বিধিনিষেধের মধ্যেও নানা আয়োজনে অসহায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ জানুয়ারি ২০২২, ২৩:৫০

দেশে হুহু করে বাড়ছে করোনা রোগী। ইতিমধ্যে সংক্রমণ হার ১১ শতাংশ ছাড়িয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সভা-সমাবেশে নিষেধ্বাজ্ঞাসহ ১১দফা নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। কিন্তু এরমধ্যেই চলছে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। প্রচার-প্রচারণায় সরগরম নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ মাসের শেষের দিকে আছে ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। একদিকে বিধিনিষেধ অন্যদিকে এমন আয়োজন নিয়ে চলছে সমালোচনা। তবে এসব নিয়ে যেন অনেকটা অসহায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বললেন, ‘আমরা সরকারকে সবধরনের জনসমাগম ও সভাসমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছি। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তো শুধু পরামর্শ আর নির্দেশনাই দিতে পারে, এর বেশি কিছু করার সুযোগ নেই।’

তবে বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্য হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, সরকারকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়বে।

অবশ্য ক্রমেই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে সে কথাই নিজেই বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, রোগীদের হাসপাতালে আসা শুরু হয়ে গেছে। আর এভাবে হাসপাতালে তিন-চারগুণ রোগী হলে বেকায়দায় পড়তে হবে। হাসপাতাল ব্যবস্থা, চিকিৎসক-নার্সদের ওপর চাপ পড়বে, মৃত্যুর হারও বাড়বে।

করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্য হতাশার ও দুঃখজনক। কীভাবে তিনি বলেন নির্দেশনার বাইরে কিছু করার নেই? তাহলে কে করবে? আমাদের অবস্থা তাহলে কী হবে? কোনোভাবে তিনি একথা বলতে পারেন না।’

করোনার ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে কী করা উচিত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা পরামর্শ দিয়েছি। পরে মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। এটা বাস্তবায়নও সরকারকে করতে হবে। সেজন্য ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করতে হবে। সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে মাস্ক পরা ও হাত ধোয়ায়। সামাজিক দূরত্ব পুরোপুরি নিশ্চিত করতে গেলে তখন পাইকারি বাজারঘাট বন্ধ করে দিতে হবে। সেটা হয়তো সম্ভব হবে না। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ কি না সেটাও ভেবে দেখা দরকার।’

দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৯১৬ জন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমিত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার বেড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

এদিকে গত ১ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে চলছে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। অন্যদিকে ৩১ জানুয়ারি হবে ৬ষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন বলছে, বিধিনিষেধের মধ্যেও ভোটগ্রহণ হবে। এদিকে সবচেয়ে বেশি সংক্রমত্মক করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে শনাক্তের সংখ্যাও বাড়ছে। বুধবার নতুন তিনজনসহ এ পর্যন্ত ৩৩ জনের দেহে ওমিক্রনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘যে হারে রোগী বাড়ছে, তাতে ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কিছুটা হয়েছে। দেশে এখন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করোনা রোগীই ওমিক্রনে আক্রান্ত। কাজেই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে বলে অমি মনে করি।’

তার এমন বক্তব্যের সঙ্গেও দ্বিমত করেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনের তথ্য অনুযায়ী ওমিক্রণে আক্রান্ত তো ১ শতাংশও হয় না। সেখানে কীভাবে ১৫ থেকে ২০ শতাংশের কথা বললেন বুঝে আসে না। বিষয়টা এমন না যে দেশের ১০ ভাগ লোক দুর্নীতিতে জড়িত বলে দিলাম। অফিসিয়াল তথ্য ছাড়া কথা বললে জনগণ বিভ্রান্ত হবে। তবে এটা সত্য যে, করোনার সংক্রমণ ঠেকানো না গেলে সামনে ওমিক্রণ আরও বাড়বে।’

(ঢাকাটাইমস/১২জানুয়ারি/বিইউ/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :