ডিজিটাল ডিসপ্লের কারণে বদলে যাচ্ছে শিশুদের চোখের গঠন

তথ‌্যপ্রযু‌ক্তি ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১১:৪৭

করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ জাতীয় ডিভাইস শিশুদের বেশি ব্যবহার করতে হচ্ছে। ডিজিটাল মাধ্যমেই চলছে লেখাপড়া। লেখাপড়া থেকে নাচ, গান, গিটার বা যোগা ক্লাস- সবই অনলাইনে। তার জেরে দিনের অনেকটা সময়ই তাদের কাটছে মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপে নজর রেখে। যা ভীষণভাবে প্রভাব ফেলছে শিশুদের চোখে।

কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন থেকে এক ধরনের নীল আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে। খুব কাছে থেকে নিয়মিত দীর্ঘ সময় নীল উজ্জ্বল আলোর ডিভাইস স্ক্রিন চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করে যা দীর্ঘমেয়াদে শিশুদের চোখের ক্ষতি করে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন গত বছরই অন্তত ২৫ শতাংশ বেড়েছে বাচ্চাদের চোখের সমস্যা। দীর্ঘক্ষণ চোখে চাপ পড়ায় বদলে যাচ্ছে তাদের চোখের মণির আকার। নাকের উপর উঠছে চশমা। এমনকী অনেকেরই দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হচ্ছে।

চিকিৎসকদের মতে এই সমস্যাও অতিমারীর আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। ১৯৭১ সালের পর মার্কিন মুলুকে এই করোনা আবহে ৪২ শতাংশ বেড়েছে দৃ্ষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার সমস্যা। তবে শুধুই ছোটরা নয়, ভুগছে কিশোর-কিশোরী ও প্রাপ্তবয়স্করাও। এশিয়ার দেশগুলোতেও ৯০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে চোখের সমস্যা।

একটি গবেষণা বলছে, দীর্ঘসময় স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার পাশাপাশি ক্ষুদ্র আকারে লেখা বই পড়াও এর অন্যতম কারণ। প্রাথমিকভাবে চশমা এই সমস্যা মেটালেও স্ক্রিন টাইমে লাগাম না টানলে অদূর ভবিষ্যতে দৃষ্টিশক্তি হারাতেও হতে পারে। আর শুধুই দৃষ্টিশক্তি কমছে এমনটা নয়, এর ফলে হতে পারে চোখের শিরা শুকিয়ে যাওয়া, মাথাব্যথার মতো নানা রোগ।

একটানা স্ক্রিনের সামনে বাচ্চাকে বসে থাকতে দেবেন না। প্রতি ২০ মিনিট পর অন্তত একবার করে বিরতি নিক। সেই সময়টা তাকে স্ক্রিন থেকে অন্তত ২০ ফুট দূরত্বে নিয়ে যান। ২০ সেকেন্ডে ২০ বার পলক ফেলতে বলুন। এতে চোখ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।

কম্পিউটরের স্ক্রিনের ব্রাইটনেস যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখুন। এতে অতিরিক্ত রশ্মি থেকে রক্ষা পাবে সন্তানের চোখ। মোবাইলের ক্ষেত্রেও তাই। রাতে মোবাইল দেখার প্রয়োজন পড়লে তার নাইট মোডটি অন করে রাখুন।

কম্পিউটর ব্যবহার করলে চেষ্টা করুন মনিটরটি তা যতটা দূরে রেখে যেন কাজ করে বাচ্চা। চিকিৎসকরা ছোট স্ক্রিনের বদলে বড় স্ক্রিন ব্যবহারেরই পরামর্শ দিচ্ছেন।

মাঝেমধ্যেই বাচ্চার চোখের রুটিন চেক-আপ করান। মাথা যন্ত্রণা বা চোখে ব্যথা করলে অকারণ ওষুধ না খাইয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অবসর সময়ে চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিতে বলুন খুদেকে। সম্ভব হলে নিয়মিত সবুজ ঘাস কিংবা গাছগাছালির দিকে তাকিয়ে থাকার সুযোগ করে দিন তাকে।

শিশুদের যদি কম্পিউটার-মোবাইল অনেকক্ষণ তা ব্যবহার করতেই হয় সে ক্ষেত্রে একটি ব্যায়াম করা যেতে পারে।

খুব বেশি সময় বই বা কম্পিউটারে তাকিয়ে থাকলে চোখের পলক কমতে থাকে। তাতে চোখের পানি শুকিয়ে যেতে থাকে। শিশুদের চোখের পলক ফেলতে মনে করিয়ে দিতে হবে। মাঝে মাঝে চোখে পানি দিতে পারেন।

ভিটামিন এ রয়েছে এমন খাবার খাওয়াতে হবে শিশুদের। এটি চোখের অসুখ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

সোফায়, বিছানায় বিভিন্নভাবে চিৎ, কাৎ, উপুড় হয়ে পড়ালেখা করা যাবে না। চেয়ার টেবিলে বসে পড়াশুনা করতে হবে।

চোখ থেকে বইয়ের অবস্থান এক থেকে দেড় ফিট দূরে হতে হবে।

টেবিল থেকে লাইট কত দূরে, তার আলো কোন দিক থেকে পড়ার টেবিলে আসছে সেটিও একটি বিষয়। পড়ার জন্য ঘরে আলো সঠিক হতে হবে।

বাইরে যাওয়া ও খেলাধুলা বাড়াতে হবে। মাঠে খেলতে না পারলেও বাড়ির ছাদে গেলেও তা বাইরে যাওয়ার যা উপকার তার কিছুটা পাওয়া যাবে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল শিশুর চোখে কোন সমস্যা থাকুক বা না থাকুক তার চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেয়াই ভালো কারণ অনেক সময় উপসর্গ বোঝা যায় না।

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা