যশোরে ইজিবাইক চালকের হত্যার রহস্য উন্মোচন করল পিবিআই

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৪২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

যশোরের শার্শা এলাকায় ইজিবাইক চালক সোলাইমান সাকিবের ক্লু-লেস হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেশটিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি। এছাড়াও ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকটিও উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন-মো. মনিরুল ইসলাম, মো. মেহেদী হাসান ওরফে মিলন এবং  মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে প্লাবন।

নিহত সোলাইমান সাকিব যশোরের ঝিকরগাছা থানার পুরনদরপুর গ্রামের মো. শাকিল হোসেনের ছেলে।

শুক্রবার  যশোর পিবিআইয়েরে পুলিশ সুপার  রেশমা শারমিন জানান, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর সাকিব শার্শা থানার গোগা (কারিগরপাড়া) গ্রামে তার নানা বাড়িতে থাকতেন।  গত ১৭ জানুয়ারি দুপুর একটার দিকে সাকিব তার নানার ইজিবাইক নিয়ে ভাড়ায় যাত্রী বহনের জন্য বাগআচড়ার উদ্দেশে বের  হন। ওইদিন রাতে তিনি আর বাড়িতে ফিরেননি। গত ১৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তার নানার বাড়ি থেকে অনুমান ১০ কিলোমিটার দূরে শার্শা থানার উলশী ইউনিয়নের বড়বাড়িয়া গ্রামের রশিদ আলীর কুল বাগানের পশ্চিম পাশে সাকিবের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার বরা হয়। এ ঘটনায় ওইদিন নিহতের নানা আকবর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। শার্শা থানার মামলা নম্বর-১৮। ধারা-৩০২/২০১।

পিবিআই জানায়, মামলাটি যশোর পিবিআই মামলার তদন্তভার  উপপরিদর্শক (এসআই) রেজোয়ানের উপরে দায়িত্ব পড়ে।  মামলার তদন্তভার  নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই  রেজোয়ান, এসআই স্নেহাশিস দাশ ও এসআই গোলাম আলীসহ  পিবিআইয়ের একটি চৌকস দল গত ১৯ জানুয়ারি বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে মো. মনিরুল ইসলাম এবং মো মেহেদী হাসান ওরফে মিলনকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থেকে এবং একই দিন সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে অভিযুক্ত মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে প্লাবনকে চৌগাছা থানার মাড়ুয়া বাজার থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে অভিযুক্ত প্লাবনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী যশোরের চৌগাছা বাজার এলাকার ছুটিপুর রোডে নুরুজ্জামান ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ থেকে ছিনতাই করা  ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে পিবিআই জানায়, অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিলন এবং সাইফুল ইসলাম প্লাবন সংঘবদ্ধ ইজিবাইক ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির সদস্য। তারা যশোরের বিভিন্ন থানা এলাকায় ইজিবাইক ও ভ্যান ছিনতাই করে পরস্পর যোগসাজসে কেনাবেচা করে থাকে। গত ১৭ জানুয়ারি দুপুর দুইটার দিকে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান মিলন এবং জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে বার্মিজ জাহাঙ্গীর ওরফে রাকিব আসামি মনিরুল ইসলামের সাথে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নিহত সোলাইমান সাকিবের  সাথে এক হাজার  টাকায় সারাদিন ঘোরার জন্য বাগআঁচড়া বাজার থেকে ইজিবাইক ভাড়া করেন।

পিবিআই জানায়, অভিযুক্ত মেহেদী হাসান মিলন এবং জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে বার্মিজ ইজিবাইক চালক সোলাইমান সাকিবকে নিয়ে বাগআঁচড়া বাজার এলাকা থেকে রওনা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন। সাকিবের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর দিয়ে অভিযুক্ত মনিরুল ইসলামের সাথে অভিযুক্ত মিলন ও জাহাঙ্গীর হোসেন বার্মিজ যোগাযোগ করেন। তাদের পরস্পর যোগাযোগের মাধ্যমে ইজিবাইক নিয়ে ঘোরাঘুরির একপর্যায়ে চালক সাকিবকে মিলন ও জাহাঙ্গীর হোসেন বার্মিজ কৌশলে শার্শার ৯ নম্বর উলাশী ইউনিয়নের বড়বাড়ীয়া গ্রামের আবদুর রশিদের বড়বাড়ীয়া কুল (বরই) বাগানের পাশে নিয়ে যান। সেখানে অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম আগে থেকে অবস্থান করছিলেন। পূর্বপরিকল্পনা মতো অভিযুক্তরা একই উদ্দেশ্যে তাদের সঙ্গে থাকা সেলাই রেঞ্জ, এল রেঞ্জ ও টিপ চাকু দিয়ে ইজিবাইক চালককে এলোপাথাড়ি মাথায়, কপালে, ডান চোয়ালে এবং বাম চোখে আঘাত করে হত্যা করেন। পরে তার কাছে থাকা ইজিবাইক নিয়ে মোবাইলে পলাতক অভিযুক্ত মো. বিপ্লব হোসেন ও গ্রেপ্তার অভিযুক্ত প্লাবনের সাথে যোগাযোগ করেন।  যশোরের কোতয়ালী থানার চুরামনকাঠি এলাকার যশোর ফিলিং স্টেশনের সামনে ১৭ জানুয়ারি রাত পৌনে ১২টার দিকে ছিনতাই করা  ইজিবাইকটি ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।

গ্রেপ্তার মনিরুল ইসলাম যশোরের ঝিকরগাছা থানার চান্দেরপোল গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে। মেহেদী হাসান ওরফে মিলন বাঘারপাড়া থানার বারভাগ  গ্রামের মৃত নিজাম উদ্দিন মোল্লার ছেলে। আর সাইফুল ইসলাম ঝিকরগাছা থানার মাড়ুয়া গ্রামের মো. রমজান আলীর ছেলে।

(ঢাকাটাইমস/২১জানুয়ারি/এএ/জেবি)