এই বিএনপি, সেই বিএনপি!

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ২১:৪৩ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ২২:০৭

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

কারচুপির অভিযোগ এনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। তবে তৃণমূলের আগ্রহী নেতারা দলের এমন সিদ্ধান্তকে একপাশে রেখে প্রায় সব ভোটে অংশ নিয়েছেন। এজন্য বহিষ্কারও করা হয়েছে অনেক নেতাকে। অথচ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘বিএনপি অংশ না নিলেও স্থানীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিলে কোনো বাধা নেই।’

প্রশ্ন উঠেছে- দলের মহাসচিব যে নির্বাচনে অংশ নিলে বাধা নেই এমনটা বলার পর কেন বহিষ্কার হচ্ছেন বিএনপি নেতারা। সবশেষ চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর বিএনপি থেকেও বহিষ্কার করা হয় তৈমূর আলম খন্দকারকে। শুধু তাই নয়, তৈমূরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট টিএম কামালকেও বহিষ্কার করা হয় দল থেকে।

মঙ্গলবার রাতে বহিষ্কার করার পর থেকে এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

কেউ বলছেন- দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট করায় নির্বাচনের আগে কেন তাকে বহিষ্কার করা হলো না? নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হলে তাকে বহিষ্কার করা হতো কি না- তা নিয়েও কথা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

অন্যদিকে ভোটের আগে তৈমূরের সঙ্গে টেলিফোনেও কথা বলেছিলেন বিএনপি মহাসচিব। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা কাজ করলে অসুবিধা নেই এমনটাও মন্তব্য ছিল তার।

বহিষ্কার হওয়া তৈমূর আলমেরও ভাষ্য- বিএনপি থেকে নির্বাচন না করতে কেন্দ্রীয় কোনো নেতা তাকে বারণ করেননি। তার অভিযোগ উঠেছে- বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কেন্দ্রিক নেতাদের একটি পক্ষ নারায়ণগঞ্জের নেতাদের তার পক্ষে কাজ করতে নিষেধ করেছে। বহিষ্কারের পেছনে তাদের হাত আছে বলে মনে করছেন তিনি।

তৈমূর আলমের ঘনিষ্ঠরা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে এর জন্য অনেকটা দায়ী করছেন। তারা বলছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভুল বুঝিয়ে ‘অপছন্দের’ নেতাদের বহিষ্কার করে একটি গ্রুপ সুবিধা নিচ্ছেন।

এদিকে তৈমূর আলমের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে যারা সাধুবাদ দিচ্ছেন তাদের ভাষ্য- দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ইভিএমে ভোটে গিয়ে তিনি এই পদ্ধতিকে বৈধতা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে পরাজিত হয়েও মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ কুশল বিনিময় নিয়েও কথা বলছেন কেউ কেউ।

অবশ্য শুরু থেকে ইভিএমের বিরোধিতা করে আসা বিএনপির সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ ইভিএমে ভোট করে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। সে সময় অবশ্য এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেনি।

স্থানীয় ভোট নিয়ে যে সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপির

গত ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ না নেওয়ার কথা ঘোষণা করে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগামীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা কাউকে মনোনয়ন দেব না।’ এরপরও দফায় দফায় ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। অনেকে বিজয়ীও হয়েছেন। কারাগারে থেকে ভোট করে বিএনপি নেতা জিতেছেন এমন ঘটনাও আছে।

তবে শুরুর দিকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করায় অনেক নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। তবে ধীরে ধীরে বহিষ্কারের মাত্রা কমে আসে।

ধানের শীষের বদলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গত পাঁচ দফায় মোট কতগুলো ইউনিয়নে বিএনপি নেতারা চেয়ারম্যান পদে ভোট করেছেন সেটি জানা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এদিকে গত ২ নভেম্বর মির্জা ফখরুল স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয় নিয়ে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করাটা সঠিক নয়। তাই বিএনপি এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। তবে বিএনপি থেকে কেউ স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিলে সেখানে বাধা নেই।’

কিন্তু মহাসচিবের এমন বক্তব্যের পর পৌরসভার ভোটে অংশ নিয়ে বহিষ্কার হন নাটোরের চার নেতা। গত ৯ জানুয়ারি দলের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী চার নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের আদেশে নাটোর পৌর বিএনপির সভাপতি শেখ এমদাদুল হক আল মামুন, বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম লেলিন, বাগাতিপাড়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম জামালকে বহিষ্কার করা হয়। এদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম লেলিন মেয়র হয়েছেন।

অন্যদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট বর্জন করলেও তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে অন্তত ৯৬ জন বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান হয়েছেন। চতুর্থ ধাপে ৯৮ জনের পর পঞ্চম ধাপের নির্বাচনেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় দলটির ৮৩ জন তৃণমূল নেতা চেয়ারম্যান হয়েছেন।

তৈমূর যা বলছেন

বহিষ্কার নিয়ে তৈমূর আলম খন্দকার একদিন পর মুখ খুলেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘বিএনপির যারা আমাকে নির্বাচন চলাকালে অব্যাহতি দিয়েছিল, এখন বহিষ্কার করেছে। তারাই পল্টন অফিস থেকে আমার অনেক নেতাকে বলেছিল তৈমূরের পক্ষে যেও না। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের বিএনপি তো ভোটটা দেবে, কাকে দেবে? আমি ভাবতেও পারিনি দলীয় মহাসচিবের কথা কচুপাতার পানিতে পরিণত হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/বিইউ/জেবি)