আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ফসলি জমিতে ইটভাটা

আজহারুল হক ও ফরিদুল আলম সজীব, ময়মনসিংহ
 | প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ২৩:০৪

সরকারি বিধান রয়েছে আবাসিক এলাকার ৩ কিলো মিটার ব্যাসের মধ্যে কোন অবস্থাতেই ইটভাটা করা যাবে না। আর কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৯৯২ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় জারিকৃত প্রজ্ঞাপনেও এই হুঁশিয়ারি দেওয়া আছে। সরকারি বিধি-বিধানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করতে হবে খনিজ কয়লা। কিন্তু বিধি-নিষেধ না মেনে এমবিবি নামে ড্রাম চিমনীর ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

সম্প্রতি হাইকোর্টের বিচারক এনায়েতুর রহিম ও মোস্তাফিজুর রহমান অবৈধ এ ইটভাটিটি বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ ও সরকারি বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে তিন পাশে ফসলি জমি, ফলজ ও বনজ গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বাড়িঘরের মাঝে গড়ে উঠা অবৈধ ড্রাম চিমনীর ইটভাটায় দিন-রাত অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এ দশা ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার চামুরথা গ্রামে।

প্রতিদিন এমবিবি নামে ওই ইটভাটায় শত শত মন কাঠ পোড়ানো হয় বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা। সরেজমিনে তার প্রমাণও মেলে। কাঠ পোড়ানোর কারণে এই ভাটা থেকে সারাক্ষণ কালো ধোঁয়া বের হয়। ফলে পাশের ক্ষেতের ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে, ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ইটভাটার মালিকরা ইটভাটা স্থাপনে কৃষকের কৃষি জমি, সরকারি হালট, শীলা নদীর সেচের ড্রেইন জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমান অবস্থা দেখে অনেকেই বলছেন, ইটভাটার মালিকরা রাজাধিরাজ। তাদের গায়ে হাত দেয় এমন সাধ্য কার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামটিতে হাজারখানেক পরিবার বাস করে। এরই মধ্যে হাবিবুল্লাহ শেখ নামে এক ব্যক্তি যৌথ মালিকানায় তিন বছর আগে গ্রামের শামছুল হক ফাজিল মাদ্রাসার পাশে, লোকালয়ে, তিন ফসলি জমিতে এমবিবি নামে অবৈধ, অনুমোদনহীন ড্রাম চিমনীর ইটভাটাটি স্থাপন করেন। এরপর থেকেই গ্রামটিতে এখন ঝড়ে যাচ্ছে আম, লিচু, পেয়ারা ও ডাবের গুটি। নষ্ট হচ্ছে শাকসবজি ও ফসলের জমি। মাঝে-মধ্যেই মারা যাচ্ছে কবুতরসহ গৃহপালিত হাঁস-মুরগি। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন গ্রামের বৃদ্ধ ও শিশু ও ইটভাটার পাশের শামছুল হক ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। ইটভাটার পাশে শীলা নদীতে মাছের আধার কমে গেছে। নিরীহ গ্রামবাসী ও কৃষকরা প্রতিবাদ করেও ফল পাচ্ছেন না।

ভুক্তভোগীরা জানায়, ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় সহজেই কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। মালিকরা ভাটার জন্য অন্যের জমি ও সরকারি হালট (রাস্তা) দখল করে নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ইটভাটার মালিক হাবিবুল্লাহ বলেন, ড্রাম চিমনীর ইট ভাটায় কিছু কাঠতো পুড়বেই। আগামী সিজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ভাটা চালু করা হবে।

গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, এ ইটভাটাটি আমাদের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে গেছে। এ ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। দির্দেশনা মোতাবেক ভাটা বন্ধের নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি জরিমানা করা হয়েছে। তারপরেও ভাটা মালিক আইন অমান্য করে ভাটা চালু রেখেছেন। শিগগির অভিযান চালিয়ে ওই ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক ফরিদ আহহেদ বলেন, আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ওই ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৬জানুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :