শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ জানার যন্ত্র যেভাবে কাজ করে

তথ‌্যপ্রযু‌ক্তি ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৩:৫০

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির নিয়মিত রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ মাপা খুবই জরুরি। আর এই জন্যই প্রয়োজন পালস অক্সিমিটারের। আঙুলে লাগিয়ে সহজেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ জানিয়ে দেয় এই যন্ত্রটি।

মানুষের রক্তে বিভিন্ন ধরণের রক্তকণিকা থাকে। তার মধ্যে লোহিত রক্তকণিকা অন্যতম। লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন থাকে। আর এই হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরে অক্সিজেন বাহক হিসেবে কাজ করে । অর্থাৎ হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে আমাদের শরীরে অক্সিজেন প্রবাহিত হয়। মূলত রক্তে কী পরিমাণ অক্সিজেন প্রবাহিত হচ্ছে, তা এই যন্ত্রটি দিয়ে মাপা হয় এবং অক্সিজেনের পরিমাণের অবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় করা হয়।

১৯৫৩ সালে জার্মান চিকিৎসাবিদ কার্ল ম্যাথ এটি সর্বপ্রথম তৈরি করেন। এটি একটি ছোট, ক্লিপ-জাতীয় ইলেক্ট্রনিকস যন্ত্র যা কোনোরূপ যন্ত্রণাদায়ক পরীক্ষা ছাড়াই শরীরের কোন অংশ যেমন হাতের পায়ের আঙুল বা কানের পাতার সঙ্গে লাগিয়ে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ মাপতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খুব বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে।

ক্লিপের মত দেখতে এই যন্ত্রটির দুটি অংশ থাকে। যন্ত্রটির মাঝখানের নিচের অংশ থেকে লাল এবং ইনফ্রারেড আলো নির্গত হয় এবং মাঝখানের উপরের অংশে একটি সেন্সর বসানো থাকে। এই দুই এর মাঝে আঙুল প্রবেশ করানো হলে লাল এবং ইনফ্রারেড আলো আঙুলের মধ্য দিয়ে সেন্সরে যায় এবং একটি নির্দিষ্ট মেকানিজম ব্যবহার করে রক্তে ঠিক কতটুকু অক্সিজেন আছে তা নির্ণয় করে উপরে থাকা ডিসপ্লেতে তা প্রদর্শন করে।

সাধারণত পালস অক্সিমিটারে ৯৫ থেকে ১০০ শতাংশ অক্সিজেন মাত্রাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ ৯৫ শতাংশের কম হলে চিকিৎসার ভাষায় হাইপোক্সিয়া বলা হয়। শরীরে তখন অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। তখন শ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। সঙ্গে মাথাব্যথা, বুকব্যথা, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। স্থায়ী হাইপোক্সিয়া দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা শেষ করে দেয়। আর এ জন্যই ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে অক্সিজেন দিতে হয়। তবে কিছু কিছু দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগের ক্ষেত্রে অক্সিজেনের মাত্রা কিছুটা কম ও স্বাভাবিক ধরা হয়ে থাকে।

ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমনারি রোগ, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, ফুসফুসের ক্যানসার, রক্তাল্পতা, হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়া, জন্মগত হার্টের সমস্যায় ভোগা রোগীদের শরীরে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণের উপর নজর রাখতে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়।

খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ণয় করে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের ভেন্টিলেশন দেওয়া হয়, এই ভেন্টিলেশন ঠিকমত কাজ করছে কিনা সেটিও পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে পরীক্ষা করা যায়। যেটি করোনা রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সাধারণত এই যন্ত্রটি হাতের আঙুলে, পায়ের আঙুলে কিংবা কানের লতিতে লাগিয়ে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করা হয় তবে ডান হাতের মধ্যমা আঙুলটি ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।

যে আঙুলে রক্ত চলাচল কম করে সেই আঙুলে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করলে সেক্ষেত্রে ভুল অক্সিজেনের মাত্রা আসবে।

যে হাতের আঙুলে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করবেন যদি সেই হাতে ব্লাডপ্রেশার মাপার কাফ লাগানো থাকে তাহলে ভুল রিডিং আসবে।

আপনার যদি অ্যানেমিয়া বা রক্তাল্পতা থেকে থাকে, খুব লো ব্লাডপ্রেশার থেকে থাকে সেক্ষেত্রে সঠিক রিডিং আসবে না।

হাতের আঙুলে মেহেন্দি, নখে নেইল পলিস লাগানো থাকলে এই যন্ত্রটির ইনফ্রারেড আলো এবং সেন্সর ঠিকমত কাজ করবে না ফলে অক্সিজেনের ভুল মাত্রা দেখাবে।

আঙুলের নখ খুব বড় থাকলে আঙুল ঠিকমত এই যন্ত্রটির ভেতরে প্রবেশ করবে না যার ফলে যন্ত্রটি অক্সিজেনের মাত্রা ভুল দেখাবে।

হাত পায়ের আঙুল ঠাণ্ডা থাকলে কিংবা আপনি ঠাণ্ডা ঘরে বসে এই যন্ত্রটি দিয়ে অক্সিজেনের মাত্রা মাপলে সেক্ষেত্রে ভুল রিডিং দেখাবে কারণ হাত পা ঠাণ্ডা থাকলে সেখানে রক্ত চলাচল কম করবে, আর এই যন্ত্রটি রক্তের অক্সিজেন মাপে তাই রিডিং ভুল দেখাবে।

কিছু রোগের কারণে এই যন্ত্রটি দিয়ে অক্সিজেন মাপলে ভুল রিডিং আসতে পারে। যেমন কোন রোগীর হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা কম থাকে তাহলে ভুল রিডিং আসতে পারে। আবার অনেক ডায়াবেটিস রোগীর হাতে পায়ে রক্ত চলাচল কম হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ভুল রিডিং আসবে।

অক্সিজেনের লেভেল ৭০ এর নিচে নেমে গেলে যন্ত্রটি তখন ঠিকঠাক কাজ করে না।

যন্ত্রটি ঠিকঠাক ভাবে না লাগালে, বেঁকে থাকলে, হাত কাঁপলে ভুল রিডিং আসতে পারে।

খুব উজ্জ্বল আলোতে এই যন্ত্রটি দিয়ে অক্সিজেন মাপলে রিডিং সঠিক নাও আসতে পারে।

যদি যন্ত্রটির সেন্সরে এবং যেখান থেকে আলোগুলো নির্গত সেখানে নোংরা জমে গেলে ভুল রিডিং আসতে পারে।

ব্যাটারির পাওয়ার কমে গেলেও অক্সিজেনের ভুল মাত্রা দেখাতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা