এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচন কি জমিয়ে দিলেন নিপুণ?

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৩২ | প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:১০

অপেক্ষা আর কয়েক দিনের। আগামী ২৮ জানুয়ারি এফডিসিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৭তম নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ। ইতিমধ্যে প্রস্তুত শক্তিশালী দুটি প্যানেল। একটি বিদায়ী কমিটির মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানদের, অন্য প্যানেলটি ইলিয়াস কাঞ্চন ও চিত্রনায়িকা নিপুণদের। দুই প্যানেলেই বিভিন্ন পদে লড়ছেন চলচ্চিত্রের একঝাঁক তারকা। তাই এবার লড়াইটা জমবে বেশ- এমনই ধারণা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের।

এবারের নির্বাচনকে ঘিরে এফডিসিপাড়া গত কয়েকদিন ধরেই সরগরম। চলছে জোর আলোচনা, সঙ্গে সমালোচনাও। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ। টানা দুইবার শিল্পী সমিতির নেতৃত্বে ছিল মিশা-জায়েদ প্যানেল। তাদের বিরুদ্ধে গত নির্বাচনে ছিল না কোনো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। গতবার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মৌসুমী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়লেও তিনি কাউকেই পাশে পাননি। তাই লড়াইটাও জমেনি তেমন। এবার সেই মিশা-জায়েদ প্যানেলের হয়েই নির্বাচন করছেন মৌসুমী।

তবে গতবার মৌসুমী যেটা পারেননি, এবার সে কাজে খুব ভালোভাবেই সফল চিত্রনায়িকা নিপুণ। তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন চলচ্চিত্রের একঝাঁক তারকা। তাদের মধ্যে আছেন চিত্রনায়ক রিয়াজ, শাকিল খান, নিরব, ইমন, সায়মন, ডিএ তায়েব, চিত্রনায়িকা কেয়াসহ অনেকে। সবচেয়ে বড় চমকটা নিপুণ দিয়েছেন ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ খ্যাত চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে দলে ভিড়িয়ে। মিশা-জায়েদ প্যানেলের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই মুখকে সভাপতি পদে দাঁড় করিয়েছেন তিনি।

কাজেই এফডিসিপাড়ায় সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে এই চিত্রনায়িকার নাম। তাদের বক্তব্য, শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচন জমিয়ে দিয়েছেন নিপুণ। সত্যি কি তাই? এফডিসির এই গুঞ্জন নিয়ে নায়িকা কী ভাবছেন?

এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হয় নিপুণের সঙ্গে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচন আমি জমিয়ে দিয়েছি কি না, তা নিয়ে ভাবছি না। আমাদের লক্ষ্য পুরো প্যানেলসহ জয়ী হওয়া। ১৮৪ জন শিল্পী এবার ভোট দিতে পারছেন না। ভোটের প্রচারে গিয়ে আমরা এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছি। তাই হয়তো আমাকে বা আমাদের প্যানেল নিয়ে একটু বেশি আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া কাঞ্চন ভাইয়ের (ইলিয়াস কাঞ্চন) নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রতিপক্ষ প্যানেল নানা নেতিবাচক কথাবার্তা বলছে। যেহেতু তাকে আমি দাঁড় করিয়েছি, আমাকে নিয়ে আলোচনা সে কারণেও হতে পারে।’

কিন্তু ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে বিপক্ষ প্যানেলের সমস্যা কী? এর উত্তরে নিপুণ বলেন, ‘তারা আসলে ভয় পাচ্ছে যে, গদি আবার ছুটে না যায়। কাঞ্চন ভাই তুমুল জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। বহু বছর ধরে তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন। এতদিন শিল্পী সমিতিতেও ছিলেন উপদেষ্টা হিসেবে। এছাড়া একসময় তিনি সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিতও হয়েছিলেন। তাই তার নির্বাচনে আসাটা বিপক্ষ প্যানেলের ভীতির কারণ হয়েছে। তারা চায় না তাদের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ তৈরি হোক।’

আপনি তো সাধারণ সম্পাদক পদে এবার জায়েদ খানের বিরুদ্ধে লড়ছেন। নিজের জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী? নিপুণ বলেন, ‘কাঞ্চন ভাই-রিয়াজ ভাইদের মতো মানুষদের সঙ্গে পেয়ে আমার আত্মবিশ্বাস শতভাগ। কয়েক দিনের প্রচারে সহকর্মী শিল্পীদের কাছ থেকেও ভালো সাড়া পেয়েছি। আশা করি, তারা গত দুই মেয়াদে যে ভুল করেছেন, এবার সে ভুল করবেন না। যোগ্য লোককেই শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসাবেন। যারা মুখে নয়, বাস্তবেই শিল্পীদের কল্যাণে কাজ করবে।’

সম্প্রতি এফডিসিতে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের সহ-সভাপতি প্রার্থী চিত্রনায়ক রিয়াজ। যে ১৮৪ জন শিল্পী তাদের ভোটাধিকার হারিয়েছেন, তাদের কথা বলতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি বহু হিট সিনেমার এই নায়ক। সেখানে ভোটাধিকার হারানো বহু শিল্পীই উপস্থিত ছিলেন। তাদের প্যানেল নির্বাচিত হলে ওই ১৮৪ জন শিল্পীর ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কাজ করবেন বলে জানান রিয়াজ।

তবে এই সংখ্যাটা ইতিমধ্যে অস্বীকার করেছেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। তিনি বলেন, সংখ্যাটা ১৩০ বা তার কাছাকাছি হবে। যারা এবার ভোট দিতে পারছেন না, তারা শিল্পী সমিতির সদস্য নন। কেন সদস্য না তাও জানান জায়েদ। বলেন, ‘সদস্য হওয়ার যোগ্যতা না থাকলে কীভাবে তাদের সদস্য করব? ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করলে তো এখনই তাদের সদস্য করতে পারি না। সমিতির একটা নিয়ম আছে। সংবিধান অনুযায়ী তাদের সদস্যপদ দেওয়া হবে।’

তবে রিয়াজ-নিপুণরা তাদের নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বলছেন, চরিত্র ছোট হোক বা বড়, একজন শিল্পী দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্রে কাজ করলে তার সদস্য হওয়ার যোগ্যতা এমনিতেই তৈরি হয়ে যায়। তারা এমন অভিযোগও করেন, ভোটাধিকার হারানো শিল্পীরা নানা সময়ে বিদায়ী কমিটির বিভিন্ন দুর্নীতি ও অন্যায় কর্মকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলেছেন। সে কারণেই তাদের সদস্যপদ দেওয়া হয়নি। এটাকে মিশা-জায়েদদের ক্ষমতার অপব্যবহার বলেও উল্লেখ করেন রিয়াজ-নিপুণরা।

এবারের নির্বাচনে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ-রিয়াজ ছাড়াও এই প্যানেল থেকে আরও লড়ছেন- ডি এ তায়েব (সহসভাপতি), সায়মন সাদিক (সহসাধারণ সম্পাদক), শাহনূর (সাংগঠনিক সম্পাদক), নিরব (আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক), আরমান (দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক), ইমন (সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক), আজাদ খান (কোষাধ্যক্ষ)। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে লড়ছেন অমিত হাসান, শাকিল খান, নানা শাহ, আফজাল শরীফ, সাংকো পাঞ্জা, জেসমিন, কেয়া, গাঙ্গুয়া ও সীমান্ত।

অন্যদিকে, কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন গত দুইবারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মিশা-জায়েদরাও। ভোটের মাঠে তারা অভিজ্ঞ খেলোয়ার। সঙ্গে রয়েছে সুব্রত, আলেকজান্ডার বো, জয় চৌধুরী, জ্যাকি আলমগীর, রোজিনা, অঞ্জনা, সুচরিতা, অরুণা বিশ্বাস, মৌসুমী, আসিফ ইকবাল, বাপ্পারাজ, আলীরাজ, নাদের খান ও হাসান জাহাঙ্গীরের মতো তারকারা। কাজেই, মিশা-জায়েদদের হ্যাটট্রিক জয় হবে নাকি ইলিয়াস-কাঞ্চন-নিপুণদের প্রথম, তা দেখার জন্য ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/এএইচ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :