লালমনিরহাটে কৃত্রিম সার সংকট, হিমশিম খাচ্ছে আলু চাষিরা

মাজহারুল ইসলাম বিপু, লালমনিরহাট
 | প্রকাশিত : ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৫৮

আলু আবাদের শুরুতে লালমনিরহাটে সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বেশি মূল্যে কিনতে হচ্ছে সার। মাঠে মাঠে আলুর বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আমন ধানের কাটা-মাড়াই শেষের দিকে। আলু চাষে প্রয়োজন বেশি সারের। বিশেষ করে জমি তৈরি করার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন প্রকার সার প্রয়োজন।

চাষিরা অভিযোগ করছেন, স্থানীয় বাজারে সারের সংকট। সার কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। ডিলাররা বলছেন বর্তমানে সারের সংকট না থাকলেও মাঠ পর্যায়ের খুচরা বিক্রেতারা মজুদ করে সারের মূল্য বৃদ্ধি করেছেন। সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন খুচরা বিক্রেতারা। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা দায়ী করছেন ডিলারদেরকে। অথচ গোডাউনে পর্যাপ্ত সার মজুদ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলা কৃষিভিত্তিক হওয়ায় জেলার কৃষকেরা বিভিন্ন ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আমন চাষিরা ধান কেটে ওই জমি আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করছেন। এছাড়াও অনেক জমিতে আলুর বীজও রোপণ করতে শুরু করেছেন তারা।

এমনিতেই ডিজেলের দাম বেশি। এর সঙ্গে সার সংকট ও দাম বেশি হওয়ায় আলু চাষে অনিহা প্রকাশ করছেন অনেক কৃষক। জেলায় বিসিআইসির ৫২ জন এবং বিএডিসির ৯১ জন সার ডিলার নিয়োগ করা হলেও ডিলারদের কাছে কৃষকরা চাহিদার তুলনায় ইউরিয়া, টিএসপি, এমও পি ও ফসফেট, ডিও পিসহ সব ধরনের সার পাচ্ছেন না। পেলেও বেশি দাম ধরায় বিপাকে পড়ছেন তারা।

ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাররা ১১০০ টাকা মূল্যের বস্তা টিএসপি সারের দাম নিচ্ছেন প্রায় ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা, ইউরিয়া ৮০০ টাকা মূল্যের বস্তা এক হাজার, এমও পি ৭৫০ টাকার বস্তা ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি করছে। ফলে কৃষকেরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। সার সরবরাহ ঠিকমতো পেলে আলু চাষে আগ্রহী হওয়ার কথা জানিয়েছেন চাষিরা।

কৃষক বজলার রহমান জানান, আমাদের এক দোন মাটিতে আলু আবাদ করতে খরচ হয় ২০-২২ হাজার টাকা। আলু তোলার পরে আমরা এক দোন আলু তুলে বিক্রি করে ৩০-৩২ হাজার টাকা পাই। সারের দাম বাড়তি, তেলের দাম বাড়তি, কীটনাশকের দাম বাড়তি। অনেক কৃষক আলু আবাদ করাই বাদ দিয়েছে।

কৃষক সায়েদ জানান, অভাবি সংসার আমার। আলু আবাদ করতেছি। যে সারের দাম বাড়াইছে ১৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা সারের বস্তা। পটাশ ১২০০-১৪০০ টাকা, ইউরিয়া এক হাজার টাকা। তাহলে কৃষকরা কিভাবে বাঁচবো? হামার তো বাঁচার কোনো পথ নাই। এক দোন মাটিতে ২০-২২ হাজার টাকা খরচ করি। আলুর বাজার ভালো হলে ২৫-৩০ হাজার টাকা পাবো। আর যদি বাজার খারাপ হয় মূলত কিছুই থাকবে না আমাদের।

কৃষক লোকমান হোসেন জানান, এবারে আমি আলু আবাদ করছি প্রায় দুই দোন। দুই দোনে আমার খরচ হবে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু সার যখন নিতে যাই মহেন্দ্রনগর থাকি তখন সার দেখি গোডাউন ভরা। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সারের ট্রাক। যখন দোকানদারের কাছে যাই তখন বলে সারের সংকট। এই ভাবে যে সারের সিন্ডিকেট করতেছে তাহলে আমরা কৃষক বাঁচবো কিভাবে। এভাবে যদি সারের দাম দিয়ে আলু আবাদ করি যখন আলু হয় তখন আলু নেয় না।

কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, আমরা আগাম আলু থেকে শুরু করে শাক সবজি লাউ, কুমড়া, বাঁধা কপি, ফুল কপি- এগুলো আবাদ করি। কিন্তু এবারে যে আলুর চাষে খরচ বেশি। তেলের দাম আগে কিনছিলাম ৬০-৬৫ টাকা, এবার কিনা লাগতেছে ৮০-৯০ টাকা। ঘণ্টায় যে শ্যালো মেশিনে পানি নিলিলাম ৮০ টাকা ৯০ টাকায়, এখন ১২০ টাকা ঘণ্টায় মানতেছে না। সারের এইবারে যে দাম আমি পটাশ সার পাই নাই। পাঁচ-সাতটা দোকান ঘোরার পরে একটা বস্তা পটাশ পাইছি তাও আমাক ১২০০ টাকায় কেনা লাগছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার সার ডিলার ও বিএফএ সভাপতি শামসুল আলম জানান, বর্তমান আমাদের লালমনিরহাট জেলায় বিসিআইসির এবং বিএডিসির ১৪৩ জন ডিলার আছে। আমরা সুনামের সঙ্গে সারের ব্যবসা করে আসছি। আমাদের জেলায় সারের সংকট ছিল না। আমাদের বরাদ্দ ছিল কম। কৃষকদের চাহিদা ছিল বেশি।

শামসুল আলম বলেন, দুইটা সারের সংকট ছিল- একটা টিএসপি ও একটা এমওপি। কিছু অসাধু খুচরা সার ব্যবসায়ী ডিলারের কাছ থেকে সার কিনে নিয়ে গিয়ে তা ঘরে মজুদ করে এবং উচ্চ দামে করে আসছিল।

অন্যদিকে খুচরা সার বিক্রেতা মনির হোসেন জানান, জেলার ডিলাররা গোডাউনে সার মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। আমরা ১০ বস্তা করে সার নিয়ে এসে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করছি।

এদিকে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামীম আশরাফ জানান, লালমনিরহাট জেলায় আমাদের সরকারি ডিলার (বিসিআইসি ডিলার) আছে ৫২ জন। বিএডিসির সার ডিলার আছে ৯১ জন। মোট ১৪৩ জন ডিলার। এই ডিলার পাঁচটি উপজেলায় সার সরবারাহ করে থাকেন।

লালমনিরহাট জেলায় পাঁচ হাজার হেক্টর আলু অন্যান্য শাক সবজি মিলে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে শাক সবজি হয়ে থাকে। এই ডিসেম্বর মাসে বিশেষ করে নন ইউরিয়া সার যেগুলো আছে এই সারগুলো বিশেষ করে শাক সবজি আলু, ভুট্টা, তামাক- এগুলো প্রচুর পরিমানে ব্যবহার হয়ে থাকে।

শামীম আশরাফ সাময়িক সার সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, প্রতিদিন আমাদের সারের দোকান ও ডিলার পর্যায়ে মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা চলছে। অনেকের জরিমানা করা হচ্ছে। আমাদের যে পরিমান সার আছে এই সারগুলো আমাদের মাঠ পর্যায়ে বিতরণের কার্যক্রম চলমান আছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬ডিসেম্বর/কেএম/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :