জীবন নিয়ে সেনেকার পরামর্শ

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৪৪

তৌহিদ এলাহী

জীবন এত ছোট কেন? এ এক রহস্যময় ধা‌ধা। কিংবা আমরা যে ষাট-সত্তর বছরের জীবন পাই,  সেটাকে কতটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি? হাতে কামানো অর্থ-বিত্ত হতে একচুল পরিমাণ কেউ নিয়ে গেলে আমাদের দুঃখের শেষ থাকে না, অথচ আমাদের সবচেয়ে মুল্যবান সময় নষ্ট করি,  দান করি ও অপচয় করি কোনো কার্পণ্য ছাড়া।

কোনো অর্জন ছাড়াই বার্ধ্যকের দিকে এগিয়ে যাই, সেখানে গিয়ে হিসেব মিলেই, এর ওর জন্য অনেক করেছি, কিন্তু নিজের জীবনখানাকে ষোল আনা ফাঁকি দিয়েছি। কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে বড় কোনো পদ বা অর্জনের জন্য সারাজীবনকে দৌড়ের উপর রাখি, অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করি, ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন থাকি, কিন্তু বর্তমানকে ধরতে পারি না।

অবসরকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে পারি না, মিথ্যে সমাজসেবার নামে দৌড়িয়ে ক্লান্ত হই, উচ্চপদ বা বিপুল অর্থের জন্য সারাজীবনকে উৎসর্গ করি কিন্তু এগুলো আমাদের নিজ স্বত্বার সাথে নিজের দুরত্ব তৈরি করে। এগুলো অর্জন করতে গিয়ে আমরা ক্লান্ত হই, এরপর রক্ষা করতে গিয়ে নিজের সব হারিয়ে ফেলি।

আজ যদি জানতাম কাল মৃত্যু হবে, তাহলে আরো কিছুদিন বেচে থাকার  জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করি, কিন্তু না জানলে স্রোতে গা ভাসিয়ে দেই, বার্ধক্য, রোগ-শোক এসে আমাদের নিয়ে যায়। আমাদের সময়কে ধরতে পারি না,  উপভোগ করতে পারি না,  মরিচীকার পেছনে ছুটে চলি, শেষ জীবনে এসে হিসেব মেলাতে পারি না।

এ জীবনে যা সময় গেছে সব অন্যের জন্য, অথবা অর্থ-ক্ষমতা-ভোগের পেছনে, সত্যিকারের জীবনের সাধনাই করা হয় নি। আমাদের ৬০/৭০ বছরের জীবনকে অতিক্ষুদ্র মনে হয় কারণ আমরা বেশিরভাগ সময় অপচয় করি। সঠিকভাবে বেচে থাকা শিখলে এও যথেষ্ঠ।

মহান দার্শনিক আন্নিউস সেনেকা এ মোহমায়া হতে বের হয়ে আসতে বলেছেন। নির্দেশনা দিয়েছেন, স্থির হয়ে ভাবতে, গভীর চিন্তায় ডুবে যেতে, জ্ঞান-সাধনা ও অর্জিত জ্ঞান বিলিয়ে দিতে। জ্ঞানচর্চাহীন মানুষের জীবনকে বলেছেন কুকুরের লেজের মতো, যা তার পশ্চাতদেশ ঢাকতে পারে না আবার মশা মাছিও তাড়াতে পারে না।

বন্ধুত্ব করতে বলেছেন পৃথিবীর সর্বকালের জ্ঞানীগুণী মানুষ, কবি- সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানীর সাথে, তাদের লেখা ও জ্ঞানের সাথে। অর্জিত জ্ঞান বিলিয়ে নিজেকে অমর করে রাখার পথ বাতলে দিয়েছেন। কবরের প্রস্তর খন্ডে লেখা নাম মুছে যাবে, ক্ষয়ে যাবে, কিন্তু বিলিয়ে দেওয়া জ্ঞানগুলোই অমর করে রাখবে।

"হতচ্ছাড়া মরণশীল মানুষ, দেখ কিভাবে বয়ে যায় তোর জীবনের সুন্দর সোনালী সময়"- ভার্জিল

লেখক: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/এসকেএস)