শীতে বিপর্যস্ত উত্তরের জনজীবন, বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১০:১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

তীব্র শীত জেঁকে বসেছে উত্তর জনপদে। ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছে চারদিক। বইছে হালকা বাতাস। হাড় কাঁপানো শীত আর ঠাণ্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে। হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগী ভর্তির সংখ্যা। ঢাকাটাইমসের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

পঞ্চগড়

তীব্র শীত সবচেয়ে বেশি জেঁকে বসেছে উত্তরের এই জেলাটিতে। হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মানুষের জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যমতে সোমবার সকালে তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত দুই দিনের তুলনায় কম। গত দুই দিন ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি করে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। সামনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যমতে গত পাঁচ দিন ধরে তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে।

কয়েকদিন ধরেই রাত থেকে দিনের অর্ধেক সময় পর্যন্ত গোটা জেলা কুয়াশায় ঢেকে থাকে। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। শীত বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে শীত ও শীতজনিত রোগী ভর্তি বেড়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তাদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধই বেশি। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে ৩৫ হাজার কম্বল বিরতণ করা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও: কনকনে শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে উত্তরের এই জেলার জনজীবন। অসহায় ছিন্নমূল মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে রেলওয়ে হকার্স মার্কেটের কম দামি গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে।

সোমবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন জেলার খেটে খাওয়া মানুষ। বিশেষ করে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। অতিরিক্ত কুয়াশা আর ঠান্ডার কারণে আলু চাষ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। লেটব্রাইট রোগ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

রংপুর

ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও সংপুরে সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। মাঘের শুরুতে এসে স্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা কমছে। আকাশে মেঘ থাকায় গত তিন দিন সূর্যের মুখ খুব একটা দেখা যায়নি। বইছে কনকনে হিমেল হাওয়া। রাতে ঝিরঝির করে পড়ছে কুয়াশার ফোঁটা। তীব্র শীতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী-কর্মজীবী গরিব অসহায় মানুষ।

পীরগঞ্জ উপজেলার কুমারগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক সাইদুর বলেন, কয়েকদিন শীতের তীব্রতা একটু কম থাকলেও গত দুইদিন ধরে শীত অনেক বেড়েছে। আজ সকালে আরও তীব্র। শীতের কারণে রিকশা-ভ্যান চালানো যাচ্ছে না, গা-হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। নাক দিয়ে পানি পড়ছে। শীতের কারণে কম মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে। ফলে যাত্রী পাচ্ছি না। আমাদের আয় কমে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়ে গেছি।

গরম কাপড়ের অভাবে উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলায় খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন মানুষ। আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

দিনাজপুর

হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় উত্তরের এই জেলায় একটু বেশিই শীত অনুভূত হয়। গত কয়েকদিন ধরেই এই জেলায় তাপমাত্রা কমছে। সঙ্গে হিমেল বাতাসের প্রভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

শুধু মানুষজনই নয়, শীতের প্রভাব পড়েছে আলু ক্ষেতের ওপর। কুয়াশায় আলু ক্ষেতে দেখা দিয়েছে লেট ব্লাইট রোগ। প্রয়োজনীয় বালাইনাশক স্প্রে করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছেন না কৃষক।

কুড়িগ্রাম

তীব্র শীতের কারণে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চল, গ্রাম ও শহরের বাসিন্দারা অসহনীয় কষ্টে পড়েছে। অনেক জায়গায়ই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে দরিদ্র মানুষেরা।

শীতের কারণে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন না। সড়কে মানুষের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ভ্যান ও রিকশা চালকরা।

ধরলা নদীর তীরবর্তী ছত্রপুর গ্রামের জমিলা বলেন, ‘যে শীত পড়ছে তাতে বাঁচি থাকা হামার জন্য কষ্ট হয়া গেচে। শীতত খুব কষ্টে আচি বা।’

ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/এমআর