নির্মাণ খাতে অস্থিরতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এফবিসিসিআইয়ের চিঠি

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৪:১৭ | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৪:১৮

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গত পাঁচ থেকে ছয় মাসে অবকাঠামো খাতের কাঁচামালের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে, যা নির্মাণশিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। এ অবস্থায় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাসময়ে সম্পন্ন করতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়ে সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিনের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এরই মধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ এবং উন্নয়নের মহাসড়কে সফলভাবে এগিয়ে চলেছে।

সরকারের ব্যবসাবান্ধব নীতি বিদ্যমান থাকায় ও ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকায় ব্যবসায়ীরা সফলভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারছে। কিন্ত গত পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে, বিশেষ করে গত এক মাসে অবকাঠামো খাতের মূল কাঁচামাল, যেমন রড, সিমেন্ট, পাথর, বিটুমিন, কপার, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, নির্মাণশিল্পের ওপর যা অকল্পনীয় বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে নির্মাণব্যয় এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঠিকাদারদের পক্ষে তাদের চলমান ও আসন্ন প্রকল্পগুলোর কাজ যথাযথ মান বজায় রেখে চুক্তিতে নির্ধারিত মূল্যে সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে দেশের নির্মাণ খাত অপূরণীয় ক্ষতিতে পড়বে এবং বিদেশি ঠিকাদারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বেশিরভাগ স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে গেলে তাদের অর্থায়ন করা দেশের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও খেলাপি ঋণের কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তাই দেশের নির্মাণ খাতে চলমান অস্থিরতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ একান্তভাবে কামনা করেন তারা। এর সঙ্গে দেশের নির্মাণ খাত ও স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ রক্ষায় এফবিসিসিআই কিছু স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ জানিয়েছে।

এছাড়া স্বল্পমেয়াদি সুপারিশে বলা হয়েছে,

১. বিদ্যমান ও আসন্ন সরকারি প্রকল্পগুলো যথাসময়ে সম্পন্ন করার নিমিত্তে অনতিবিলম্বে বাইরের যেকোনো দেশ থেকে রড (এমএস রড) আমদানির অনুমতি দেয়া প্রয়োজন।

২. দরপত্র জমা দেয়ার পর আইনগত কোনো পরিবর্তনের কারণে যদি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পায়, তাহলে ঠিকাদারকে অবশ্যই সেই বর্ধিত ব্যয়ের সমমূল্য প্রদান করতে হবে।

৩. সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়ন করা সব চলমান, আসন্ন (চূড়ান্ত অপেক্ষায় থাকা প্রকল্প) ও ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোয় মূল্যের তারতম্য বিষয়ক ধারা সংযুক্ত করতে হবে।

৪.  ব্যালাস্টের মূল্য মূলত পরিবহন খরচের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ব্যালাস্ট বাংলাদেশে আনার পরিবহন খরচ ব্যালাস্টের মূল দামের দুই থেকে তিনগুণ বেশি। তাই ব্যালাস্টের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কেবল এফওবির ওপর প্রযোজ্য হওয়া উচিত। এজন্য একটি নির্দিষ্ট ট্যারিফও ধার্য করা যেতে পারে, যাতে ব্যালাস্টের ল্যান্ডেড কস্ট আসে।

দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশে বলা হয়েছে,

১. সরকার কর্তৃক অর্থায়িত প্রকল্পগুলোয় বিদেশি দরদাতাদের অংশগ্রহণ জোরালোভাবে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

২. সরকার কর্তৃক অর্থায়িত প্রকল্পসমূহে স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানসমূহকে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ অগ্রাধিকার দিতে হবে।

৩. সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়ন করা সব দরপত্র যতটা সম্ভব ফিডিক-নির্ভর হওয়া প্রয়োজন।

৪. নিয়োগকর্তার অদক্ষতা বা অদূরদর্শিতার কারণে ঘটা বিলম্বের জন্য ঠিকাদারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়ন করা নির্বিশেষে সব দরপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

৫. সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়ন করা সব দরপত্রে ১০ শতাংশ অগ্রিম অর্থ প্রদানের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

৬. দেশের নির্মাণশিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে কনসালটেন্সি খাতে সরকারকে বিশেষ মনোযোগ প্রদান করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/কেআর/এসকেএস)