নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

সাইফুল ইসলাম, নাটোর
 | প্রকাশিত : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:৫৫

নাটোরের সিংড়া উপজেলার আনন্দনগর-কৃষ্ণনগর এলাকায় ১ কিলোমিটার শাখা নদীতে স্থায়ী বাঁধ দিয়ে সেচে মাছ শিকারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চামারী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মালেকসহ স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মীরা নদী বেঁচে দিয়ে মাছসহ এসব জলজপ্রাণী শিকারের ব্যবস্থা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে চলনবিলে মাছের শূন্যতার পাশাপাশি বিলের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানায়, সিংড়ার অধিকাংশ এলাকা চলনবিলবেষ্টিত। মৎস্য ভান্ডারখ্যাত এই চলনবিলের সাথে রয়েছে আত্রাই নদীর গভীর সম্পর্ক। বছরজুড়ে চলনবিলের লক্ষাধিক কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল ও তেল-সার আনা-নেওয়ায় কাজে এই নদী পথ ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু আত্রাই নদীর শাখা সিংড়া উপজেলার আনন্দনগর ও কৃষ্ণনগরে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীর দুই পাশে মাটির বাঁধ দিয়ে সেচে মাছ শিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন চলনবিলে মাছ শূন্যতা ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হতে বসেছে। অন্যদিকে কৃষকের উৎপাদিত ফসল ও জমি চাষাবাদে তেল-সার আনা নেওয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

নদী সেচ কাজে ব্যস্ত আনন্দনগর গ্রামের রমিজুল ইসলাম ও পরোশ বলেন, তারা এই জায়গা ১০ লাখ টাকা দিয়ে ২০ থেকে ২১ জন গ্রামবাসী ভাগে কিনেছেন। এই অর্থ স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক, কৃষ্ণনগর গ্রামের আব্দুস সালাম ও আলমাস কে দিতে হয়েছে।

নদীতে বাঁধ দিয়ে এভাবে সেচতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন? প্রতি বছরই কেউ না কেউ এই জায়গা কিনে নিয়ে মাছ ধরেন। তারা এবার কিনেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, আনন্দনগর ঈদগাহ মাঠ এলাকায় নদীতে প্রায় দেড় মাস ধরে বাঁধ দিয়ে সেচে মাছ শিকারের প্রস্তুতি চলছে। ফলে কৃষকের চলাচলের একমাত্র নদী পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গরিব মানুষ মরলে কার বা কি আসে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।

স্থানীয় নৌকা চালক মিজান মিয়া বলেন, এখানে বাঁধ দেওয়ার ফলে মানুষকে কষ্ট করে হেঁটে যেতে হচ্ছে। এটা যেন দেখার কেউ নেই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক বলেন, এটা আত্রাই নদী শাখা। সরকারি খাল হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই এই খাল কেনা-বেচা হয়। এবছরও বিক্রি করা হয়েছে। তবে এই কাজের সাথে তিনি জড়িত নন।

আর আব্দুস সালাম বলেন, সরকারি খাল হলেও এখানে কিছু জমি তাদের রয়েছে। তবে এই অর্থ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ভাগ বাটোয়ারা করা হয়।

চামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম বলেন, আনন্দনগর নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের ফলে চলনবিলের প্রায় লক্ষাধিক কৃষকের চলাচল ও কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি তিনি প্রশাসনকে জানিয়ে ছিলেন। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আর নদী সেচে মাছ শিকার করা অবৈধ। তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম সামিরুল ইসলাম বলেন, নদীতে বাঁধ দিয়ে সেচে কেউ মাছ শিকার করলে তা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :