করোনা হলে স্বাদ, ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে যায় কেন? জানুন কারণ

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৫৭

করোনাভাইরাস সবসময়ই পরিবর্তিত হচ্ছে, প্রতিনিয়ত মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন রূপ নিচ্ছে। চীনের উহান শহরে প্রথম যে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল, সেই ভাইরাস এখন আর নেই। ডেল্টা আর বেটা ভ্যারিয়েন্ট তাকে হটানোর পর নতুনরূপে ওমিক্রনে সংক্রমিত হচ্ছে সারা বিশ্বের মানুষ। ওমিক্রনের মিউটেশনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা হারানোর ঘটনা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। আবার করোনায় সংক্রমিত হলে অনেকে স্বাদক্ষমতা ও ঘ্রাণশক্তি হারান না। কেউ কেউ তা হারিয়ে ফেলেন। তবে করোনা রোগীদের উপসর্গের কেন এই তারতম্য, তার সম্ভাব্য একটি কারণ এ বার জানা গেল। গবেষণায় দেখা গেল, এই তারতম্যের জন্য মানবদেহের দায়ী বিশেষ দুইটি জিনের অতি সক্রিয়তা। মানুষের স্বাদক্ষমতা ও ঘ্রাণশক্তির ক্ষেত্রে এই জিন দু’টির ভূমিকা রয়েছে।

গবেষকরা দেখেছেন, এই জিন দু’টির 'ক্রোমোজোম ৪' নামের বিশেষ একটি অংশের অতি সক্রিয়তার জন্যই কোভিডে সংক্রমিতদের মধ্যে স্বাদক্ষমতা ও ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা অন্তত ১১ শতাংশ বেড়ে যায়। সব করোনা রোগীর ক্ষেত্রে এই জিন দু’টির ওই বিশেষ অংশটি সে ভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে না বলেই সংক্রমণের পর সকলেই স্বাদক্ষমতা ও ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলেন না। সেটা কারও কারও ক্ষেত্রে হয়। কারও ক্ষেত্রে হয় না।

আমেরিকা ও ব্রিটেনে কোভিডে আক্রান্তদের মধ্যে স্বাদক্ষমতা ও ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা প্রায় ৭০ হাজার কোভিড রোগীর জিনোম পরীক্ষার প্রেক্ষিতেই গবেষণার এই ফলাফল। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার জেনেটিক্স’-এ। গবেষণাপত্রটি পিয়ার রিভিউয়ের পরেই প্রকাশিত হয়েছে। যা জিন বিশেষজ্ঞদের দিয়েই করানো হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ এ-ও জানিয়েছেন, এই ধরনের বহু গবেষণা হচ্ছে। কোনও একটি গবেষণার ফলাফল যা জানাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই অন্য গবেষণার ফলাফলে তার বিপরীত ছবি বেরিয়ে আসছে। অল্প সময়ে কাজ করতে গিয়ে করোনা নিয়ে গবেষণার মান অন্য গবেষণার মানের চেয়েও কিছুটা নেমে গিয়েছে। অনেক সময় পিয়ার রিভিউ হওয়া কোনও গবেষণাপত্র নিয়েও তাই বিতর্ক দানা বাঁধছে। এই গবেষণার ফলাফল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’) বা আমেরিকার ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন' (সিডিসি) অনুমোদন করেছে কি না তা এখনও জানা যায়নি।

মানবদেহের ওই জিন দু’টির বিশেষ অংশের (ক্রোমোজোম ৪) সক্রিয়তা বুঝতে যারা করোনায় সংক্রমিত হননি, তাদেরও জিনোম পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। দেখেছেন, তাদের দেহে জিন দু’টির ওই বিশেষ অংশের আচরণ, কাজকর্ম। জিন দুইটির একটির নাম— ‘ইউজিটি২এ১’। অন্যটি, ‘ইউজিটি২এ২’। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সব করোনা রোগীর ক্ষেত্রেই এই জিন দু’টির বিশেষ অংশটি অতি সক্রিয় হয়ে উঠছে না। যাদের ক্ষেত্রে এই অতি সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে, তাদেরই স্বাদক্ষমতা ও ঘ্রাণশক্তি হারানোর সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছে। আর যে করোনা রোগীদের দেহে এই জিন দু'টির বিশেষ অংশটিকে অতি সক্রিয় হয়ে উঠতে দেখা যায়নি, তারা সংক্রমিত হয়েও স্বাদক্ষমতা ও ঘ্রাণশক্তি ততটা হারাননি। বা আদৌ হারাননি।

গবেষকদের ধারণা, এই তারতম্যের কারণ হতে পারে জিন দুইটির জন্য মানবদেহে তৈরি হওয়া উৎসেচকগুলো। সার্স-কোভ-২ ভাইরাস সেই উৎসেচকগুলোর কাজ কীভাবে কতটা বদলে দিচ্ছে, তার উপরেই হয়তো নির্ভর করে এই তারতম্য। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত ভাবে কিছু জানা যায়নি বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :