অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার

পিরোজপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ২০:৫১

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার দুর্গাকাঠি গ্রামে অভাবের তাড়নায় ১৮ দিন বয়সী একটি দুধের শিশুকে বিক্রি করে দিয়েছেন এক দম্পতি। শিশুটির বাবা পরিমল বেপারি (৫০) মাত্র এক লাখ ৬৫ হাজার টাকায় দালালের মাধ্যমে সন্তানটি বিক্রি করেছেন। তবে সন্তান বিক্রির মাত্র ১০ হাজার টাকা ছাড়া আর একটি টাকাও হাতে পাননি তিনি।

একই গ্রামের বিজন হালদার এবং রনজিৎ কুমার মন্ডল হতভাগা দম্পতির অভাবের সুযোগ নিয়ে তাকে ফুসলিয়ে সন্তান বিক্রির মধ্যস্থতা করেছেন। সন্তান বিক্রির ১০ হাজার টাকা বাদে অবশিষ্ট টাকা পকেটস্থ করেছেন মধ্যস্থকারীরা। বিক্রি হয়ে যাওয়া শিশু সন্তানটির বাবা পরিমল, মা কাজলসহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি এসব তথ্য কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

১৫ দিন আগে ঢাকায় বসবাসকারী একটি ধর্ণাঢ্য পরিবার একটি গাড়ি নিয়ে এসে রনজিৎ এবং বিজনের কাছে টাকা পরিশোধ করে তারা সন্তান নিয়ে গেছেন। তবে কাদের কাছে শিশুটি বিক্রি করা হয়েছে তাদের নাম ঠিকানা কিছুই জানেন না শিশুটির বাবা-মা। বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

শিশুটির বাবা পরিমল বলেন, আমি খুবই গরীব। আমার জায়গা জমি কিছুই নেই। অন্যের একটি পরিত্যাক্ত ঘরে স্ত্রী এবং চারটি ছোট সন্তান নিয়ে বসবাস করি। আমি ও আমার স্ত্রী মানুষের কাছে হাত পেতে খাই। আমাদের অভাবের সংসারে কিছু দিন আগে একটি কণ্যাসন্তান আসে।

পরিমল বলেন, এমনিতেই সংসার চালানো দায়। তার উপর আবার একটি সন্তান। অভাবের কথা শুনে বিজন এবং সন্তোষ মন্ডলের সহযোগিতায় এক লাখ ৬৫ হাজার টাকায় আমি আমার ১৮ দিনের শিশু সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছি।

সন্তান বিক্রির সব টাকা হাতে পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে পরিমল বলেন, সব টাকা একই গ্রামের বিজন হালদার এবং রনজিৎ মন্ডলের কাছে জমা আছে। তারা মাত্র ১০ হাজার টাকা আমাকে দিয়েছে। এখন টাকা চাইলে বিজন জানায় তোমাকে পরে জমি কিনে দেব। টাকা দিয়ে কী করবা।

পরিমলের স্ত্রী কাজল বেপারি বলেন, সন্তানটি জন্মদানের পর আমি অসুস্থ ছিলাম। ওর মুখখানাও দেখতে পাইনি। আমি সুস্থ হয়ে স্বামীর কাছে জেনেছি বিজন আর রনজিতের সহযোগিতায় আমার স্বামী সন্তানটি বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে সিই টাকা এখনো হাতে পাইনি।

কাজল বলেন, এখনো সন্তানের কথা মনে পড়লে আমার বুকটা কেঁদে ওঠে।

ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অসিম বলেন, ঘটনাটি শুনেছিলাম। আমার স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে তাকে নিয়ে ব্যস্ত আছি। আর কিছু জানি না।

একই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জহর বলেন, পরিমল তার ওয়ার্ডের লোক। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনই খুবই সহজ সরল। তাদের প্রকৃত ঠিকানা ভান্ডারিয়া। সাত-আট বছর আগে আমাদের এলাকায় আসে। তখন আমি তাদের দূরবস্থা দেখে এলাকার একটি ভাঙা পরিত্যক্ত ঘরে থাকতে দিয়েছি। তার অভাবের সুযোগ নিয়ে বিজন এবং রনজিৎ তার সন্তান বিক্রি করতে উৎসাহিত করেছে।

জহর বলেন, বিজন খুবই খারাপ প্রকৃতির লোক। বিজন প্রকৃত অর্থে কোনো কাজবাজ করে না। তিনি এলাকায় মাদক কারবারসহ দালালি কাজকর্ম করে বেড়ায়। এখন পরিমলের সন্তান বিক্রির টাকায় বিজন দুর্ঘাকাঠি বাজারে একটি গার্মেন্টস বস্ত্রালয়ের দোকান দিয়েছেন।

সমেদয়কাঠি ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন বেপারি বলেন, বিজন মূলত মাদক বিক্রেতা। মাদক নিয়ে একবার ধরাও পড়েছিলেন। মাদকের পাশাপাশি এলাকায় বড় প্রতারক হিসেবে পরিচিত। তিনি এলাকার রনজিৎকে সঙ্গে নিয়ে অভাবী পরিমলকে ফুসলিয়ে তার দুধের শিশুকে বিক্রি করে টাকা হাতিয়েছেন। বিজন এবং রনজিৎ মন্ডল এলাকার বড় প্রতারক।

নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২০জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :