বাঁশখালী উপকূলজুড়ে লবণ উৎপাদনের ব্যাপক প্রস্তুতি

রিয়াদুল ইসলাম, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)
 | প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ২২:৪৪

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলজুড়ে চলছে লবণ উৎপাদনের জোর প্রস্তুতি। বর্ষা শেষে প্রতি বছরের মতো এ বছরও মাঠে নেমে পড়েছেন উপকূলের লবণ চাষিরা। বর্ষার চিংড়ি-ঘের শেষে লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হতে না হতেই পুরোদমে চলছে মাঠ প্রস্তুতির কাজ।

অতীতে লবনের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার একবুক হতাশা নিয়ে লবণ চাষ শুরু করছেন বঙ্গোপসাগরের উপকূল বেষ্টিত বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েক হাজার লবণ চাষি।

বাঁশখালী উপজেলার কাথরিয়া, বাহারছড়া, সরল ও গণ্ডামারা উপকূলীয় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, লবণ উৎপাদনে জোর প্রস্তুতি চালাচ্ছেন চাষিরা।

পরিবারের সদস্য ও চুক্তিকৃত লবণ শ্রমিকদের নিয়ে চলছে লবন মাঠ তৈরির ধুম। বর্ষা মৌসুমে চিংড়ি-ঘের ও অন্যান্য মাছ চাষে ব্যবহার হওয়ায় উঁচুনিচু ও আকা-বাকা হয়ে গেছে মাঠগুলো। তাই উৎপাদনের শুরুতেই মাঠ তৈরিতে ব্যয় করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা অবদি চলে তাদের এই মাঠ তৈরির কাজ। তা ছাড়াও বাড়ি-ঘর দুরে হওয়া ও যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ থাকায় অনেকে আবার মাঠে তৈরি করেছেন অস্থায়ী বাসা।

প্রতিদিন চাষিদের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে বৌ-ঝিরা নিয়ে আসছেন খাবার। কেউ কেউ আবার নিজেই মাঠে রান্না করে খাচ্ছেন। অনেকে আবার আগাম সময়ে দ্রুত মাঠ তৈরি শেষে নিজেদের রপ্ত কৌশলে জমিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি জমিয়ে তাতে সূর্যের তাপ দিয়ে পানি শুকিয়ে তৈরি করছেন লবণ। মূলত প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে পরের বছরের জুন মাস পর্যন্ত চলে এই লবণ উৎপাদন মৌসুম।

চাষিরা জানায়, বিগত কয়েক বছর ধরে প্রায় পানির দরেই লবণ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তবে সম্প্রতি সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে লবণের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় লবণ উৎপাদনে আশার আলো দেখছেন তারা। উপকূলের এই প্রান্তিক চাষিদের আশা আবারো অতীতের মত উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য পাবেন তারা।

এই বছর বাঁশখালী উপজেলার সরল, গণ্ডামারা, শেখেরখীল, পুইছড়ি, ছনুয়া, কাথরিয়া, খানখানাবাদ ও বাহারছড়া ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকার ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে লবণ চাষ করা হচ্ছে। চাষিরা নিজেদের জমি, বা লিজ নিয়ে এই লবণ চাষ করে। অনেকে আবার জমি মালিকের সঙ্গে ভাগাভাগিতে চাষ করে। চলতি মৌসুমে গত মৌসুমের এক লাখ মেট্রিকটন ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়াও বর্তমান প্রতি মণ লবণের বাজার মূল্য ২৫০-৩০০ টাকা।

কাথরিয়া ইউনিয়নের লবণ চাষি জমির উদ্দীন বলেন, আমি এই বছর ২২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে লবণ চাষ করতেছি। শ্রমিক, পানি ও অন্যন্য খরচ বাবদ চার লাখ টাকা খরচ হবে আমার। মাঠ তৈরি শেষের পথে। আশা করি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী সপ্তাহে লবণ উৎপাদন শুরু করতে পারব। তবে গত মৌসুমে ন্যায্য মূল্যে না পাওয়ায় মাঠে গর্ত করে রাখা ৬০০ মণ লবণ নিয়ে চিন্তায় আছি। ব্যবসায়ীরা যে দামে কিনতে চাচ্ছে সে দামে বিক্রি করলে ধোলাই খরচও পাবেন না বলে জানায় তিনি।

পশ্চিম বাঁশখালী লবণ উৎপাদনকারী সমিতির নেতা মাওলানা বশির আহমদ বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে লাখ লাখ মেট্রিক টন সোডিয়াম ক্লোরাইড (ভোজ্যলবণ) আমদানি হওয়ার কারণেই মূলত মাঠে উৎপাদিত লবণের (অপরিশোধিত) ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে উপকূলের লবণ চাষিরা। এছাড়া জমি লিজ মূল্য ও অন্যন্য খরচ বৃদ্ধি পাওয়া এবং লবণের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ায় লবণ উৎপাদনে চাষিদের অনীহা বাড়ছে বলেও জানান তিনি।

উত্তর-পশ্চিম গণ্ডামারা লবণ উৎপাদন সমিতির উপদেষ্টা আবু আহমদ বলেন, বর্তমানে প্রতি বস্তা (দুই মণ) লবণ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা করে। অথচ চলতি বছরের জুলাই- আগস্টে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছে ধোলাই খরচসহ ১৯০, ২১০ ও ২২০ টাকা করে। সে ক্ষেত্রে লবণের প্রকৃতমূল্য পাওয়া গেছে ১৬০, ১৮০ ও ১৯০ টাকা করে। অথচ প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে কৃষককে গুনতে হয়েছে গড়ে ২৪৭ থেকে ২৫০ টাকা।

এছাড়া শিল্প আইআরসি ও ব্যাক টু ব্যাক এলসির সুবিধা নিয়ে সোডিয়াম সালফেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের আড়ালে সরাসরি অতিরিক্ত লবণ আমদানি করায় দেশের বাজারে প্রচুর লবণ চলে আসায় মাঠে উৎপাদিত লবণের দাম পাচ্ছেন না বলে জানান আবু আহমদ।

কাথরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, লবণ চাষ পশ্চিম বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকার মানুষের আয়ের মূল মাধ্যম। লবণ উৎপাদনের মৌসুমের আয়ে চলে তাদের সারা বছরের সংসার। মূলত উপকূলবাসীর জিবিকা নির্বাহ করে লবণ চাষের উপর। উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য ও সঠিক দাম থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সেজন্য সরকারের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :