চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা লালমনিরহাটের চাষিদের

মাজহারুল ইসলাম বিপু, লালমনিরহাট
 | প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:০৬

দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন লালমনিরহাটের দু দফায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা। তিস্তা ও ধরলার কৃষকরা মহাজনের কাছে ঋণ নিয়ে জমিতে আবার ফসল ফলানোর চেষ্টা করছেন। আগস্ট ও অক্টোবর মাসের বন্যার পানিতে আমন ধান, আগাম আলুসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে যায়। অনেক জমিতে লাগানো বীজ পচে যায়। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় চাষিদের। কৃষি বিভাগ চাষিদের প্রণোদনার কথা বললেও তাদের ভাগ্যে জুটেনি কোন সরকারি সাহায্য সহযোগিতা। তিস্তা নদীর বাঁধসহ সরকারি সাহায্যের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।

লালমনিরহাটে গেল আগস্ট ও অক্টোবর মাসে দুই দফা বন্যায় তিস্তা ও ধরলা নদীসহ বিভিন্ন ছোট বড় নদ নদীর বিস্তীর্ণ জমিতে বন্যার প্রভাব পড়ে। চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পানিতে ফসলের ১৫৬১ হেক্টর আবাদি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস জানায়, জেলায় আমন, আউশ, ভূট্টা, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৪ হাজার ৩১৬ জন কৃষক। এখন পানি শুকিয়ে জেগে উঠেছে চর। কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো এখন অনেকে চরা সুদে ঋণ নিয়ে চরাঞ্চলে গম,আলু,বোরা ধান, কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ শুরু করলেও অনেকে ভুগছেন অর্থ সংকটে। জেলায় ৪৪ হাজার ২৬০ জন কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হলেও দেখা দিয়েছে বীজ সংকট। কোথাও বীজ মিললেও দামে মিলছে না। বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বেশির ভাগ কৃষক।

তিস্তা নদীর বাঁধ, কৃষি সহায়তাসহ প্রণোদনার দাবি করছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। এবারে জেলায় ৯৬ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষক মাহবুবর রহমান জানান, এই বন্যায় আমার প্রায় ১০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। যে আবাদ করছি, সব বন্যায় ডুবে গেছে। এইগুলো আমরা পাইনি, ঋণ নিয়ে করছি, আমরা এখন ঋণগ্রস্ত।

তিস্তা চরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত আশিকুল জানান, শেষ সময়ে প্রচুর বন্যা হলো। ঋণ নিয়া একনা আবাদ করছি তারপর বন্যায় প্রচুর ক্ষতি হয়া গেল।

তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষক পলাশ জানান, এমন বড় বন্যা আমরা জীবনেও দেখিনি। ১০ মণ ধানও পাইনি ৭/৮ বিঘা জমিতে। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আমার ক্ষতি হয়েছে। সারের দোকানে টাকা পায়। মানুষের কাছে ঋণ করে আবাদ করছিলাম ধান।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ জানান, গত রোপা আমন মৌসুমে আমাদের লালমনিরহাট জেলায় ৮৬ হাজার ৪২৫ হেক্টর যে আবাদ হয়; উজানের ঢল ও অতি বৃষ্টির কারণে আমাদের ১ হাজার ৫৬১ হেক্টর জমি আমাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়। সেই ক্ষয়ক্ষতিকে পোষানোর জন্য সরকার যে প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের জন্য ৪৪ হাজার ২৬০ জন কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়। চলামান যে মৌসুম রয়েছে আমাদের রবি মৌসুমে এখানে প্রায় ৯৬ হাজার ৫২৬ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা বিপরীতে আমাদের বোরো তামাক, আলু, ধান গম সরিষাসহ আলু সব মিলে আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে, সে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গিয়ে আলু, সরিষা, বাদাম বিভিন্ন জাতের শাক সবজির আবাদ চলমান রয়েছে। তারা ক্ষতি পুশিয়ে নিয়ে আগামীতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হবে।

(ঢাকাটাইমস/৯জানুয়ারি/এলএ/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :