ওমিক্রন মোকাবেলায় বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?

প্রকাশ | ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৩৪ | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:৪৬

শাহাবুদ্দিন শুভ

আমাদের পাশের দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে কোভিডের দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে প্রায় ৫১%, শুধু মুম্বাইতেই বৃদ্ধি ৩৪%। ভারতে কোভিডের দৈনিক সংক্রমণের দিক থেকে ফের এক নম্বরে চলে এলো মহারাষ্ট্র। অন্যদিকে আমাদের দেশের সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাইনস্টিটিউট-আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর গণমাধ্যমকে  বলেছেন, আগামী তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশেও ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।  কেন তারা এমন ধারণা করছেন  তা ব্যাখ্যা করে ডা. আলমগীর বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলে এখনও ডেল্টা বেশি  কিন্তু ওমিক্রন সেটা সারপাস করে যাবে।  

গত দুই বছর আমরা যেটা খেয়াল করেছি, ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়ানো তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সেটি আমাদের এদিকে আসে।’ ‘ওসব দেশে অনেক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যে অসুখের ইনকিউবেশন পিরিয়ড থাকে, সেগুলো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ঠেকানো যায় না। আসাটা দেরি করানো যায় মাত্র। যখন ওদিকে কমতে শুরু করবে, তখন আমাদের এদিকে হয়তো বাড়বে।’ তাহলে ভারতে যেভাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তা কীভাবে বিশ্লেষণ করা হবে। আমরা এর আগের ২ ধাপেও দেখেছি ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে। 

আসলেই কি আমাদের দেশে ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়ানোর তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সেটি এদিকে আসে। ইতিমধ্যে আমাদের দেশেও ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তবে গত কয়েক দিনের করোনায় আক্রান্তের তথ্য যদি দেখে নেই তাহলে সহজেই বুঝা যাবে আমাদের দেশের অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে। দেশে করোনায় মৃত্যু, নতুন রোগী ও পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল আটটা থেকে মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত) করোনায় আক্রান্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৭৭৫ জন। মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগের দিন করোনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছিল। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন ৬৭৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ১৯ হাজার ৮৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

এই কয়েকদিনের তথ্য যদি একটু দেখে নেই- ১ জানুয়ারি ২০২২ সালে দেশে মোট ল্যাব-টেস্ট হয়েছে ১৫,২১৪ জনের, যার মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭০ জন, শতাংশের হিসেবে ২,  ২ জানুয়ারি ২০২২  মোট ল্যাব-টেস্ট ১৯,১৩০, যার মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫৭ জন, শতাংশের হিসেবে ৩ এবং ৪ জানুয়ারি, ২০২২ এ মোট ল্যাব-টেস্ট হয়েছে ১৯,৮৩৮, যার মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭৫ জন, শতাংশের হিসেবে আক্রান্তের হার ৪ শতাংশ। এই তথ্য থেকেও সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে আমাদের দেশেও অন্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। 

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যদি ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের কিছু তথ্য নিয়ে তুলনা করি তাহলে হয়তো বিষয়টি আরেকটু পরিষ্কার করা যাবে।  ২৫ অক্টোবর, ২০২০ সালে আমাদের দেশে ১১,১০৩ জনের পরীক্ষা করার পর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১,৩০৮ জন যা শতাংশের হিসেবে ১২, মে ১৯,২০২১ মোট ল্যাব-টেস্ট করা হয়েছে ১৯,৪৩১ জন এবং আক্রান্ত হয়েছিলেন ১,৭৩৯, শতাংশের হারে তা ৯ ভাগ।  ৪ জানুয়ারি, ২০২২-এ মোট ল্যাব-টেস্ট হয়েছে ১৯,৮৩৮, যার মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭৫ জন, শতাংশের হিসেবে আক্রান্তের হার ৪ শতাংশ। অন্যদিকে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখতে পাব ২৫ অক্টোবর ২০২০ সালে  ৯১০ জন, ৩ মে ২০২১ সালে আক্রান্ত ৩,৯৯০ জন এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪,৭৫৯।  দ্বিতীয় ঢেউয়ের ৮ দিনেই ছাপিয়ে গেল কলকাতা, রাজ্যে দৈনিক আক্রান্ত বেড়ে ৯,০৭৩।

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার কলকাতায় দৈনিক সংক্রমণ ছিল ৯১০। এক সপ্তাহে তা বাড়ল ১,১৪৬ শতাংশ। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর প্রকাশিত বুলেটিন জানাচ্ছে, মঙ্গলবার রাজধানী শহরে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা ৪,৭৫৯। প্রসঙ্গত, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় গত ৩ মে কলকাতায় দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা পৌঁছেছিল ৩,৯৯০-এ। তৃতীয় ঢেউয়ের অষ্টম দিনেই সেই রেকর্ড ভেঙে গেল।

৫ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী আমাদের পার্শ^বর্তী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে কোভিডের দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে প্রায় ৫১%, শুধু মুম্বাইতেই বৃদ্ধি ৩৪%। দেশে কোভিডের দৈনিক সংক্রমণের দিক থেকে ফের এক নম্বরে চলে এলো মহারাষ্ট্র। এরই সঙ্গে একদিনে মহারাষ্ট্রে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ল প্রায় ৫১ শতাংশ। সোমবার মহারাষ্ট্রে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ১৬০ জন। তবে মঙ্গলবার এক ধাক্কায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৬৬ জন। মুম্বাই শহরেও সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার ৩৪ শতাংশ সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মুম্বাইয়ে মঙ্গলবার মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৮৬০। আক্রান্তের ৮৯ শতাংশ উপসর্গহীন বলেও প্রশাসন জানিয়েছে।

একই সঙ্গে মহারাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মুম্বাইয়ের কোভিড বুলেটিন অনুসারে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৮৩৪ জন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। যার মধ্যে ৫২ জন রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়েছে।

হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেন, ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের এত তথ্য কেন লেখায় উল্লেখ করা হলো। কারণ আগের যে কয়েকটি ওয়েভ আমরা দেখেছি ভারতে যে হারে পাল্লা দিয়ে আক্রান্ত, মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ঠিক সেভাবেই আমাদের দেশেও আক্রান্তের ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।  তাহলে কি আমরা ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়ানোর তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সেটি আমাদের এদিকে আসবে বলে মনে করে বসে থাকব, নাকি ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নেওয়া শুরু করব।  

এর আগেও কয়েকবার সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারা এবং সমন্বয়হীনতার জন্য আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি দেখেছি।  করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন থেকে সুরক্ষায় ১৫ দফার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।  এই নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে ওমিক্রন ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হবে। 

লেখক: প্রেস সেক্রেটারি টু ড. রেজা কিবরিয়া।
সদস্য (দপ্তর), গণঅধিকার পরিষদ ।