নিয়মনীতির বালাই নেই, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলছে গণপরিবহন

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৪:২২ | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৫৯

কৌশিক রায়, ঢাকাটাইমস

করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রুখতে গত বৃহস্পতিবার থেকে সরকারঘোষিত ১১ দফা নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানার লক্ষ্যে আজ থেকে যত আসন ততো যাত্রী নিয়ে যাত্রীবাহী বাস চলার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না এই নির্দেশনা। নির্ধারিত আসনেরও বেশি যাত্রী নিয়ে চলছে গণপরিবহন। যাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে না হ্যান্ড স্যানিটাইজারও।

শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদগেট, ফার্মগেট ও কারওয়ানবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গণপরিবহনে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নীতি মানছেন না যাত্রীদের অনেকে। অধিকাংশ যাত্রীর মুখেই মাস্ক নেই। কে কেউ আবার মুখের মাস্ক নামিয়ে রেখেছেন থুতনিতে। আবার কেউ মুখ থেকে মাস্ক খুলে পকেটে অথবা হাতে রাখছেন। অনেক গাড়ির চালক ও তাদের সহকারীর মুখেও মাস্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এদিকে অধিকাংশ বাসে যাত্রীদের ঠাসাঠাসি করে উঠাচ্ছেন চালকের সহকারীরা। গাড়িতে ছিট না থাকলেও সিট খালি বলে যাত্রীদের ডেকে গাড়িতে তুলছেন সহকারীরা। গন্তব্যে যেতে যাত্রীরাও উঠে পরছেন পরিপূর্ণ গাড়িতে যেখানে থাকছে না ছিট।

সরকার থেকে নির্দেশনা জারি করে প্রতিটা গাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকার কথা বলা হলেও কোন গাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায়নি।

সাভার থেকে সদরঘাট রুটে চলাচলকারী সাভার পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহকারী নাহিদ হাসান বলেন, অফিস টাইম তাই যাত্রী না নিতে চাইলেও জোর করে গাড়িতে ঠেলে উঠছে। তবে গাড়িতে ওঠার সময় সবাইকে মাস্ক মুখে দেওয়ার কথা বলা দিচ্ছি।

ওয়েলকাম পরিবহনের চালকের সহকারী মুখের মাস্ক থুতনিতে রেখেছেন। জানতে চাইলে মাস্ক টেনে মুখে তোলেন। তারপর বলেন, ‘অনেক সময় মুখে মাস্ক থাকার কারণে দম আটকে আসছিল তাই কেবলই খুলেছি।’

প্রতিটি গাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা থাকালেও কোনো গাড়িতেই পাওয়া যায়নি। কয়েকটি গাড়ির চালক ও তাদের সহকারী জানান, ‘আমাদের কোম্পানি থেকে এখনও কোনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার আমাদের দেওয়া হয় নাই। আমাদের দিলে আমরাও যাত্রীদের দিবো। কেউ কেউ আবার বলছেন, বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার আছে, যাত্রীরা চাইলে দেওয়া হচ্ছে।’

মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে কোনো কোনো যাত্রী রেগে যান। কেউ কেউ বলছেন, মাস্ক আছে সময় হলে পরবো, কেউ বলছেন, আমি মাস্ক পরিনি কিছু হলে আমি বুঝবো, আবার কেউবা বলছেন, মুখে মাস্ক থাকালে দম আটকে আসে। এভাবেই যাত্রীদেরও অযুহাতের কোনো শেষ নেই।

এদিকে বিধিনিষেধ মানাতে সড়ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ধরনের তদারকিও দেখা যায়নি।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ রোধে গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করে। সেখানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, করোনার টিকার সনদ নিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার গ্রহণ, সবধরনের সভা-সমাবেশ বন্ধ এবং স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা জানানো হয়েছে।

গত ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই ১১ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তবে গণপরিবহনের ক্ষেত্রে আজ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নির্দেশনা মেনে চলতে হবে বলে জানায়।

নির্দেশনাগুলো হলো:

১. দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সকল জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

২. ১২ বছরের বেশি বয়সী সকল শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

৩. রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

৪. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

৫. বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

৬. ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেকসংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।

৭. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং-এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টগুলোতে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সকল মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে।

১০. উন্মুক্ত স্থানে সর্ব সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।

১১. কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি/কেআর/এমআর)