সর্ব রোগের দাওয়াই কালোজিরা

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৩০

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

করোনাভাইরাসের নতুন নতুন প্রজাতির আক্রমণে মানুষ দিশেহারা। কখনও কখনও ভয়ানক হয়ে উঠছে। তাই শরীরে প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর দিকে অনেকেই নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছেন। ভেষজ গবেষকদের মতে, নানা রকমের মশলা করোনানার পাশাপাশি আরও অনেক জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সংক্রমণ আটকাতে পারে।

 

রান্নায় ব্যবহৃত হলুদ, পাঁচফোড়ন, কালোজিরা, গোলমরিচ আদার মতো প্রায় সব মশলাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।

পটাশিয়াম, ফসফরাস ও নানান অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ কালোজিরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে পারে। বিশেষ করে কালোজিরায় থাকা এসেনশিয়াল অয়েল সর্দির মোকাবিলা করতে পারে দ্রুত। কালোজিরা বিভিন্ন রোগেরই মহাঔষধ। বিশ্বজুড়ে প্রাচীনকাল থেকে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কালোজিরায় রয়েছে-ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বো-হাইড্রেট ছাড়াও জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপাদান। কালোজিরায় ক্যানসার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হরমোন, প্রস্রাবসংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক।

 

নিয়মিত কালোজিরা খেলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, একজিমা, এলার্জি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে থাকে। কালোজিরায় ভিটামিন, স্ফটিকল নাইজেলোন, অ্যামিনো অ্যাসিড, স্যাপোনিন, ক্রুড ফাইবার, প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো লিনোলেনিক, ওলিক অ্যাসিড, উদ্বায়ী তেল, আয়রন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।

 

আয়ুর্বেদ মতে, সামান্য কালোজিরা পাতলা কাপড়ে পুঁটলি করে ভাল করে ঘষে শুঁকলে নাক ও গলায় জমে থাকা সর্দি বেরিয়ে যায়। পাবমেডে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে জানা গিয়েছে যে নিগেলা সাটিভা এল (কালোজিরের বিজ্ঞান সম্মত নাম) থেকে যে এসেনশিয়াল অয়েল পাওয়া যায় তাতে ৩৭.৩ শতাংশ প্যারাসাইমিন ও ১৩.৭ শতাংশ থার্মোক্যুইনিয়ন আছে। প্রাণীদেহে পরীক্ষা করে এই উদ্বায়ী তেলের অ্যানালজেসিক ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামাটরি গুণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।

 

বাজারে যে কালোজিরার তেল পাওয়া যাচ্ছে তার ঔষধিগুণ সম্পর্কে যথেষ্ট সম্বন্ধে সন্দেহ থেকে যায়। তাই বাড়ির মশলা হিসেবে যে কালোজিরা থাকে তা সরাসরি ব্যবহার করা উচিত। তেলে ফোড়ন হিসেবে ব্যবহার করার চেয়ে কালোজিরা বেটে ভাতের সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া সর্দি হাঁচি কাশি হলে কাপড়ে পুঁটলি করে ঘষে শুঁকলে ভাল কাজ হয়।

 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে কালোজিরা। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে। এতে করে যে কোনও জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে তোলে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

 

কালোজিরার তেল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন সকালে এক কাপ চায়ের সঙ্গে আধা চা চামচ তেল মিশিয়ে পান করুন।

 

ডায়েটের জন্য কালোজিরা দারুণ কাজ করে। রুটি ও তরকারিতে ব্যবহার করতে পারেন। অনেকেই মধু ও পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে থাকেন। কালোজিরা ওটমিল ও টক দইয়ের সঙ্গে যুক্ত করে খেলে বেশ উপকার পাবেন।

 

লেবুর রস ও কালোজিরা তেল একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের অনেক সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। লেবুর রস ও কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে দুইবার মুখে লাগান। ত্বকে ব্রণ ও দাগ অদৃশ্য হয়ে যাবে।

 

কালোজিরা তেল মাথাব্যথার জন্য একটি পুরানো ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে বলা হয়। এটি মাথার ত্বকের ম্যাসাজ করুন।

 

সরিষার তেলের সঙ্গে কালোজিরা তেল গরম করে হাঁটু বা অন্যান্য জয়েন্টগুলোতে ম্যাসাজ করতে পারেন। এটি জয়েন্টের ব্যথা থেকেও মুক্তি পেতে সহায়তা করবে।

 

কালোজিরায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায়, প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করার ক্ষমতাসহ লিভারকে সুরক্ষিত করতে সহায়তা করে। কালোজিরা রাসায়নিকের বিষাক্ততা কমাতে পারে। লিভার ও কিডনি ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

 

সর্দি-কাশিতে আরাম পেতে, এক চা চামচ কালোজিরার তেলের সঙ্গে ১ চা চামচ মধু বা এক কাপ লাল চায়ের সঙ্গে আধ চা চামচ কালোজিরের তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার খান। পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে কালিজিরা বেঁধে শুকালে, শ্লেষ্মা তরল হয়। পাশাপাশি, এক চা-চামচ কালোজিরার সঙ্গে তিন চা-চামচ মধু ও দুই চা-চামচ তুলসি পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি কমে। বুকে কফ বসে গেলে কালিজিরে বেটে, মোটা করে প্রলেপ দিন একই সাথে।

 

নিয়মিত কালোজিরা খেলে দেহে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয়। এতে করে মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি ঘটে; যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ালে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। কালোজিরা শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও অনেক কাজ করে।

এছাড়াও নিয়মিত কালোজিরা সেবনে চুলের গোড়ায় পুষ্টি ঠিকমতো পায়, ফলে চুলের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়। অনেকেরই চুল পড়া, দুর্বল চুল, শুষ্ক চুল ইত্যাদি নানা রকম সমস্যা থাকে। এক্ষেত্রে সপ্তাহে কয়েকবার কালোজিরার তেলের ব্যবহার চুলের সমস্যাকে দূর করতে পারে।

 

অ্যালার্জিজনিত সর্দিকাশি ও অ্যাজমা প্রতিরোধ করতে কালোজিরে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। কালোজিরে বেটে গরম ভাতে সপ্তাহে এক দিন খেলে সর্দিকাশির প্রবণতা কমে। ত্বকের অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ হলে কালোজিরা বাটা লাগালে দ্রুত উপশম হয়। ত্বক উজ্জ্বল রাখতে ও চুল ঝরা বন্ধ করতে কালোজিরে বেটে প্রলেপ দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

 

যেসব মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত দুধ নেই, তাদের মহৌষধ কালোজিরা। প্রসূতি মায়েরা প্রতি রাতে শোয়ার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সাথে খেলে মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া এ সমস্যা সমাধানে কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সাথে খেলেও ভাল। এছাড়া ১ চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিন ৩বার করে নিয়মিত খেলেও শতভাগ উপকার পাওয়া যায়।

 

যারা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদের জন্য কালোজিরা অনেক বেশি উপকারী। প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা রাখুন খাদ্য তালিকায়। কালোজিরা হাঁপানি বা শ্বাস কষ্টজনিত সমস্যা দূর করে।

 

(ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/আরজেড/এজেড)