বঙ্গবন্ধু সেতুর ঠিকাদারের কাণ্ড: বকেয়া চাওয়ায় শ্রমিক ছাঁটাই

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৪৭

টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুতে কর্মরত শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, চাকরি স্থায়ীকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করায় ছাঁটাই ও থানায় অভিযোগ দিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এতে বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউকেশন কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটড বাংলাদেশ (সিসিসিসি) বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে উল্টো শ্রমিকদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে গত বছরের ২৯ জুন বঙ্গবন্ধু সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি। নিয়ম অনুযায়ী সেতুতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুনরায় নিয়োগপত্র দেবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও সিসিসিসির কাছ থেকে কোনো নিয়োগপত্র পায়নি শ্রমিকরা। এছাড়া গত তিন মাস ধরে কোনো বেতনও দেওয়া হয়নি।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা বকেয়া বেতন পরিশোধ, স্থায়ী নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অপারেশন ডিরেক্টর হু ডেপিংয়ের কাছে যেতে চাইলে বাধা দেন কোম্পানির সিকিউরিটি ম্যানেজার অব. মেজর মাহফুজুর রহমান। এ ঘটনায় শ্রমিকদের সঙ্গে সিকিউরিটি ম্যানেজারের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেতুতে কর্মরত কর্মচারীরা জানান, এক মাসের বেতন পরের মাসের শেষের দিকে দেয়া হয়। উৎসব ভাতা, বোনাস, ইনক্রিমেন্ট, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোষাক-পরিচ্ছদসহ নিয়োগপত্রে বেতন উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু কোম্পানি সরকারের কাছ থেকে শ্রমিকদের বেতন বেশি দেখিয়ে আমাদের কম দেয়া হচ্ছে। এতে কাঙ্ক্ষিত পরিশ্রম করলেও কোম্পানি আমাদের ঠকাচ্ছে। বারবার দাবিগুলো কর্তৃপক্ষকে জানালেও সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

শ্রমিকরা জানান, সিসিসিসি কোম্পানি দ্বিতীয়বারের মতো বঙ্গবন্ধু সেতুর দায়িত্ব পেয়েছে। সেই অনুযায়ী কয়েকমাস পার হলেও শ্রমিকদের কোনো নিয়োগপত্র দেয়নি। নির্ধারিত ডিউটির চেয়ে বেশি ডিউটি করলেও কোনো অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। কয়েকমাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে কোম্পানির প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে বাধা দেয়া হয়। যৌক্তিক দাবি তুলে ধরায় বেশ কয়েকজনকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশি হয়রানি করা হচ্ছে।

এ নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। আন্দোলন ইস্যুতে একদিকে শ্রমিকদের ছাঁটাই, অন্যদিকে কর্মকর্তারা তাদের স্বজনদের নিয়োগ দিচ্ছেন। ফলে সেতুতে স্থানীয় লোকজন কর্মক্ষেত্র থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে মারধরের অভিযোগ এনে ম্যানেজার অব. মেজর মাহফুজুর রহমান বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানায় সাত-আটজনের নাম উল্লেখ করে বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত দিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি অপারেশন ডিরেক্টর হু ডিপেংয়ের সঙ্গে ফোনে কল দিয়ে এবং এসএমএস পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. লিটন মিয়া জানান, সিসিসিসির ম্যানেজার অব. মেজর মাহফুজুর রহমান বেশ কয়েকজন শ্রমিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হোসাইন বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি কোম্পানীর সঙ্গে শ্রমিকদের ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি কোম্পানির নিজস্ব। তারাই এই বিষয়ে জানাতে পারবেন।

(ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :