দ্রুত শরীরের মাসল তৈরি করে প্রোটিন পাউডার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৫২ | প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৩১

পেশিবহুল সুদর্শন চেহারার নারীপুরুষ সকলের মন কাড়ে। আপনিও যদি খুব সহজে দ্রুত আকর্ষণীয় পেশিবহুল বডির অধিকারী হতে চান কিংবা বডিবিল্ডারদের মত বডি বানাতে চান এবং শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে চান তাহলে জিমে শারীরিক অনুশীলনের পাশাপাশি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন থাকা খুব জরুরি। দ্রুত শরীরে মাসল তৈরিতে প্রোটিন পাউডারের জুড়ি নেই।

মানুষের উচ্চতা অনুযায়ী যা ওজন হওয়া উচিৎ তার তুলনায় বেশি হলে, সেটাকে মেদবহুলতা বলে। কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার ও এটা একইসাথে প্রোটিনের মতন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাব এর জন্যে দায়ী। একটা গবেষণা অনুসারে ৭০% মানুষ প্রোটিনের অভাবে ভোগেন এবং কোন ক্ষেত্রে সেটা ৮০% পর্যন্ত।

খাদ্যতালিকায় প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট যোগ করার অর্থ হল বেশ কিছু উপকারিতা যোগ করা, যেমন ওজন কমানো, মেটাবলিজিমের উন্নতি কিংবা সার্বিকভাবে ভারসাম্য বজায় রেখে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। শরীর সবল রাখতে, রোজকার ডায়েটে পুষ্টি বজায় রাখতে, প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে রোজকার খাবারের পরিবর্তে অনেকেই প্রোটিন পাউডার খান। ওজন কমাতে, অনেকেই এই ধরনের শেকে ভরসা রাখেন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেকেই কড়া ডায়েট করেন। তাই পুষ্টির জোগান বজায় রাখতে তারা ভরসা রাখেন প্রোটিন পাউডারে।

শরীরে ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন আসে মাংস, মাছ, ডিম ও দুগ্ধজাতীয় প্রডাক্ট থেকে। আর সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিনের উৎস ডাল, সয়াবিন, রাজমা, ছোলা, ছাতু ইত্যাদি। কিন্তু খাবার থেকে পর্যাপ্ত প্রোটিন শরীরে না পৌঁছালে তখনই কাজে দেবে প্রোটিন পাউডার।

পুষ্টিবিদদের মতে, ‘সুস্থ থাকতে হলে ফার্স্ট ক্লাস ও সেকেন্ড ক্লাস, দু’টি প্রোটিনই খাওয়া দরকার। কিন্তু চাহিদা মতো মাছ, মাংস, ডিম না খেলে প্রোটিনের ঘাটতি তৈরি হয়। অন্য দিকে আবার ডাল ও তা থেকে উৎপন্ন প্রডাক্ট, সয়াবিন, রাজমার মতো খাবার পুরোপুরি বর্জন করলেও প্রোটিনের অভাব ঘটে। খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের ঘাটতি, প্রোটিন পাউডার দিয়ে পূরণ করা সম্ভব।’

সাধারণত সুস্থ থাকতে মানুষের দেহের প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য দশমিক ৮ গ্রাম করে প্রতিদিন প্রোটিন খাওয়ার পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্যবিজ্ঞান। কিন্তু এই পুষ্টি উপাদান খাবারের ভেতর থেকে খুঁজে বের করা কঠিন।

প্রোটিন পাউডারের মধ্যে সব খাদ্যবস্তুর প্রোটিন থাকার সঙ্গে নিউট্রিয়েন্টসও (যেমন কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, মিনারেলস ইত্যাদি) থাকে। পরিমাণ মতো ঈষদুষ্ণ পানি গুলে, পানীয়ের মতো পান করা হয় এই প্রোটিন শেক। তবে প্রোটিন পাউডারের উপাদানের অনেক ফারাক হয়। আপনি সহজেই প্রোটিন পাউডার বানিয়ে ঘরে রাখতে পারেন। প্রতিদিনই খেতে পারেন। কয়েক ধরনের প্রোটিন পাউডারের কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্পিরুলিনা এবং নিউট্রিশনাল ইস্টের একটি বা উভয়ই খেতে পারেন। যদি দুই টেবিল চামচ স্পিরুলিনা পাউডার খান, তবে আট গ্রাম প্রোটিন মিলবে। আর দ্বিতীয়টির তিন টেবিল চামচে মিলবে ১২ গ্রাম।

বিচি বা দানাজাতীয় খাবারে প্রোটিন পাউডার পাওয়া যায়। এগুলো সবই গুঁড়া করে রাখতে হবে। প্রতিটির যে পরিমাণ গুঁড়ার উল্লেখ করা আছে, তা গ্রহণ করলে ১২ গ্রাম প্রোটিন মিলবে। সূর্যমুখীর বিচি তিন টেবিল চামচ, তিসি তিন টেবিল চামচ, মিষ্টি কুমড়ার বিচি চার টেবিল চামচ এবং কুইনোয়া সেদ্ধ এক কাপ।

অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। এ তালিকায় রয়েছে আলমন্ড আধাকাপ, ক্যারোব বিন আধাকাপ এবং মাকা পাউডার এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ। প্রতিটি খাবারের উল্লিখিত পরিমাণ গ্রহণ করলে ১২ গ্রাম প্রোটিন মিলবে।

প্রোটিন পাউডারের দারুণ এক উৎস হলো বিভিন্ন ধরনের বাদাম। নাম ধরে যে পরিমাণ দেওয়া হলো, তা ৯ থেকে ১৪ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন সরবরাহ করবে। চিনাবাদাম এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ এবং সমপরিমাণ পেস্তা, আলমন্ড, কাজু, হাজেলনাট ও শুকনো নারকেল থেকে প্রতিদিন প্রোটিনের অভাব পূরণ করতে পারেন।

মুখরোচক খাবারের জন্য মসলার বিকল্প নেই। মসলার ব্যবহারেও কিন্তু খাবারে বাড়তি প্রোটিন যোগ হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম জিরা, রসুন, শুকনো ধনে পাতা ও শুকনো পুদিনা পাতায় যথাক্রমে ১৮ গ্রাম, ১৭ গ্রাম এবং বাকি দুটি থেকে তিন গ্রাম করে প্রোটিন পাউডার পেতে পারেন।

আমিষের গুঁড়া এক গ্লাস পানি বা অন্য কোনো পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। মজার প্রোটিন পাউডার পেয়ে যাবেন।

এছাড়া মাসল গেইনের জন্য হোয়ে প্রোটিন বেশ জনপ্রিয়। কারণ হোয়ে প্রোটিন হল সম্পূর্ণরূপে একটি দুগ্ধজাত প্রোটিন। পনীর কিংবা ছানার পানি থেকে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। দুধ থেকে আরও একটি প্রোটিন তৈরি হয় সেটি হল ক্যাসিন প্রোটিন। যা পনীর কিংবা ছানা থেকে প্রস্তুত করা হয়। সাধারণত গরুর দুধে ৮০% ক্যাসিন প্রোটিন এবং ২০% হোয়ে প্রোটিন থাকে। মানুষের বুকের দুধে ৬০% হোয়ে প্রোটিন এবং ৪০% ক্যাসিন প্রোটিন থেকে থাকে।

তবে ক্যাসিন প্রোটিনের তুলনায় হোয়ে প্রোটিনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড থাকে। যা আমাদের দেহের বৃদ্ধি ও পেশিগুলোকে মজবুত করতে সাহায্য করে। তাছাড়া হোয়ে প্রোটিন আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ পেশিগুলোকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেশির যে ক্ষয় শুরু হয় তা রোধ করতে সহায়তা করে ফলে বয়স বাড়লেও বয়সের কোন ছাপ শরীরে দেখা যায় না। তাই অন্যান্য প্রোটিনের তুলনায় হোয়ে প্রোটিনের উপকারিতা অনেক অনেক বেশি।

একজন মানুষ তার শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী ২৫-৩০ গ্রাম হোয়ে প্রোটিন প্রতিদিন নিতে পারেন। হোয়ে প্রোটিন দইয়ের সাথে, দুধের সাথে কিংবা শুধু পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। ওটসের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। বিভিন্ন ফলের সাথে মিশিয়ে সরবত বানিয়ে খেতে পারেন।

তবে প্রোটিন পাউডার খাওয়ার আগে মনে রাখবেন, শরীরে বাড়তি প্রোটিন তৈরি হলেও বিপদ। মাছ, মাংস ইত্যাদি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেয়েও প্রোটিন পাউডার খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বয়স, উচ্চতা ও শারীরিক ক্ষমতা বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রোটিন পাউডার খান।

অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির উপরে চাপ ফেলে। এতে কিডনি বিকল হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। পেটের সমস্যাও হতে পারে। তাই কোনও মিলের বদলে প্রোটিন পাউডার খেতে চাইলে ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নিন।

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :