কলেজ ঘেঁষে ইটভাটা, বিপাকে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ১২:৪২

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই স্থাপিত হয়েছে ইটভাটা। ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও ইটবহনকারী ট্রাক চলাচলের শব্দে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পড়ালেখার সুস্থ পরিবেশ না থাকায় অসুস্থ হয়ে প্রায়ই শিক্ষার্থীরা কলেজে অনুপস্থিত থাকছেন। এমন অভিযোগ দিলেন মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। টাঙ্গাইলের সখীপুরের পলাশতলী এলাকায় ‘পলাশতলী মহাবিদ্যালয়’ ঘেঁষে ‘মিতালি ইটভাটা’ নামে ওই ভাটা স্থাপনের চিত্র দেখা গেছে।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামে ২০০০ সালে পলাশতলী মহাবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেসময় ভালোভাবেই চলছিল শিক্ষা কার্যক্রম। কিন্তু ২০১০ সালের দিকে মহাবিদ্যালয়টি ঘিরে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ‘মিতালি ইটভাটা’ নামে ওই ভাটাটি তৈরি করা হয়। ভাটাটি চালুর পর থেকে ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও ভাটার ট্রাকসহ বিভিন্ন যন্ত্রের বিকট শব্দে ক্লাসে বসে থাকা যাচ্ছে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থীরা কলেজে উপস্থিত হচ্ছে না। আবার অনেকেই একদিন উপস্থিত হলে পরেরদিন আর তার খবর থাকে না। এমতাবস্থায় চরমভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই মুহূর্তে ভাটাটি বন্ধ করা না হলে ভবিষ্যতে মহাবিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী খোঁজে পাওয়া যাবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভাটাটি বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছেন।

একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলেন, ‘ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও বিকট শব্দে ক্লাসে বসে থাকা যায় না। কালো ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি হয়। অনেক শিক্ষার্থীই প্রতিনিয়ত অসুস্থ হচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী কলেজে আসা বাদ দিয়েছে। আমরা এই ভাটাটি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুক্তি আক্তার, চাঁদনী আক্তার, কাকুলী, শান্তা আক্তারসহ অনেকেই বলেন, ‘ভাটার কালো ধোঁয়া, ধূলাবালি ও ট্রাকসহ অন্যান্য যন্ত্রের বিকট শব্দে ক্লাস করা যায় না। ক্লাসে বসলে মাথা ব্যথা শুরু করে। আবার শ্বাসকষ্ট ও চোখ জ্বলে। বিকট শব্দের কারণে স্যারদের কথাও শোনা যায় না। প্রতিনিয়ত অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আমরা এই ইটভাটাটি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’

মহাবিদ্যালয়টির অধ্যক্ষ আবু সাঈদ বলেন, ‘ইটভাটাটির কারণে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে এই অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে একসময় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে এই মুহূর্তে ভাটাটি বন্ধ করা প্রয়োজন।’

টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে জেলায় মোট ২৮২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১২৯টির পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন রয়েছে, বাকি ১৫৩টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। কিন্তু যেগুলোর অনুমোদন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর ক্ষেত্রেই নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে পরিবেশবাদীদের।

টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর আমরা অনেকগুলো ইটভাটাকে জরিমানা করেছি। এ বছরও আমাদের অভিযান চলবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। যেসব ইটভাটা বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে রয়েছে সেগুলোর ছাড়পত্র বাতিল করা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি/এলএ)