কী অপরাধ ছিল নির্ঘুম রাত কাটানো সুরভী লঞ্চের যাত্রীদের?

প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ২১:১৭ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২২, ০০:৪৮

বোরহান উদ্দিন

জীবন বাঁচাতে আতঙ্কিত হয়ে ৯৯৯ ফোন করা, ফায়ার সার্ভিসকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা যাত্রী এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগে সুরভী-৯ লঞ্চের যাত্রা বাতিল করেছে বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চের যাত্রা বাতিল। আমার প্রশ্ন, কয়েক দিন আগে অভিযান-১০ লঞ্চের ট্রাজেডির পর থেকে নৌপথের যাত্রীরা স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কের মধ্যে আছে। যদিও এমন ঘটনা আর কখনো নৌপথে ঘটেনি। যে কারণে শনিবার রাতে সুরভী-৯ লঞ্চটির ইঞ্জিনের ওখান থেকে ধোঁয়া দেখে যাত্রীদের আগুন আতঙ্ক পেয়ে বসে। যদিও পরে জানা গেছে দুই ইঞ্জিনের মধ্যে একটি চলার কারণে সাইলেন্সার বেশি গরম হওয়ায় ধোঁয়া বের হয়েছে। কিন্তু জনে জনে ছড়িয়ে পড়ায় আগুন আতঙ্কে যাত্রীরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। একজন ৯৯৯ এ ফোন করে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা চান। সেখান থেকে পুলিশ হয়ে ফায়ার সার্ভিস পর্যন্ত খবর পায়। লঞ্চে যোগাযোগ করে তারা এগিয়ে আসেন। একপর্যায়ে লঞ্চটি মনোহরপুর এলাকায় বন্ধ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

যাত্রীদের কেউ কেউ ধোঁয়ার ছবি তুলে ফায়ার সার্ভিসের লোকদের দেখান। কেউ ফেসবুকেও শেয়ার করেন। যা পছন্দ হয়নি লঞ্চের স্টাফদের। তখন থেকেই এমন যাত্রীদের চিহ্নিত করে রাখে তারা। পরে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লঞ্চটি রাতে আর চলতে দেওয়া হয়নি। অবশ্য যাত্রীদের নিরাপদে বরিশাল পৌঁছে দিতে অন্য একটি লঞ্চ ঘটনাস্থলে আনার ব্যবস্থা করা হয়। তবে আগুন না লাগার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আর যাত্রীরা অন্য লঞ্চে যাননি।

লঞ্চে আমার পরিচিত একজন যাত্রী ছিলেন। রাত পৌনে ২টার দিকে হঠাৎ ম্যাসেজ দিলেন লঞ্চে আগুন লেগেছে। শুনে ভয় পেয়ে গেলাম। বিস্তারিত জেনে সব ঠিক আছে শুনে স্বস্তি পেলাম। ওই রাতে বরিশালে সহকর্মী তন্ময় তপুর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে ঘুমিয়ে যাই। কিন্তু সকালে শুনলাম ছবি তোলা, ভিডিও করা যাত্রীদের ব্যাপক মারধর করেছেন লঞ্চের স্টাফরা। শুধু তাই নয়, খবর সংগ্রহ করতে আসা বরিশালের সাংবাদিকদেরও মারধর করেছেন তারা। ভেবে দেখুন, মানুষ কতটা খারাপ মানসিকতা ধারণ করলে এমনটা করতে পারে! জীবন বাঁচাতে মানুষগুলো আতঙ্কে বা গুজবে ৯৯৯ এ কল করায় এমন পরিস্থিতির তৈরি হলেও তো তাদের কোনো করেনি। হতে পারে সকালে বেশি গতিতে লঞ্চ চালানোর কারণে কয়েক হাজার টাকার তেল বেশি খরচ হয়েছে। সুনামও হয়তো কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে। কিন্তু যদি সত্যিই দুর্ঘটনা ঘটত তাহলে পরিস্থিতি কী হতো?

সারারাত মানুষগুলো ঘুমাতে পারেনি টেনশনে। সেই মানুষগুলো ঘাটে আসতেই মারধর করা কোনোভাবে মানা যায়? যাত্রীদের কথা না হয় বাদ দিলাম, সাংবাদিকরা কী ক্ষতি করেছেন? তাদের কেন শারীরিকভাবে মারধর করা হলো? আমার বিশ্বাস লঞ্চ স্টাফদের মধ্যে একজনও যদি মানুষ থাকত তাহলে এমনটা ঘটত না। যাক আপাতত হলেও কিছুটা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করি থানায় অভিযোগগুলো মামলা হিসেবে নেওয়া হবে। এদের প্রত্যেককে ধরে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি।

বিভিন্ন সময় লঞ্চ এবং গণপরিবহনের শ্রমিকদের বেপরোয়া আচরণ করতে দেখা যায়। অভিযান-১০ লঞ্চের স্টাফরা তো সবাইকে আগুনের মধ্যে রেখে নিজেরা পালিয়ে জীবন বাঁচান। সুরভীর স্টাফরা যা করেছেন অভিযানের মতো এটাও অমার্জনীয়। এদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হোক যাতে যাত্রীদের গায়ে হাত তোলার সাহস কেউ না দেখায়।

পরিশেষে বলতে চাই- স্বস্তির লঞ্চ যাত্রা যেন কোনোভাবে টেনশনের যাত্রা না হয়। তাই লঞ্চগুলোর ইঞ্জিনসহ সবকিছু যেন ঠিকঠাক থাকে সেগুলো তদারকি করা হোক।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী