প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনা ও লুঙ্গি পরা মোয়াক্কেলের আদালতে প্রবেশ

প্রকাশ | ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ২২:৫৮

অ্যাডভোকেট আবু তালেব

পনের দিন ছুটির পরে আজ (রবিবার) ছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রথম কর্মদিবস। গত পরশুদিন শপথ গ্রহণকারী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মহোদয়কে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের পক্ষ হতে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। স্বভাবতই  মাননীয় প্রধান বিচারপতির আদালত কক্ষ ছিল জনাকীর্ণ ও তিল ধারণের জায়গা খুঁজে পাওয়া কষ্টকর ছিল।

সেখানে যেতে গেট অতিক্রম করছি। পাশে একজন ক্লার্ক তার সিনিয়রের মোয়াক্কেল তথা একজন বিচারপ্রার্থীকে নিয়ে আদালত ভবনের অন্য কক্ষে যেতে চাচ্ছেন। গেট দারোয়ান তাকে আটকে দিলেন। কারণ তিনি লুঙ্গি পরিহিত। তখন আমি বললাম যে, এই লুঙ্গি পরিহিত মানুষদের জন্যই আমরা প্যান্ট, শার্ট আর কোট-টাই পরার সুযোগ পেয়েছি। তিনি সম্মানিত মোয়াক্কেল ও এই আদালতের একজন বিচারপ্রার্থী। তাকে ঢুকতে দিন। গেটম্যান আমাকে সম্মান করে তাকে ঢুকতে দিলেন।

চিন্তা  করলাম যে, সবাইতো ভিআইপিদের সাথে ছবি তুলে ধন্য হন। দেখি আমি এই ভিআইপির সাথে ছবি তুলতে পারি কি না। তাকে নিয়ে আমি ছবি তুলে ফেসবুকে দেব এ মর্মে সম্মতি চাইলে তিনি আনন্দে আত্মহারা। বোঝানোর ভাষা খুঁজে পাওয়া সত্যি অসম্ভব। আমারও মন হতে ভালো লেগেছে তার হাসি। তার অভিব্যক্তি-যেখানে কুটিলতার লেশমাত্র ছিল না।

পরে মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের আদালত কক্ষে ভিড়ের কারণে ঢুকতে না পেরে আড্ডা দিলাম বাহিরে। সেখানেও কিছু ছবি তুললাম। বন্ধুদের সাথে। এখানে আমরা সবাই বন্ধু। কেউ সিনিয়র বন্ধু, কেউ সমবয়সী বন্ধু, কেউ আবার জুনিয়র বন্ধু। কিন্তু সবাই বিজ্ঞ বন্ধু (Learned friends)।

একবার মাননীয় বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিয়ার আদালত কক্ষে আমাদেরই একজন বিজ্ঞ বন্ধু এই মর্মে মেনশন করলেন যে, আমি ব্যারিস্টার অমুক সিনিয়র অ্যাডভোকেটের পক্ষে মেনশন করতে চাই। মাননীয় বিচারপতি তখন আমাদের সে বন্ধুকে বললেন যে, ‘আমি এখন যা বলব আপনি আমার সাথে ঠিক তাই বলবেন।’ তখন তিনি বললেন যে, "I beg to mention on behalf of my learned Senior friend X।’ তিনি আরও যোগ করলেন যে, আমাদের এখানে সবাই বিজ্ঞ আইনজীবী আর আপনারা সবাই বিজ্ঞ বন্ধু।

যাই হোক, মাননীয় প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পরে তার খাস কামরায় গিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ পেলাম শাহ মঞ্জুরুল হক  স্যারের উছিলায়। অনেকেই ছবি তুলেছেন সেখানে। আমিও এসেছি ছবিতে কিন্তু আমার মোবাইলে ছবি তুলিনি। মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় দেখলাম আমাকে চিনলেন। ভালো লাগল এই শুনে যে ‘তোমাকে আমি চিনি।’ আমি শুভেচ্ছা জানানো ও দুঃখ প্রকাশ দুটোই করলাম।

তার নিয়োগের জন্য শুভেচ্ছা জানালাম। আরও বললাম যে, স্যার আমার বিজ্ঞ সিনিয়র বিচারপতি মো. মমতাজউদ্দিন আহমেদ স্যার ও আপনাদের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের মামলায় আমার সুযোগ হয়েছিল আপনাদেরসহ সিনিয়র স্যারদের সহযোগিতা করার। সেই ২০০৮ ও ২০০৯ সনে। কিন্তু আপিল বিভাগে ২০২১ সনেও  এনরোলমেন্ট 'Standover'. স্যার বললেন , যাক আগামীবার হবে। চিন্তা করো না।

ভালো লেগেছে সবকিছু। দেখা যাক সকালের সূর্য্য দিনের পূর্বাভাস দেয় কি না। আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে বছর ও দিন শুরু। আলহামদুলিল্লাহ।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট