কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারে যেসব সমস্যা হতে পারে

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০২২, ১২:০৮

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

মনের কথা বলে দেয় আমাদের চোখ। চোখ নিয়ে সাহিত্য, গান কত কিছুই না লেখা হয়েছে। আমাদের চোখের গঠন এতটাই জটিল যে, সেটা মাঝে মাঝে কল্পনাকে হার মানায়। চোখের কার্যপদ্ধতি অনেকটা ক্যামেরার পদ্ধতির মতোই। তবে চোখ চশমায় ঢাকা পড়লে চেহারার প্রধান আকর্ষণই ঢাকা পড়ে যায়। আর তাই অনেকে চশমার বদলে ব্যবহার করেন লেন্স। সৌন্দর্যচর্চার খাতিরে কনট্যাক্ট লেন্সের চাহিদা বেড়েছে।

 

চশমার তুলনায় কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারে বেশ কিছু সুবিধাও রয়েছে। যেমন- খেলাধুলার সময় এবং ক্যামেরা, মাইক্রোস্কোপ ইত্যাদি নিয়ে কাজকর্মের ক্ষেত্রে কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার সুবিধাজনক। অতিরিক্ত ঘাম বা কুয়াশার কারণে চশমার কাচ অনেক সময় ঝাপসা হয়ে যায়। কনট্যাক্ট লেন্সে এ ধরনের সমস্যা নেই। শত ভিড়ের মাঝেও চলাফেরা, গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কনট্যাক্ট লেন্সে অনেক বেশি সুবিধাজনক।

 

কনট্যাক্ট লেন্স বলতে আমরা সাধারণত ডিসপোজেবল সফট কনট্যাক্ট লেন্সকে-ই বুঝি। চোখের রং পরিবর্তনের জন্য কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার আজকালকার হালফ্যাশন। কখনওবা নীল সাগরের মত চোখ, আবার কখনও হ্যাজেল এর মত। কিংবা পরশু ঘোলা ঘোলা। কেউবা আবার অপ্টিকাল সমস্যার জন্য পাওয়ার লেন্স ব্যবহার করে থাকে চশমার বিকল্প হিসেবে।

 

শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রেই বেশ উপকারী। কিন্তু এর থেকে বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে সামান্য ভুলে। সময়সীমার বেশি কনট্যাক্ট লেন্স বেশি সময় ব্যবহার করলে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তবে শখ বা প্রয়োজন, যেটাই হোক সঠিক ব্যবহারের অভাবে কন্টাক্ট লেন্সে নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

 

ঠিক মতো ফিট না করলে, কেস বা সলিউশন পরিষ্কার না থাকলে বা নিয়মিত সলিউশন না বদলালে ইনফেকশন অবধি হতে পারে।

 

চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়া, চোখ চুলকানো , পিচুটি পড়ার মতো লক্ষণ দেখলেই লেন্স ব্যবহার বন্ধ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

 

কখনও কখনও আবার চোখ শুকিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে লুব্রিকেটিং ড্রপ ব্যবহার করতে হবে নিয়ম মতো।

 

জায়ান্ট প্যাপিলারি কনজেক্টিভাইটিস হতে পারে লেন্সের ফিটিংসে সমস্যা থাকলে। এতে চোখ কুট কুট করে।

 

চোখের উপরের লেয়ার ছড়ে যেতে পারে নানা কারণে। আঙুল লেগে বা অন্য কোনও কারণে। ড্রপের মাধ্যমে সেরে যায়।

 

আলোর দিকে তাকাতেই অসুবিধা হতে পারে। কিছুদিন লেন্স ব্যবহারে বিরতি দিলেই সমস্যা কমতে পারে। সঙ্গে দরকার আই ড্রপ।

 

কর্নিয়াল আলসার হলে একটু বেশি চিন্তার। জীবাণু থেকে চোখের মণিতে সংক্রমণ হতে পারে। এক্ষেত্রে ওষুধে কাজ না হলে অস্ত্রোপচারও করতে হতে পারে।

কনট্যাক্ট লেন্সের চাপে চোখে স্থায়ী এসটিগমেটিজম বা দৃষ্টি স্বল্পতা হতে পারে।

 

কনট্যাক্ট লেন্সের ব্যবহারে চোখে কর্নিয়ার অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যেতে পারে, সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকে, চোখ শুষ্ক ও খসখসে এবং লাল হতে পারে।

অধিক সময় ব্যবহারের কারণে চোখের মণি গরম হয়ে যেতে পারে।

 

চোখের স্বস্তির জন্য অনেকে নরম কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন। তবে নরম কনট্যাক্ট লেন্স ভেদ করে ধোঁয়া বা ফুলের রেণু চোখে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

রান্নার সময় আগুনের তাপে আবার আবহাওয়া তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে কনট্যাক্ট লেন্স গলে যেতে পারে, এতে চিরতর অন্ধত্ব হতে পারে।

 

কনট্যাক্ট লেন্স চোখে পরার সময় অসাবধানতায় চোখে খোঁচা লাগতে পারে।

 

হাতের মাধ্যমে চোখে জীবাণু প্রবেশের মাধ্যমে ইনফেকশনের সম্ভবনা থাকে।

 

দীর্ঘ সময় কোন ঔষধ সেবনের পাশাপাশি কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে চোখে অ্যালার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আগে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

অনেক সময় চোখে কনট্যাক্ট লেন্স থাকা অবস্থায় চোখে প্রসাধনী ব্যবহারে চোখে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

কনট্যাক্ট লেন্স ভালো রাখার জন্য নানা ধরনের সল্যুশন পাওয়া যায়। কিছু সল্যুশন জীবাণু মুক্তকরণ, কিছু আবার চোখকে ভিজিয়ে রাখার জন্য। তাই প্রয়োজনভেদে সঠিক ব্যবহার না জানার জন্য কনট্যাক্ট লেন্স চোখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

 

সর্বোপরি কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলেই যে চোখের ক্ষতি হয় তা নয়, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ব্যবহার বিধি মেনে চললে চোখকে ক্ষতিমুক্ত রাখা ।

 

(ঢাকাটাইমস/২০জানুয়ারি/আরজেড/এজেড)