইজিবাইক। ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের আলগী গ্রাম ও ঢাকার মিরপুরে গড়েছেন বহুতল ভবন। নামে বেনামে ব্যাংক ডিপোজিট, কৃষি জমি ও মৎসঘের।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তারা রিটার্নের হাডকপি চেয়ে অফিসে ডেকে পাঠান। পরে ওই রিটার্নে ভুলভাল হিসাব দেখিয়ে ভ্যাট ফাঁকির অজুহাতে অফিসে কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে ঘুষ দাবি করেন। এতে করে ব্যবসায়ীদের চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভ্যাট বিভাগের আগ্রবাদ সার্কেলে আওতাধীন বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর বাইরেও ওই এলাকায় ভ্যাট অনিবন্ধিত প্রায় ১০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়ে গেছে। যার মধ্যে হোটেল, ফার্ণিচার দোকান, মিষ্টির দোকান, পরিবেশক, কমিউনিটি সেন্টার এবং বিভিন্ন মার্কেট সমিতি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক চুক্তিতে ঘুষ নিয়ে ভ্যাট ফাঁকির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই দপ্তরে ভ্যাট নিবন্ধিত বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও বড় বড় কোম্পানির লাখ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলার ফাইল চুক্তিতে গায়েব করার অভিযোগও রয়েছে বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বজলুর রহমান টার্গেট করে বিভিন্ন সময় সিন্ডিকেটভুক্ত রাজস্ব কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ফিল্মি স্টাইলে প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে ব্যবসার হিসাব সংক্রান্ত খাতা-পত্র এবং ক্রয়-বিক্রয় রেজিস্টার বিনা রশিদে জব্দ করে অফিসে নিয়ে যায়। পরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান বা প্রতিনিধিকে অফিসে ডেকে এনে মোটা অংকের ঘুষ দাবি করেন। তবে তাদের দাবি মতো ঘুষ দিতে রাজি না হলে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিভিন্নভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

একাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন কোনো কর্মকর্তা এই দপ্তরে যোগ দিলেই নগরীর অভিযাত কোনো ওই কর্মকর্তাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে পার্টির আয়োজন করা হলো বজলুর প্রথম কাজ। যাতে কোনো কর্মকাণ্ডে কেউ বাধা হয়ে না দাঁড়ান। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে আদায়কৃত ঘুষের ভাগ ভ্যাট কমিশনারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের নিয়মিত পৌঁছে দেন তিনি। যাতে তাকে সুবিধা-অসুবিধায় আগলে রাখেন। বর্তমানে ওই দপ্তরের কোনো ফাইলপত্র নাড়তেও বজলুর পূর্ব অনুমতি নিতে হয়। না হয় একেরপর এক জবাবদিহিতা এবং নাজেহালে দিতে হয় কড়া মাশুল। এসব কারণে ওই দপ্তরের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বজলুর নিকট জিম্মি হয়ে পড়ে।

অভিযোগের বিষয়ে বজলুর রহমান বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা, সবাই তো সব কিছু জানে না। আমি সহযোগিতা করি। এতে ব্যবয়ায়ীরা যা খুশি করেন।

এই প্রসঙ্গে জানতে আগ্রাবাদ বিভাগীয় দপ্তরের উপ-কমিশনার ফাতেমা খায়রুন নূর-এর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, এমন তো হতেই পারে না। জানালেন ভালো হয়েছে, বিষয়টি আমি দেখছি।

(ঢাকাটাইমস/২০ডিসেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :