ঘুড়ি দিয়ে মেঘ ছুঁতে চায় পুরান ঢাকাবাসী, বেচাকেনার ধুম
জুমার নামাজ শেষ হতেই বাসায় না গিয়ে শাঁখারীবাজারে এসেছেন শাফাত। সঙ্গে তার দুই বন্ধু রিফাত ও সাকলাইন। উদ্দেশ্য ঘুড়ি ও নাটাই কেনা। পুরান ঢাকার আগাসাদেক রোডের বাসিন্দা শাফাত জানান, পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসবে মাততে তাদের প্রস্তুতি চলছে দুই সপ্তাহ আগে থেকে।
ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে কিশোর শাফাত বলেন, 'নাটাই আগে দুইটা নিছি। আরও দুইটা লাগবো। সুতায় মাঞ্জা দিয়া রাখছি। এখন আসছি ঘুড়ি কিনতে।'
বন্ধুর কথায় সুর মিলিয়ে সাকলাইন বলেন, 'টার্গেট নিছি তিনজনে অন্তত ৫০টা ঘুড়ি কাটুম। সুতায় সেই সেভেলের মাঞ্জা দিয়া রাখছি।'
শাফাত-সাকলাইনদের মতো অনেকেই এসেছেন ঘুড়ি কিনতে। সঙ্গে নাটাই ও সুতো। পৌষের শেষ বিকালে চিল আকৃতির ঘুড়ি দিয়ে মেঘ ছুয়ে দিয়ে চান কেউ কেউ৷ তাই দাম একটু বেশি হলেও রঙিন ঘুড়ি, বড় নাটাই আর টেকসই সুতো কিনতে পিছপা হচ্ছেন না কেউ।
পুরান ঢাকার ইসলামবাগ এলাকা থেকে শাঁখারীবাজারে আসা মো. নাজিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'নাটাই কিনছি এক মাস আগে। বন্ধুরা মিল্লা (মিলেমিশে) মাঞ্জা দিছি। সুতা আনলিমিটেড। আজ মেঘ ধরুম ঘুড়ি দিয়া।'
এভাবেই পৌষ সংক্রান্তিতে সাকরাইনকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে শাঁখারিবাজারে। চলছে ঘুড়ি-নাটাই-সুতো বেচাকেনার ধুম। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শাঁখারীবাজারে ঘুড়ি-নাটাই কিনতে এসেছেন ক্রেতারা। যাদের একটি বড় অংশই কিশোর।
শুক্রবার সকাল থেকে শাঁখারীবাজার এলাকা ঘুরে ঘুড়ি-নাটাই-সুতো বেচাকেনার চিত্র চোখে পড়ে।
আজ বাংলা ১৪২৮ সনের পৌষ মাসের শেষ দিন। পৌষ মাসের ৩০তম দিনটি পৌষ সংক্রান্তি নামে পরিচিত। কোথাও কোথাও মকর সংক্রান্তি হিসেবেও পালন করা হয়। পৌষ সংক্রান্তিতে মূলত নতুন ফসলের উৎসব ‘পৌষ পার্বণ’ উদযাপিত হয়। এ দিনে পুরান ঢাকায় পালিত হয় সাকরাইন উৎসব।
বিকালে উৎসবের আমেজ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চলে ঘুড়ি উৎসব। নগর জীবনে ঘুড়ি ওড়ানোর সময় সুযোগ ওইভাবে হয়ে ওঠে না। তাই অধিকাংশের নেই নাটাই, সুতো। ফলে সকাল থেকেই নতুন নাটাই, ঘুড়ি আর মজবুত সুতোর খোঁজে শাঁখারীবাজারে ক্রেতাদের ভিড়। বিক্রেতারা বলছেন, এই ভিড় গত শুক্রবার থেকেই।
ঘুড়ি বিক্রেতা পলাশ ঢাকা টাইমসকে জানান, সারা বছর প্রদীপ, মোম, আগরবাতি বিক্রি করলেও সাকরাইনকে সামনে রেখে দোকানে ঘুড়ি-নাটাই তুলেছেন। আর বিক্রিও আশানুরূপ।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৮ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ শ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে একেকটি ঘুড়ি। নাটাই বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। আর নানান রঙ আর ধরনের সুতা তো রয়েছেই।
ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/কারই/ইএস