নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন: কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৮২ প্রার্থী

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ২২:৫৬

মোমিনুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সিটি নির্বাচনে সাতজন মেয়র ও ১৮২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দিন-রাত এক করে ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে মানুষের কাছে ভোট চাচ্ছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারকে ঘিরেই সাধারণ ভোটার ও গণমাধ্যমের মূল আকর্ষণ।

এই দুই প্রার্থী ছাড়াও সিটি নির্বাচনের ভোটের মাঠে মেয়র পদে লড়ছেন আরো ৫ জন প্রার্থী। এছাড়া ২৭টি ওয়ার্ডের কয়েকটিতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বর্তমান কাউন্সিলররাই জেতার পথে রয়েছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তবে কয়েকটি ওয়ার্ডে দুই ও ততোধিক প্রার্থীর মধ্যে লড়াইয়ের আভাস মিলেছিল নির্বাচনের শুরু থেকেই।

এবারের নির্বাচনে যেসব কাউন্সিলর এগিয়ে রয়েছেন:

১নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক। তিনি এবার ঝুড়ি প্রতীকে লড়ছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রহিম। তার প্রতীক ঘুড়ি। এছাড়া এই ওয়ার্ডে লাটিম প্রতীক নিয়ে লড়ছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানের ছেলে মাহমুদুর রহমান (শামীম ওসমান)।

২নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির ইকবাল হোসেনের সাথে লড়াই হবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ভূঁইয়া রাজুর সঙ্গে। রাজুকে সমর্থন দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমান। ইকবাল লড়ছেন লাটিম ও রাজু লড়ছেন ঘুড়ি প্রতীকে।

৩নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের শাহজালাল বাদল। সাতখুনের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নুর হোসেনের ভাতিজা বাদল সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। তার সাথে যুবলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের লড়াই হবে। বাদল ঠেলাগাড়ি ও তোফায়েল ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

 ৪নং ওয়ার্ডে ত্রিমুখী লড়াইয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই ওয়ার্ডে লাটিম প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসান। জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টারের ছেলে আরিফুল সাংসদ শামীম ওসমানের অনুসারী। তিনি এক সময় সাত খুন মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত ছিলেন। এই নির্বাচনে ঘুড়ি প্রতীকে দাঁড়িয়েছেন আরিফুলের চাচাতো ভাই নজরুল ইসলাম। এছাড়া ঠেলাগাড়ি প্রতীকে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সাত খুন মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের ছোট ভাই নুর উদ্দিন মিয়া। নুর উদ্দিনের পক্ষে নূর হোসেনের অনুসারীরা কাজ করছেন।

৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল। তিনি লড়ছেন ব্যাডমিন্টন প্রতীকে। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আনিসুর রহমান আনিসকে সমর্থন দিয়েছেন সাংসদ শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান। আনিস ঠেলাগাড়ি প্রতীকে লড়ছেন।

৬নং ওয়ার্ডে লড়াই হবে শামীম ওসমানের দুই ঘনিষ্ঠজন মতিউর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম মণ্ডলের মধ্যে। তাদের মধ্যে বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমান ঠেলাগাড়ি ও সিরাজুল ইসলাম ঝুড়ি প্রতীকে লড়ছেন।

৭নং ওয়ার্ডের সদ্য প্রয়াত কাউন্সিলর আলা হোসেন আলার এলাকায় লড়াই হবে মিজানুর রহমান রিপন ও ফজলুল হক জুয়েলের মধ্যে। তারা যথাক্রমে রেডিও এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতীকে লড়ছেন।

৮নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা এগিয়ে থাকলেও তার লড়াই হবে শামীম ওসমান ঘনিষ্ঠ মহসিন ভুঁইয়ার সঙ্গে। রুহুলের প্রতীক করাত এবং মহসিনের লাটিম।

৯নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ইস্রাফিল প্রধান। বিএনপি থেকে শামীম ওসমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। এইবার তিনি করাত প্রতীকে লড়ছেন। তার লড়াই হবে বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি মিষ্টি কুমড়া প্রতীকে লড়ছেন।

১০নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শামীম ওসমান ঘনিষ্ঠ ইফতেখার আলম খোকন অনেকটাই নির্ভার। তার কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তিনি ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

১১নং ওয়ার্ডে এবার নির্বাচন করছেন না বর্তমান কাউন্সিলর জমসের আলী ঝন্টু। তার ছেলে শাহাদাত হোসেন বাবুর সমর্থনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। বাবু ঘুড়ি প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এখানে লড়াই হবে বিএনপির অহিদুল ইসলাম ছক্কু ও আওয়ামী লীগের সাজনু ঘনিষ্ঠ ঠেলাগাড়ি প্রতীকের সাইফুল হাসান রিয়েলের মধ্যে।

১২নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকুর কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। কিন্তু আরেক প্রার্থী সেলিম খানকে একটি সভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। শকু লড়ছেন লাটিম এবং সেলিম লড়ছেন ঘুড়ি প্রতীকে।

১৩নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ঠেলাগাড়ি প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এদিকে মনোনয়ন প্রত্যহারের শেষ দিনে খোরশেদের সমর্থনে সরে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের পদ হারিয়েছেন রবিউল হোসেন।

অভিযোগ রয়েছে, শামীম ওসমানের নির্দেশে তার ঘনিষ্ঠ নেতা রবিউল ইসলাম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এখানে অনায়াসে জেতার পথে মাকসুদুল আলম খন্দকার। কিন্তু খোরশেদের গলার কাঁটা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমর্থিত রেডিও প্রতীকের শাহ ফয়েজ উল্লাহ।

১৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ওসমান পরিবার ঘনিষ্ঠ মো. শফিউদ্দিন প্রধান। শফিউদ্দিন লড়ছেন লাটিম প্রতীকে। শফিউদ্দিন ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ। এখানে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নেতা ঘুড়ি প্রতীকের মনিরুজ্জামান মনির। এই ওয়ার্ডের এলাকাগুলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বসবাস বেশি। হিন্দু ভোটারদের সমর্থন এই ওয়ার্ডে বড় এক ফ্যাক্টর।

১৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের অসিত বরণ বিশ্বাসের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তিনি লড়ছেন ঝুড়ি প্রতীকে। তবে লাটিম প্রতীকে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জিএম আরমান লড়ছেন তার বিরুদ্ধে। এই ওয়ার্ডেও হিন্দু ভোট ফ্যাক্টর।

১৬নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল নির্বাচন করছেন না। তিনি বন্ধু কবির হোসেনের পক্ষে কাজ করছেন। শামীম ওসমানের সমর্থন রয়েছে ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট প্রতীকের কবিরের পক্ষে। এখানে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সাবেক প্যানেল মেয়র ওবায়দুল্লার ভাতিজা রিয়াদ হাসানের সঙ্গে। রিয়াদ লড়ছেন ঘুড়ি প্রতীকে।

১৭নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবুর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ঘুড়ি প্রতীকের এই প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন আছে শামীম ওসমানের। তার বিরুদ্ধে ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট প্রতীকে লড়ছেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কমিশনার অলিউদ্দিন ভুঁইয়া।

১৮নং ওয়ার্ডে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বর্তমান কাউন্সিলর কবির হোসাইনের সঙ্গে মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নার সঙ্গে। মুন্নার সাথে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমানের সমর্থন রয়েছে। কবির লড়ছেন ঠেলাগাড়ি এবং ঘুড়ি প্রতীকে মুন্না লড়ছেন।

১৯নং ওয়ার্ডে লড়াই হবে বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের ফয়সাল সাগরের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ গাউসিয়া কমিটির সভাপতি মোখলেছুর রহমান চৌধুরীর সাথে। মোখলেছুর আজমেরী ওসমানের ভগ্নিপতি ইফতেখায়রুলের আত্মীয়। এগিয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থন আছে সাগরের পক্ষে। সাগর লড়ছেন করাত প্রতীকে এবং মোখলেছুর লাটিম প্রতীকে লড়ছেন।

২০নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির গোলাম নবী মুরাদের সঙ্গে লড়াই হবে বিএনপির আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ শাহেন শাহ’র। শাহেন শাহ সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তিনি লড়ছেন করাত প্রতীকে। মুরাদ লড়ছেন লাটিম প্রতীকে।

২১নং ওয়ার্ডে জিতবেন বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির হান্নান সরকার। তার প্রতিদ্বন্দ্বী শাহিন মিয়া তেমন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নন। হান্নান লড়ছেন রেডিও প্রতীকে এবং শাহীন ঘুড়ি প্রতীকে লড়ছেন।

২২নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির সুলতান আহমেদ ভূঁইয়ার সঙ্গে লড়াই হবে খান মাসুদের সাথে। খান মাসুদকে সমর্থন দিচ্ছে ওসমান পরিবার। অন্যদিকে মহিলা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইশরাত জাহান খান স্মৃতি লিপি ওসমানের সমর্থনে লড়ছেন।

২৩নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ ওসমান পরিবারের সমর্থনে লড়ছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগরের সভাপতি আবুল কাউসার আশার সঙ্গে। আবুল কাউসার আশা বিএনপির সাবেক সাংসদ ও মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের ছেলে।

২৪নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর জাতীয় পার্টির নেতা আফজাল হোসেনের সঙ্গে লড়াই হবে মোহাম্মদ খোকন ভেন্ডারের সঙ্গে। পারভীন ওসমানের সমর্থনে এগিয়ে আছেন আফজাল।

২৫নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর এনায়েত হোসেনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তার বিরুদ্ধে আছেন সাইদুর রহমান লিটন।

২৬ নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সামসুজ্জোহারই জয়ের সম্ভাবনা বেশি। এখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ার হোসেন বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদের ভাই।

২৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামরুজ্জামান বাবুল মারা যান প্রায় ১০ মাস আগে। এখানে তার ভাই প্রার্থী হলেও লড়াই হবে সিরাজুল ইসলাম ও আলমগীর মিয়ার মধ্যে। সিরাজুল লড়ছেন লাটিম প্রতীকে, অন্যদিকে আলমগীর ঘুড়ি প্রতীকে লড়ছেন।

১,২,৩ সংরক্ষিত কাউন্সিলর মাকসুদা মোজাফফর এবং ৪, ৫, ৬ সংরক্ষিত কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম নিজ নিজ ওয়ার্ডে এগিয়ে আছেন। ৭, ৮, ৯ সংরক্ষিত কাউন্সিলর মোসাম্মাৎ আয়শা আক্তার দিনার এবার লড়াই হবে তাসনুভা নওরিন ভুঁইয়ার সঙ্গে। ১০, ১১, ১২ সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিনোয়ারা বেগম ও নূপুর বেগমের লড়াই হবে।

১৩, ১৪, ১৫ ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর শারমীন হাবিব বিন্নী ও পপি রানী সরকারের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। গতবার অল্প ভোটে হেরেছিলেন পপি রাণী। এইবার তার ভালো অবস্থান রয়েছেন। ১৬, ১৭, ১৮ সংরক্ষিত কাউন্সিলর আফসানা আফরোজ বিভা এগিয়ে আছেন। তবে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সানজিদা আহমেদ জুয়েলী। ১৯, ২০, ২১ সংরক্ষিত কাউন্সিলর শিউলি নওশাদ ও মায়ানুর বেগমের লড়াই হবে। ২২, ২৩, ২৪ সংরক্ষিত কাউন্সিলর শাওন অংকন ও শাহনাজ ভুঁইয়ার লড়াই হবে। ২৫, ২৬, ২৭ সংরক্ষিত কাউন্সিলর হোসনে আরা বেগম ও সানিয়া আক্তারের লড়াই হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/এলএ)