রিতা-মিতাকে কি মনে পড়ে? কেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন না তারা?

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ২১:১৮

রিতা-মিতাকে কি মনে পড়ে- চিকিৎসক আইনুন নাহার রিতা আর প্রকৌশলী নুরুননাহার মিতা, দীর্ঘদিন ধরে রহস্যময় জীবনযাপনের কারণে যাদের বাড়িটি এলাকায় পরিচিতি পেয়েছিল ‘ভূতের বাড়ি’ হিসেবে? সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করার পর দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল এই দুই বোন ও তাদের বাড়িটি।

সেটিও ১৭ বছর আগের কথা। মিরপুরের ওই ‘ভৌতিক বাড়ি’ থেকে উচ্চশিক্ষিত ও অস্বাভাবিক আচরণ করা দুই বোনকে উদ্ধারের পর এত দিনে কত ঘটনার বিস্তার! এখন কেমন আছেন তারা? আদৌ কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন তারা?

খোঁজ নিয়ে জানা গেল তারা এখন আছেন বড় বোনের তত্ত্বাবধানে। মানসিক অসুস্থতা নিয়েই বোনের বাসায় একটি রুমে তাদের বসবাস। তাদের দেখাশোনার জন্য আছেন একজন নারী।

সরকারি-বেসরকারিভাবে চিকিৎসা ও নানা সুযোগ করে দেওয়ার পরও কেন তারা ফিরলেন না স্বাভাবিক জীবনে? তাদের বাড়িটিরই বা কী অবস্থা?

রিতা-মিতাকে যখন মিরপুরের ওই বাড়ি থকে উদ্ধার করা হয়, তখন তারা ছিলেন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। সেটি ২০০৫ সালের ৭ জুলাইয়ের ঘটনা। প্রায় ১৬ ঘণ্টার চেষ্টায় ওই ‘ভূতের বাড়ি’ থেকে দুই বোনকে উদ্ধার করেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান। এর আগে আট-নয় বছর তারা সমাজ-পরিবার থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন থেকে ওই বাড়িতে অস্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন।

উদ্ধারের পর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রিক বিভাগে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন তারা। ইউনিস্টিটিউটের তখনকার চিকিৎসক ডা. মুহিত কামালের অধীনে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন প্রকৌশলী ও চিকিৎসক দুই বোন। সরকার রিতাকে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে এবং মিতাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়।

এরপর কদিন ভালোভাবেই কাজ করেন রিতা-মিতা। এ সময় তাদের বাড়িটি সংস্কার করতে দেয়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন দুই বোন।

কিন্তু ২০১৩ সালে হঠাৎ লাপাত্তা তারা। দিন, সপ্তাহ, মাস তাদের খোঁজ নেই। দুই মাস পর তাদের সন্ধান মেলে বগুড়ার আকবরিয়া হোটেলে। এত দিন সেখানেই অবস্থান করছিলেন তারা। সেখান থেকে উদ্ধারের পর তাদের বড় বোন কামরুন্নাহার হেনার জিম্মায় দেয়া হয়। সেই থেকে তারা বোনের কাছেই আছেন। মাঝে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাদের মানসিক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয় বলে পরিবারের তরফে জানা গেছে। রিতা-মিতাদের মিরপুরের বাড়িটি দেখাশোনা করছেন বড় বোন কামরুন্নাহার হেনা।

কামরুন্নাহার হেনা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রিতা-মিতা বর্তমানে আমার ধানমন্ডির বাসায় আছে। আমার স্বামীর বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত। তাই আমি ওদের আলাদা সাবধানে রাখছি।’

রিতা-মিতার বর্তমান জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে চাইলে হেনা বলেন, ‘ওরা একটু কম মিশুক। তবে দুজনের মধ্যে খুব মিল। তারা সারা দিন নিজেরা গল্প করে, গান করে। দুই বোন মিলে আড্ডা দিয়ে সময় কাটায়। সময়মতো কাজের মেয়ে খাবার দিয়ে আসে তাদের রুমে, সেখানেই খাওয়া-দাওয়া। তারা সাধারণত ঘর থেকে বের হয় না। নিয়মিত নামাজ-কালাম, দোয়া-দরুদ পড়ে। তাদের সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করেন একজন নারী।’

রিতা-মিতা সুস্থ হওয়ার পর তা দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ার পেছনে সামাজিক বিড়ম্বনার কথা জানান কামরুন্নাহার হেনা। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ওরা যখন চাকরিতে যোগ দিয়েছিল বা সুস্থ হয়ে বাইরে যেতে শুরু করেছিল, তখন কিছু লোক ওদের দেখলেই বলত ওই যে দেখো রিতা-মিতা যায়। এসব কথা শুনে ওরা ঘাবড়ে যেত। মানসিকভাবে পীড়িত হতো। পরে আস্তে আস্তে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেয় তারা।’

কামরুননাহার হেনার একমাত্র মেয়ে লন্ডনে গেছেন বার অ্যাট ল পড়তে। ও পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরলে তাদের মিরপুরের বাড়িটা কোনো ভালো ডেভেলপার কোম্পানিকে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। হেনা বলেন, ‘আমার মেয়ে বলেছে, ওনারা আমার খালা। ওনাদের আমি দেখাশোনা করব। ওনাদের দায়িত্ব আমার।’

রিতা-মিতাকে চিকিৎসা করানো হতো জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কমিউনিটি অ্যান্ড সোশ্যাল সাইকিয়াট্রি বিভাগে।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বিধান রঞ্জন পোদ্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ওনাদের রোগটাকে বলা হয় সিজোফ্রেনিয়া। এই রোগে আক্রান্তদের শতকরা ৩০ ভাগ ভালো হয়েছে যায় চিকিৎসার মাধ্যমে। আর ৬০ ভাগ রোগী চিকিসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে থাকেন। আর ১০ ভাগ রোগী ভালো হয় না। তবে নিয়মিত ওষুধ সেবন ও যত্ন নিলে মোটামুটি ভালো না হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্ভব। রিতা-মিতার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, ওনাদের রোগের শুরুতে দেখাশোনার পর্যাপ্ত লোক ছিল না। তাই ওনাদের আজকে এই অবস্থা।’

রিতা-মিতাকে ‘ভ’তুড়ে বাড়ি’ থেকে প্রথম উদ্ধার করেছিলেন জাতীয় মানবাধিকারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এলিনা খান। তাদের বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকাবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/এএ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু: বিচার চায় সচেতন নাগরিক সমাজ

তীব্র তাপপ্রবাহে জনসাধারণের মাঝে পানি, খাবার স্যালাইন বিতরণ বিএনপির

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও নেতাকর্মীরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে: সালাম

ঢাকা মেডিকেলে এক কারাবন্দিকে মৃত ঘোষণা

ভাষানটেকে অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫, বাকি একজনও আশঙ্কাজনক

মুগদা-মান্ডা সড়কে অভিযান: ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ  

মোহাম্মদপুরে তিতাসের এমডির বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

রাজধানীতে থাকবে না ফিটনেসবিহীন বাস, জুন থেকে মাঠে নামছে বিআরটিএ

আজ ৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায়

গরমে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতা সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি ডিএমপির

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :