অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সরকারি এবং অস্ট্রেলিয়া পোর্টে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মির্জা মুকুল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বুধবার দুপুরে সিআইডির সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান সিআইডির ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন।

এর আগে রাজধানীর ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৪৩৫ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে মির্জা মুকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার সিআইডি ঢাকা মেট্রো-দক্ষিণের একটি দল তাকে গ্রেপ্তারের সময় ২৬টি পাসপোর্ট, তিনটি অটো সিল, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ট্রেনিং পাশের ৩৫টি কার্ড, সাতটি ভুয়া নিয়োগপত্র, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর লেখা ও ছবি সম্বলিত ২৫টি পাসপোর্টের আবেদন ফরম, ১৫টি মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামের ছবি এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার  মির্জা মুকুল ওরফে প্রকাশ কামাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানার দক্ষিণ মৌড়াইল ডাক বাংলোর মোডের মৃত মির্জা মান্নান আলীর ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে ইমাম হোসেন বলেন, সিআইডি ঢাকা মেট্রো-দক্ষিণ একটি দল জানতে পারে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র ল্যান্ড ম্যাজিস্ট্রেট ও বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ট্রেনিং করিয়ে অস্ট্রেলিয়া পোর্টে চাকরিতে নিয়োগের নামে টাকা আদায় করে আসছে।

সিআইডি জানায়, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ট্রেনিং করিয়ে অস্ট্রেলিয়া পোর্টে চাকরিতে নিয়োগপত্র তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল লোকজনদের প্রতারিত করে ৮২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার মির্জা মুকুল বসুন্ধরা অভিজাত এলাকায় থাকতেন। আবদুল কাদের নামের এক ব্যক্তির অভিযোগ পেয়ে ভাটারা থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

সংবাদ সম্মেলনে ইমাম হোসেন বলেন, আবদুল কাদেরের পরিচিত বন্ধু ও স্বজনদেরকে সরকারি খরচে পাঠানোর প্রস্তাব করে। যাদের পাঠানো হবে তারা মেরিন টু মেরিন অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার শিফিং পোর্টে কাজ করবে। অস্ট্রেলিয়া পৌঁছা মোট আট লাখ টাকা খরচ হবে। যাদেরকে পাঠবে তাদের প্রথমে চট্টগ্রাম মেরিন এক মাসের ট্রেনিং করতে হবে। ট্রেনিং, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও অন্যান্য খরচ বাবদ জনপ্রতি ১২০ টাকা করে প্রথমে দিতে হবে। আবদুল কাদের তার প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তার পরিচিত জুয়েল এবং বারিকদারদের বললে তারাও তাদের আত্মীয়-স্বজন পরিচিতদের মির্জা মুকুলের প্রস্তাব মতে পাঠাতে রাজি হন। তখন ভুক্তভোগী আবদুল কাদের মুকুলের প্রস্তাব মতে তাদেরকে নিয়ে গত বছরের ১৮ জুলাই বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ভাটারা থানার মেহেদী মার্টের সামনে গেলে মুকুলের সাথে তার দেখা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মির্জা মুকুল অস্ট্রেলিয়া লোক পাঠানোর বিষয়ে তাদের বিস্তারিত জানালে ভুক্তভোগীরা তার কথায় বিশ্বাস করে আবদুল কাদেরর মাধ্যমে পথন নামের এক ব্যক্তিসহ ১২ জন, বারিকদারের মাধ্যমে ইসাহাত বারইসহ ১৭ জন এবং জুয়েল বাড়ইয়ের মাধ্যমে অয়ন বৈদ্যসহ ১৯ জন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে  ওইদিন ২০২১ সালের ১৮ জুলাই থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিকাশে নগদে, ট্রেনিং, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অন্যান্য খরচ বাবদ ৫৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইমাম হোসেন বলেন, মুকুল ওরফে কামাল ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস স্থাপনের জন্য, মেরিন একাডেমির ট্রেনিংয়ের জন্য ছবি নকল আইডি সরবরাহ করেন। এছাড়াও গত ৯ নভেম্বর সবাইকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে যেতে বলে। মুকুল তাদেরকে জানান, নেওয়ার জন্য বিদেশি ডেলিগেট আসবে এই জন্য প্রথমে তাদের চট্টগ্রাম কক্সবাজার যাওয়ার জন্য বলেন। মুকুল ভুক্তভোগীদের গত ২২ অক্টোবর চট্টগ্রাম, পরে ডেলিগেটের সাথে কক্সবাজার নেন। সেখানে ভুক্তভোগীদের বাংলাদেশ একাডেমির একাডেমিক নকল ট্রেনিং কার্ড বুঝিয়ে দিয়ে ট্রেনিং বাবদ পাঁচ লাখ টাকা নেন। ডেলিগেইটসান চট্টগ্রাম গেছে এবং সবাইকে চট্টগ্রাম যওয়ার জন্য বলেন। চট্টগ্রাম এসে পরবর্তী সময়ে মুকুল মির্জাকে ফোনে আর পাননি। মুকুলকে বার ফোন করে ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারেন তারা মুকুলের কাছে প্রতারিত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ট্রেনিং করিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পোটেং চাকরি দেওয়ার নাম করে, বাংলেোদশ একাডেমির জাল ট্রেনিং কার্ড সরবরাহ করে ৬২ লাখ ৬০ হাজার  টাকা আত্মসাৎ করেন। গ্রেপ্তার মুকুল মির্জা ২০১৯ কলেজ রোডে অবস্থান নিজেকে নামে মন্ত্রণায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে কানাডা পাঠানোর নামে আরও ১২ জনের কাছ থেকে ৫২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান।

সংবাদ সম্মেলনে ইমাম হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার মুকুল মির্জা নয় বছর আগে ওমান প্রবাসী ছিলেন। তিনি ওমানে সালা সি পোর্টে খালাসি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে তিনি ওই প্রতারণার পরিকল্পনা করেন। তিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরিতে দক্ষ। তার অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধেও ডিএমপি ভাটারা থানায় একটি মামলা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার ও প্রতারণার টাকা উদ্ধারের চেষ্টায় মামলা তদন্ত অব্যাহত আছে।

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/এএ/জেবি)