পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ৩৩ ব্যাংকের ৬ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন

দেশের পুঁজিবাজারের উনয়নে করতে প্রায় দুই বছর আগে গঠন করা হয়েছিল বিশেষ তহবিল। এখন পর্যন্ত দেশের ৩৩টি ব্যাংক প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। কিন্তু তহবিল গঠন করলেও বিনিয়োগে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছে ব্যাংকগুলো। সর্বশেষ তথ্যমতে, ব্যাংকগুলো তহবিলের অর্ধেকেরও কম বিনিয়োগ করেছে পুঁজিবাজারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১৮ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত দেশের ৩৩টি ব্যাংক প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। যার মধ্য থেকে শেয়ারবাজারেরে বিনিয়োগ করেছে ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগ থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি গেছে সম্প্রতি তালিকাভুক্ত হওয়া বেসরকারি খাতে দেশের প্রথম সুকুক বন্ড বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক আল ইস্তিসনায়।

তবে বেক্সিমকোর সুকুকে ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ২২০ কোটি টাকা, যা বন্ডটির মোট আকারের ৭৪ শতাংশ।

পুঁজিবাজারেরজন্য গঠিত বিশেষ তহবিলের বাইরে আরও প্রায় ৯০০ কোটি টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকগুলো। গত নভেম্বরে বিভিন্ন শেয়ারে বিশেষ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ছিল প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা, যা এখন প্রায় ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকায় নেমেছে।

এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শেয়ারবাজারেরের জন্য ব্যাংকগুলোর গঠন করা বিশেষ তহবিলের ৭০ শতাংশ সৌর, বায়ু, জল, বায়োমাসের মতো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বেসরকারি উদ্যোক্তার আনা গ্রিন সুকুক বন্ডেও বিনিয়োগ সুযোগ দেওয়া হয়।

এজন্য বিশেষ তহবিলের মেয়াদ ২০২৫ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০২৮ সাল পর্যন্ত করা হয়। ব্যাংকগুলোর এই বিনিয়োগ শেয়ারবাজারের ব্যাংক কোম্পানি আইনের বর্ণিত বিনিয়োগ গণনার বাইরে থাকবে।

২০২০ সালের শুরুতে শেয়ারবাজারের টানা দরপতন সামাল দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য তহবিল গঠন সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তফসিলি ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ড রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারে।

ব্যাংকগুলো চাইলে নিজস্ব উৎস থেকেও এমন তহবিল গঠন করতে পারে। যদিও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পৃথকভাবে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ ব্যাংক তা পালন করেনি।

যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের সুযোগ হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ১৮ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত মোট ৩৩টি ব্যাংক প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাংকগুলো নিজস্ব অর্থায়নে এই তহবিল গঠন করেছে। এর মধ্যে ৩২টি ব্যাংকের তহবিল গঠনের পরিমাণ জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা মিলে বিশেষ তহবিলের অধীনে মোট ৭২০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে ৩১২ কোটি টাকা, যা তাদের তহবিলের ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে, ২৮টি বেসরকারি ব্যাংক প্রায় ৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে।

জানা গেছে, ৩২ ব্যাংকের মধ্যে ১৭টি ব্যাংক পুরো ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। ৬টি ব্যাংক ১০০ থেকে ১২০ কোটি টাকার এবং ৯টি ব্যাংক ১০ থেকে ৮০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে।

আবার ৩২ ব্যাংকের মধ্যে ৮টি ব্যাংক গঠিত তহবিলের ৮০ থেকে প্রায় শতভাগ বিনিয়োগ করেছে। ১৯টি ব্যাংক গঠিত তহবিলের ৫০ শতাংশই বিনিয়োগ করেছে। আর বাকিগুলোর বিনিয়োগ আরও কম।

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/এসকেএস)