ফিরে দেখা ২০২১: বছর শেষে বিএনপি সরব রাজপথে

প্রকাশ | ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ২২:৫১ | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২২, ১৩:০১

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

বছরজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ইস্যুভিত্তিক বক্তৃতা-বিবৃতিতে সময় কাটালেও শেষ বেলায় এসে মাঠের কর্মসূচিতে আটঘাঁট বেঁধে নেমেছে বিএনপি। বিশেষ করে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর থেকে রাজপথে সক্রিয় নেতাকর্মীরা। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর আর টানা কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি এক যুগের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তবে চেয়ারপারসনের মুক্তি ও সুচিকিৎসার ইস্যুতে টানা নয় দিন দেশজুড়ে বড় জমায়েত করেছে দলটি।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ শুরু করে বিএনপি, যা শেষ হয় ৩০ ডিসেম্বর। দেশের ৩০ জেলায় টানা এসব জমায়েতে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়লেও পিছপা হয়নি বিএনপি। একাধিক জায়গায় সংঘর্ষে অনেক নেতাকর্মী আহত হলেও শক্ত প্রতিরোধ করেছেন নেতাকর্মীরা।

বিএনপির নেতারা বলছেন, রাজপথের এই কর্মসূচিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন পর‌্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে চান তারা। বিশেষ করে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে শুরু করে সব পর‌্যায়ে  কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও আশার আলো দেখছেন। কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দলের হাইকমান্ডকে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরিতে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অন্য সময়ের চেয়ে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। ইদানীংকার কর্মসূচি সেটাই বলছে। তারা জীবন দিয়ে হলেও চেয়ারপারসনকে মুক্ত করবেন। সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করবে। বিশ্বাস করি সামনের দিনগুলোতেও সক্রিয়ভাবে সবাই মাঠে থাকবে। সেই অনুযায়ী ধাপে ধাপে কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে।’

বছরের শুরুর দিকে করোনার প্রকোপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে  খুব একটা সক্রিয় থাকার সুযোগ হয়নি কোনো দলেরই। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর শুরুতে ঘরোয়া কর্মসুচি এবং পরে ধীরে ধীরে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয়তা বাড়ে। তবে বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ দিনে দলের নেতা ও পেশাজীবীদের সঙ্গে ৪৫ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক অন্যতম।

লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্ত হয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভা করেন। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বড় আকারের এই সাংগঠনিক সভায় আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে মতামত নেয় হাইকমান্ড।

এ বছর দলে চেইন অব কমান্ড ফেরাতে শক্ত অবস্থানে ছিল বিএনপি। নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর গুম নিয়ে বক্তব্যের জেরে স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য মির্জা আব্বাসের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল।

শুধু তাই নয়, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করায় বহিষ্কার করা হয় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরীকে। দলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে বক্তব্য দেয়ায় খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে, নির্বাহী কমিটির বৈঠকে না থাকায় কুমিল্লা সিটির মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে নির্বাহী কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

যদিও চলতি বছরে বিগত দিনের মতো সাংগঠনিক পুনর্গঠনে খুব একটা গতি আনতে পারেনি বিএনপি। চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর ছিল সংগঠন পুনর্গনের বেধে দেয়া সময়সীমা।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পুনর্গঠন চললেও সারা দেশের ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৫টিতে কমিটি করা গেছে। এর মধ্যে চলতি বছর কমিটি হয় ৩০ জেলায়। এর বাইরে কৃষক দল ও জাসাস ছাড়া বাকি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে বেশ আগে। যা নিয়ে সংগঠনের ভেতরে ক্ষোভ রয়েছে।

নেতাদের দাবি, এসব সংগঠনের ৮০ ভাগের বেশি জায়গায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন শেষ।

এই বছরে ঢাকার দুই মহানগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল মহানগর নতুন কমিটি দিতে পেরে কিছুটা স্বস্তিতে আছে দলের হাইকমান্ড।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দলের জন্য নিবেদিত কর্মীদের সামনে আনা হচ্ছে। বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য সবাই প্রস্তুত। বাকি সময়ের মধ্যে সর্বত্র যাতে নতুন নেতৃত্ব পাওয়া যায় সেজন্য কাজ চলছে।’

অন্যদিকে অন্যান্য খাতের মতো করোনা বিএনপিতেও হানা দিয়েছে। করোনার শুরু থেকে চলতি বছর পর‌্যন্ত মহামারিতে চার শতাধিক নেতাকর্মীকে হারিয়েছে বিএনপি।

করোনায় প্রাণ হারানোদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, রুহুল আলম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ হক, ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, কুমিল্লা বিভাগ সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান উল্লেখযোগ্য।

বিএনপির দাবি, সারা দেশে তাদের ৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বিদায় বছর।

এদিকে জোটের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের গুঞ্জন ছিল বছরজুড়ে। দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী খেলাফত মজলিস ও জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের জোট ছাড়ার মধ্য টানাপোড়েন প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে।

গত ১৪ জুলাই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। ১ অক্টোবর বিএনপি জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস।

 

দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে খালেদার অসুস্থতা

দেশে করোনার প্রকোপ শুরুর পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর দফায় দফায় বেড়েছে তার মুক্তির মেয়াদ। কিন্তু ক্রমে তার অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে জোর চেষ্টা চালায় পরিবার। অন্যদিকে রাজপথে এ নিয়ে কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

কিন্তু একাধিকবার আবেদন করলেও তাতে সাড়া মেলেনি। উল্টো ক্রমেই খালেদার অসুস্থতা বাড়ায় বিএনপিতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখের সমস্যার সঙ্গে সবশেষ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার খবর দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সবশেষ ১৩ নভেম্বর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বলে ২৮ নভেম্বর খবর দেন চিকিৎসকরা। তারা জানান, খালেদা জিয়ার এই মুহুর্তে যে চিকিৎসা দরকার তা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির কিছু সেন্টার আছে। যদিও বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো ইতিবাচক সাড়া মিলেনি।

(ঢাকাটাইমস/৩১ডিসেম্বর/বিইউ/মোআ)