তাহলে কি ছিটকে পড়লেন তৈমূর?

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ২১:৫৫ | প্রকাশিত : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ২২:১৩

বিএনপির হাইকমান্ড থেকে শুরু করে জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেকেই তার পাশে ছিলেন না। তবুও ভোটে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার। ভোটের আগে প্রচারের পুরো সময় ছিল তার হাঁকডাক। কিন্তু রবিবারের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে তিনি হেরেছেন ৬৬ হাজার ৫৩৫ ভোটের ব্যবধানে।

অন্যদিকে ভোটে লড়তে গিয়ে হারিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকেও তাকে দেওয়া হয়েছে অব্যাহতি। তাই ভোটে হারার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে- দলে আগের মতো কি আর প্রভাব ধরে রাখতে পারবেন তৈমূর আলম? শিগগির কি ফিরে পাবেন অব্যাহতি পাওয়া পদগুলো? না কি বিএনপির রাজনীতির মূল স্রোত থেকে কিছুটা ছিটকে পড়বেন আলোচিত এই রাজনীতিক?

এসব প্রশ্ন ঘুরে ফিরে এলেও তৈমূর আলমের স্পষ্ট জবাব- ‘তৈমূর আলম খন্দকারের পদ-পদবি লাগে না। আমার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে বিএনপি। এটা নিয়ে মরতে চাই।’

অবশ্য কেউ কেউ মনে করছেন, ভোটে জিততে না পারলেও তৈমূর আলম নিজের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ পেয়েছেন। দল কোনোভাবেই পাশে না থাকার পরও ৯২ হাজার ভোট পেয়ে তৈমূর প্রমাণ করেছেন নারায়ণগঞ্জে তার প্রভাব রয়েছে।

কে এই তৈমূর আলম

১৯৫৩ সালে জন্ম নেওয়া তৈমূর আলম খন্দকার নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে একটা অবস্থান তৈরি করেছেন। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যেও বেশ প্রভাব রয়েছে তার। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও ছিলেন একাধিকবার। সবশেষ দলের জাতীয় কাউন্সিলে হয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। হন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। সিটি ভোটে লড়ার কারণে এই দুই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

তৈমূর আলম ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। সেবার বিএনপি সমর্থন দিলেও দলের হঠাৎ সিদ্ধান্তে ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি সরে দাঁড়ান। সেবার আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র হন।

২০১৬ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী করেছিল সাখাওয়াত হোসেনকে। সেবারও মেয়র হন আইভী। তবে এবার বিএনপি অংশ না নিলেও নিজেকে জনতার প্রার্থী দাবি করে মেয়র পদে লড়েন তৈমূর আলম।

এদিকে তার নির্বাচন করা নিয়ে শুরুতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের তার পক্ষে কাজ করতে বাধা নেই এমন ইঙ্গিত দিলে অনেকে নড়েচড়ে বসেন। কিন্তু দুদিন না যেতেই হঠাৎ তাকে উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের অনেকেই তৈমূরের পক্ষে মাঠে নামেননি। কেন্দ্র থেকেও কেউ তার প্রচারণায় অংশ নেননি। তবে প্রচারের সময় দলের লোকজন পাশে আছে এমনটা দাবি করেন তৈমূর। একই সঙ্গে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচনে জয়ী হওয়ারও আশা প্রকাশ করেন।

রাজনীতির বাইরেও একাধিক শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তৈমূর আলম। নিজেকে মজলুম জননেতা দাবি করেন তিনি। বিএনপির জন্য রাজপথের আন্দোলনে যুক্ত হয়ে অনেক মামলার আসামি হয়েছেন তিনি। পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

২০০১ সালে শামীম ওসমানের অফিসে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছিল তৈমূর আলমকে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৈমূর আলমকে বিআরটিসির চেয়ারম্যান পদে বসায়। এ সময় তিনি নিজ এলাকা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অনেক মানুষকে বিআরটিসিতে চাকরি দেন। যে কারণে ওই এলাকায় তার জনপ্রিয়তা আছে। নারায়ণগঞ্জ-২ আসন থেকে সংসদ নির্বাচন করতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও দল মনোনয়ন দেয়নি।

হারের পেছনে যে কারণ দেখছেন তৈমূর

অবশ্য ভোটে হারার পেছনে প্রশাসনিক ও ইভিএম ‘কারচুপির’ কথা বলছেন তৈমূর আলম। তার দাবি, এই ভোটে অংশ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমাকে খেলতে হয়েছে। প্রশাসনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইভিএমের কারচুপির জন্য এ পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। এ পরাজয়কে পরাজয় মনে করেন না তিনি।

তৈমূর বলেন, ‘জনগণের উপস্থিতি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। তারা ভোটটা দিতে পারেনি। মেশিনটা স্লো। ভেতরে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে; না হলে এত ডিফারেন্স হতে পারে না।’ ইভিএম মেশিন ত্রুটিপূর্ণ, স্লো ছিল বলেও দাবি পরাজিত এই প্রার্থীর।

অন্যদিকে নির্বাচনের দিনে সব এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও নারায়ণগঞ্জে ছুটি ছিল না। তৈমূরের ঘনিষ্ঠদের দাবি, পোশাক শ্রমিকদের অনেকেই তাকে ভোট দিত। কিন্তু ছুটি না থাকায় কেউ ভোট দিতে পারেনি।

(ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :