মাদকাসক্তি থেকে কিশোর গ্যাংয়ের লিডার

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ২০:৩৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

২০০০ সালে মায়ের সঙ্গে নড়াইল থেকে ঢাকায় আসে বাবু ওরফে দশের বাবু। ঢাকায় সে গাড়ির হেলপার, হোটেল পরিষ্কারের চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিল। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকের টাকার জন্য মায়ের সঙ্গে প্রায়ই তার ঝগড়া হতো। মাদকের টাকার জন্য ছোট ছোট চুরি, ছিনতাইয়ের মাধ্যমে অপরাধ জগতে তার হাতেখড়ি। এরপর আস্তে আস্তে কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে। এক পর্যায়ে নিজেই গড়ে তোলে ‘লও ঠেলা’ নামে কিশোর গ্যাং।

র‌্যাব জানায়, ২০১৪ সালে ‘ভাইব্বা ল কিং’ কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় দশের বাবুর।  পরে এই বাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে তার অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সে ওই বাহিনীর সাথে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং মাদক কেনাবেচায় জড়িয়ে পড়ে। এক সময় তার কুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে অপরাধ জগতে সে ‘দশের বাবু’ নামে খেতাব পায়। পরে তাদের নিজেদের মধ্যে কোন্দলে ‘ভাইব্বা ল কিং’ গ্রুপ থেকে আলাদা হয়ে ২০১৭ সাল থেকে ‘লও ঠেলা’ নামে দুর্ধর্ষ এক গ্রুপ গড়ে তোলে।

‘লও ঠেলা’ গ্রুপের মূল হোতা বাবু ওরফে দশের বাবু ও তার আটজন সহযোগীসহ মোট  নয়জন জনকে আটক করেছে র‌্যাব-২। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাদের আটকের সময় দুটি চাপাতি, পাঁচটি ছুরি, একটি স্টিলের পাইপ, একটি হোল্ডিং চাকু এবং একটি চেইন উদ্ধার করা হয়।

আটকরা কিশোর গ্যাং সদস্যরা হলো বাবু ওরফে দশের বাবু, মো. ফোরকান, মো. পলাশ, মো. সুমন, মো. সাগর, মো. রাজন, মো. নাজিম, শাকিল এবং মিলন।

র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু নাঈম মো. তালাত জানান, ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামের একটি কিশোর গ্যাং এবং ৩১ ডিসেম্বর কবির বাহিনীর নামে দুটি বাহিনীকে আটক করে র‌্যাব-২। মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বেশ কয়েকটি গ্রুপ সম্পর্কে তথ্য পায় র‌্যাব। এছাড়াও কয়েকজন ভুক্তভোগীও র‌্যাবের কাছে অভিযোগ দেন। এসব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-২ মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

গত ৩১ ডিসেম্বর গভীর রাতে মোহাম্মদপুর থানার নবীনগর হাউজিং এলাকায় একদল সন্ত্রাসী দোকানপাট, বাড়িঘর ভাঙচুর এবং ছিনতাই করে। পরে র‌্যাবের কাছে স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে একটি অভিযোগ আসে। র‌্যাব-২ মঙ্গলবারে আবার মোহাম্মদপুর থানার নবীনগর হাউজিং এলাকায় একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মারামারি, ভাঙচুর, ছিনতাইয়ের অভিযোগ পায়। এরপর র‌্যাব-২ এর একটি দল বুধবার বাবু ওরফে দশের বাবু, মো. ফোরকান, মো. পলাশ, মো. সুমন, মো. সাগর, মো. রাজন, মো. নাজিম, শাকিল এবং মিলন নামের নয়জনকে আটক করে।

আটকদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, তারা ‘লও ঠেলা’ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। এই দলের সদস্যরা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। দলের মূলহোতা বাবু ওরফে দশের বাবু। তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন জায়গা ডাকাতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক কেনাবেচা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে আসছে।

আটক বাবু মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, বসিলা, চাঁদ উদ্যান এলাকায় ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ  বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। সে ‘লও ঠেলা’ গ্রুপের নেতা। এছাড়াও জবর দখল, ভাড়ায় শক্তি প্রদর্শন এবং আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপকর্মে তাদের ব্যবহার করে বাবু। বাবুর বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, ডাকাতি, দস্যুতা, মাদক,  ছিনতাইসহ মোট ছয়টি মামলা রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/এএ/জেবি)