চলে গেলেন মাগুরার ভাষাসৈনিক খান জিয়াউল হক

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ২২:২৪ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ২২:২৭

মাগুরা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

মাগুরার বরেণ্য শিক্ষাবিদ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ভাষাসৈনিক খান জিয়াউল হক ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। তিনি ১৯২৮ সালে ৮ জুন মাগুরার ভায়না গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন মাগুরা এসডিও কোর্টের নাজির আবুল কাশেম খানের ছেলে খান জিয়াউল হক। বাবার চাকরি সূত্রে শৈশব কেটেছে নানা জায়গায়।

ভারতে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে প্রাথমিক লেখাপড়া শেষ করেন খান জিয়াউল হক। যশোর জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, কোলকাতা রিপন কলেজ এবং যশোর এমএম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও বিএ পড়েছেন। এমএম কলেজে পড়ার সময় তিনি পর্যায়ক্রমে ছাত্র সংসদের জিএস ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।

১৯৫২ সালে যশোর এমএম কলেজে ব্যাপক পুলিশি হামলার শিকার হন। তারপর তিনি মাগুরায় চলে আসেন এবং ভাষা আন্দোলনে অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে মাগুরায় মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে পুলিশ খান জিয়াউল হকসহ তিনজনকে আটক করে।

শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে মাগুরা মডেল হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন খান জিয়াউল হক। ১৯৬২ সালে মাগুরা এজি একাডেমিতে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দিয়ে ৪৪ বছর এ পদে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে মাগুরার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।

দীর্ঘ ২২ বছর মাগুরা টাউন হলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এ অঞ্চলের থিয়েটার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এ সময় অসংখ্য নাটকে তিনি অভিনেতা ও নির্দেশক হিসেবে কাজ করেন। ৪৪ বছর মাগুরা সৈয়দ আতর আলী পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে এটিকে মাগুরার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন।

১৯৬৫ সালে মাগুরায় সর্বপ্রথম তিনি স্কাউট আন্দোলনের প্রবর্তন করেন। তার উদ্যোগেই এজি একাডেমিতে শুরু হয় মাগুরা দুধ মল্লিক বালিকা বিদ্যালয়, মাগুরা আদর্শ কলেজ, তিন নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এছাড়া মাগুরা সরকারি মহিলা কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরিতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বাংলাদেশ স্কাউটসের সর্বোচ্চ সম্মান ‘রৌপ্য ব্যাঘ্র’ (সিলভার টাইগার), সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয় সমাজ কল্যাণ পুরস্কার, নরেন বিশ্বাস পদক, গোলাম মুস্তাফা সম্মাননা, শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক পুরস্কার, আব্দুল হাই গোল্ড মেডেল, হরিশ দত্ত নাট্য পদক, থিয়েটার ইউনিট নাট্য পদক, জেলা শিল্পকলা একাডেমি পদকসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন খান জিয়াউল হক। তার চলে যাওয়ায় মাগুরায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

(ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/কেএম)