কারাগারে কেমন আছেন পিয়াসা

প্রকাশ | ১০ জানুয়ারি ২০২২, ২৩:০২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

কথিত মডেল ফারিয়া মাহাবুব ওরফে পিয়াসা চার মামলার মধ্যে তিনটি মাদক মামলায় ইতিমধ্যে জামিন পেয়েছেন। কিন্তু আটকে গেছেন একটি হত্যা মামলায়। এই মামলায় জামিন না হওয়ায় বর্তমানে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে বন্দি তিনি। সেখানে কেমন আছেন পিয়াসা? কারাগারের সূত্রমতে, কথিত মডেল পিয়াসা কারাগারে সব সময় স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেন। নিয়মিত নিজের রুটিন অনুসরণ করেন তিনি।

কাশিমপুর মহিলা কারাগারের একটি সূত্র জানায়, পিয়াসা কারাগারের একটি সেলেই থাকেন বেশির ভাগ সময়। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তার। কারাগারে তিনি বই-পত্রিকা পড়ে সময় কাটান। অন্য নারী বন্দিরের সঙ্গে গল্পগুজব করতেও দেখা যায় তাকে।

করোনা মহামারির কারণে বন্দিদের পরিবারের সদস্যদের কারাগারে যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আছে। তাই অন্যদের মতো পিয়াসারও কেউ যান না কারাগারে। তবে সপ্তাহে দুই দিন কারাগার থেকে টেলিফোনে পরিবারের খোঁজ-খবর নেন পিয়াসা। মামলার বিষয়ে আইনজীবীদের পরামর্শও নিয়ে থাকেন। 

কারা সূত্র জানায়, পিয়াসার বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে গুলশান, খিলক্ষেত ও ভাটারা থানায় করা মাদক মামলায় জামিন পেয়েছেন তিনি। গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। এই মামলায় জামিন হয়নি তার। মামলাটির তদন্ত শেষ হয়নি এখনো।

২০২১ সালের ১ আগস্ট রাজধানীর গুলশানের একটি ভাড়াবাসা থেকে বিদেশি মদ, ইয়াবাসহ পিয়াসাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। একই দিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার হন মরিয়ম আক্তার। দুজনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক মামলা হয়।

পরে পিয়াসার বিরুদ্ধে খিলক্ষেত ও ভাটারা থানায় আরও দুটি মাদক মামলা হয়। প্রতিটি মামলায় পিয়াসার মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি।

পিয়াসার বিরুদ্ধে মামলা করার ৫৮ দিন পর আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মহানগর মুখ্য হাকিমের (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। সেদিনই অভিযোগপত্র আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হয়।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মডেল পিয়াসার বিরুদ্ধে আলাদা তিনটি মাদক মামলায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে গুলশান থানায় করা মাদক মামলার অভিযোগপত্রে সিআইডি বলেছে, পিয়াসা মডেলিং পেশার আড়ালে নিয়মিত ক্লাবে যেতেন। ক্লাব থেকে নিয়মিত মদ সংগ্রহ করতেন। পরে এসব মাদকদ্রব্য তিনি ক্লাব ও বাসায় বিভিন্ন পার্টিতে আসা লোকজনের কাছে বিক্রি করতেন।

তবে পিয়াসা কোন ক্লাব থেকে, কার কাছ থেকে কিংবা কী ধরনের মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করতেন, সে ব্যাপারে অভিযোগপত্রে কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, পিয়াসার বাসা থেকে জব্দ করা বিদেশি মদ, বিয়ার, সিসা, ইয়াবা সম্পর্কে সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেননি তিনি।

খিলক্ষেত থানায় করা মাদক মামলায় পিয়াসা ও মাসুদুল ইসলামকে অভিযোগপত্রভুক্ত করা হয়েছে। আর ভাটারা থানার মাদক মামলায় পিয়াসা ও শরিফুল হাসানকে আসামি করেছে সিআইডি। এ দুই মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শরিফুল হাসান ও মাসুদুল মাদক ব্যবসায় জড়িত । তাদের কাছ থেকে ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। তাদের সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রাখেন পিয়াসা।

খিলক্ষেত থানায় করা মাদক মামলায় পিয়াসা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ওনার (পিয়াসা) বিরুদ্ধে তিনটি মাদকের মামলা বিচারিক আদালতে বদলি করা হয়েছে। আর হত্যা মামলাটির তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।’

পিয়াসাকে গত ১ আগস্ট রাতে বারিধারার বাসা থেকে মদ ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন গুলশান থানার মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর গুলশান, ভাটারা ও খিলক্ষেত থানার পৃথক তিন মামলায় তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।

গুলশানে মোসারাত জাহান মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার একজন আসামি পিয়াসা। গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান মামলাটি করেন। এই মামলায় ১৩ সেপ্টেম্বর পিয়াসাকে গ্রেপ্তার দেখানোসহ সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আদালত শুনানির দিন ৩ অক্টোবর ঠিক করেন। ওই দিন তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।

রিমান্ড শেষে ৭ অক্টোবর তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। সেই থেকে কারাগারে আছেন পিয়াসা।

(ঢাকাটাইমস/১০জানুয়ারি/এএ/মোআ)